বাংলারজমিন

খুলনা বিআরটিএ অফিসে ‘ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না’

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

৭ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:২৫ পূর্বাহ্ন

খুলনা বিআরটিএ অফিসের দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। ঘুষ ছাড়া মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও ড্রইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় না। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী যানবাহনকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

বিভিন্ন অজুহাতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।

বিআরটিএ অফিসে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে আসা জাবির মোড়লের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেকটি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের সময় সরকারি ফি ছাড়াও দালাল হিসেবে পরিচিত রোস্তম ও জসিমকে অতিরিক্ত দুই হাজার পাঁচশ’ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। অফিসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী এই অবৈধ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত।

ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রাজা মোল্লা বলেন, কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তনের জন্য বিআরটিএ অফিসে যাই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। পরে তিনি বিআরটিএ অফিসের সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শরীফ অলিদুল ইসলামের ব্যক্তিগত লোক (দালাল) হিসেবে পরিচিত আহাদ ও আমিনুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে তার মোটরসাইকেলের মালিকানা পরিবর্তন করে দেয়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক আনসার সদস্য ঘুষ নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি বিআরটিএ’র সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর শরীফ অলিদুল ইসলামের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত আহাদ ও আমিনুলের কাজগুলো করে দেই। এতে তারা কিছু কমিশন দেয়’।
এছাড়া লার্নার বা ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলেও সরকার নির্ধারিত টাকার বাইরেও বিআরটিএ অফিসের লোকজনকে টাকা দিতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে লাইসেন্স পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি রাহাত শেখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএ’র এক কর্মচারী বলেন, মোটরযান চালকদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন বাবদ প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশন করা হয় না। ভুয়া বিল ভাউচার করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা আত্মসাৎ করেন। এ নিয়ে অফিসার ও কর্মচারীদের মধ্যে টানাপড়েন চলছে।

বাদামতলা এলাকার বাসিন্দা লিমন প্রিন্স বলেন, বিআরটিএ অফিস থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আনফিট গাড়িগুলোকে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ খুলনা সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. আবুল বাসার বলেন, আমরা গ্রাহকদের সেবা দিতে পারছি। যারা অল্পতেই অধৈর্য্য হয়ে পড়ছে, তারাই বিভিন্ন অভিযোগ করছে। গ্রাহক সেবা পেতে কোনো হয়রানির শিকার হচ্ছে না। তাছাড়া বিআরটিএ কার্যালয়ের মধ্যে কোনো দালাল চক্র নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status