প্রথম পাতা

এক মার্কেট থেকেই ৮ কোটি টাকা চাঁদা নেন মঞ্জু

আল-আমিন

৬ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

টিকাটুলির এক মার্কেট থেকেই অন্তত আট কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন কাউন্সিলর মইনুল হক মঞ্জু। চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার চাঁদাবাজি ও দখলদারির নানা তথ্য দিয়েছেন। জানিয়েছেন, শুধু রাজধানী সুপার মার্কেট থেকেই গত ৯ বছরে অন্তত আট কোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন। চাঁদা না দিলে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে দোকানিকে তার কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যেতেন। সেখানে নির্যাতন করে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হতো। রাজধানী সুপার মার্কেটে মোট ১৭৮৮ টি দোকান আছে। প্রত্যেক দোকানে তার লোকজন মাসিক ৯৫০ টাকা চাঁদা তুলতো। এই টাকার একটা অংশ কমিশনারকে নজরানা দেয়া হতো বলে তিনি রিমান্ডে শিকার করেছেন। এছাড়াও টিকাটুলি ভোলানন্দ্রগিরি আশ্রমের যে তিনবিঘা জমি ও পুকুর দখল করেছেন সেই দখলে ঢাকা মহনগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার মদত ছিল বলে তিনি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। ওই নেতার বাড়ি বরিশাল অঞ্চলে।
মঞ্জু গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার সব ক্যাডার বাহিনী লাপাত্তা হয়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজছে। এছাড়াও রিমান্ডে মঞ্জু তার কাছে থাকা আরও ১ টি একে-২২ এবং ২ টি রিভলবার থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সেগুলো তার ক্যাডার বাহিনীর কাছে রয়েছে। ওই অস্ত্রগুলো উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত শুক্রবার ওয়ারী থানার এসআই হারুন-অর-রশিদ কাউন্সিলর মঞ্জুকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেন। এসময় উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ধীমান চন্দ্র মন্ডল তাকে ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। গতকাল তার রিমান্ডের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হয়েছে। তিনি এখন ওয়ারি থানা হাজতে রয়েছেন। সূত্র জানায়, মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করার পর র‌্যাবের কর্মকর্তারা তাকে তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ বিষয়ে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল গতকাল মানবজমিনকে জানান, মঞ্জুকে আমরা গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। তাকে আমরা প্রাথমিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। প্রয়োজনে তাকে আবারও রিমান্ডে আনা হবে।  

র‌্যাব-৩ এর এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা জানান, মঞ্জু ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ওই এলাকার মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হন। রাজধানী সুপার মার্কেট ছিল তার চাঁদার বড় ক্ষেত্র। চাঁদা না দিলে তিনি নিজ হাতে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিতেন। মঞ্জুর ক্যাডার বাহিনী কে এম দাস লেন, অভয় দাস লেন, টয়েনবী সার্কুলার রোড, জয়কালী মন্দির রোড, ভগবতী ব্যানার্জি রোড, ফোল্ডার স্ট্রিট, হাটখোলা রোড এবং আর কে মিশন রোড এলাকার ফুটপাথ ও খালি জায়গায় দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করেন। তিনি ওই এলাকার বাংলাদেশ বয়েজ ক্লাবের সভাপতি। সেখানে তার ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, মঞ্জু রাজধানী মার্কেটের অঘোষিত সভাপতি দাবি করতেন। কিছুদিন আগে এসি লাগানোর কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু, কোনো কাজই করেননি।
মার্কেট পরিচালনা, জেনারেটর, এসি লাগানো, পানি ও বিদ্যুৎ বিলসহ নানা অজুহাতে তিনি চাঁদা তুলতেন। জেনারেটর, বিদ্যুৎ বিল, এসি লাগানো, বিদ্যুতের লোড বাড়ানো, মার্কেটের গেট উন্নয়ন, মার্কেটের দানবাক্সের টাকা আদায়, সরকারি ভ্যাট দেয়ার নামে ওই টাকা তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। জানা গেছে, সরকার ঘোষিত বিদ্যুৎ বিল প্রতি ইউনিট ১০ টাকা। কিন্তু, প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে দিতে হয় ১৩ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা শুধু বিদ্যুৎ থেকেই চাঁদাবাজি করতেন মঞ্জু।

সূত্র জানায়, তার দখল থেকে বাদ যায়নি সনাতন ধর্মের লোকজনের ভোলানন্দ্রগিরি আশ্রমের জমি। তার ওই জমিতে এক শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার হাত রয়েছে। মঞ্জু গ্রেপ্তার হওয়ার পর এলাকাবাসী জমির ওপরে নির্মিত স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়েছেন। রাজধানী সুপার মার্কেটের হাবিবুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী গতকাল মানবজমিনকে জানান, মার্কেটের পুরোটা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজি করতেন মঞ্জু। তারা আইন-শৃংখলা বাহিনীকে অভিযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে তারা নিশ্চুপ থেকেছেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মিষ্টি বিলিয়েছেন, আনন্দ করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status