দেশ বিদেশ

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

শাসক দলের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ক্যাম্পাস

মানবজমিন ডেস্ক

৩ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

অক্টোবরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদকে হলের মধ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বেশির ভাগই শাসক দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। মনে করা হচ্ছে, পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্বাক্ষরিত চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়াতেই আবরারের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ওই ছাত্রলীগ সদস্যরা।
২১ বছর বয়সী ফাহাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। একইসঙ্গে দেশজুড়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষও। যদিও এ ধরনের হত্যা বাংলাদেশে অস্বাভাবিক বিষয় নয়। প্রায়ই ক্যামপাসগুলোতে সহিংস রাজনীতির প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায়। অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মুবাশ্বার হাসান বলেন, এটা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিরই অংশ। বিরোধী দলকে দমনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো হয়ে উঠেছে একেকটি টর্চার সেল।
রাজধানী ঢাকার ২১ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী জানান, সরকারের পক্ষে ছাত্রলীগই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এটা কর্তৃপক্ষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণকারীদের জন্য কঠিন জায়গা। কোনো ছেলে শিক্ষার্থীই ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া হলে সিট পায় না। সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রকাশ্যেই নিজেদের দৌরাত্ম্য দেখিয়ে বেড়ায়।
আলাদা আলাদা সিটের ব্যবস্থা না করে ছাত্রলীগ প্রথম বর্ষের সকল ছাত্রকে গণরুমে রাখে। এসব রুমে কখনো কখনো শতাধিক ছাত্রকে থাকতে হয়। এখানে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দ্বারা র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়। এই সিনিয়ররা আবার ছাত্রলীগের নেতাদের এসব বিষয়ে জবাবদিহি করে। পুরো প্রক্রিয়াটাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য সাজানো হয়েছে।
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আবরার শিবিরকর্মী ছিল না। ছাত্রলীগই তাকে ছাত্রশিবির হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। ইসলামপন্থি বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন হচ্ছে ছাত্রশিবির। বর্তমানে যে-ই সরকারের বিরোধিতা করে তাকেই শিবির হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কাউকে পেটালে যাতে কেউ কিছু না বলে সেজন্য ছাত্রলীগ এই সহজ অজুহাতটি দাঁড় করায়।
তবে ছাত্রলীগের প্রভাব হলের অনেক বাইরেও পৌঁছে গেছে। এ বছরের প্রথম দিকে সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য তহবিল বরাদ্দ করলে ছাত্রলীগের একটি শাখা থেকে তার থেকে শেয়ার দাবি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছাত্রলীগকে সেই টাকা দেন। কোমপানিগুলোকে নতুন কোনো প্রকল্প শুরু করার জন্য প্রায়ই ছাত্রলীগের স্থানীয় শাখাকে টাকা দিতে হয়। গত বছর নির্বাচনের পূর্বে বিরোধী দলের ওপর ব্যাপক দমনপীড়র শুরু হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বড় ধরনের জয় নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে। এরপর থেকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আরো কঠিন হয়ে গেছে। মুবাশ্বার হাসান বলেন, আমলা, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশও এই ধারাকে গোপনে অনুমোদন করে চলে। তবে এটা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। ছাত্রলীগের পূর্বে একই কাজ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল।  ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সরকারে থাকাকালীন ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলও মুক্তভাবে একইরকম পরিচালিত হয়েছে। সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের ছাত্র সংগঠনও ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত একই ভূমিকাতে ছিল। সংবাদপত্র ডেলি স্টার স্বাধীনতার পর ক্যামপাসগুলোতে ১৫১টি হত্যার ঘটনা জানিয়েছে। যার কোনো বিচার হয়নি।
তবে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড অনেক দূর গেছে। তার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ব্যাপক বিস্তৃত ভারত-বিদ্বেষ মনোভাব জাগ্রত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে তিনি ছাত্রলীগের ভালো কাজের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদকেও মনে হচ্ছে তিনি এখন ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে ইচ্ছুক। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পূর্বেই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সমপাদককে বহিষ্কার করেন তিনি। এবং এর কেন্দ্রীয় কমিটির পুনর্বিন্যাস করেন।
বুয়েটের ভিসি ইতিমধ্যে ক্যামপাসে র‌্যাগিং বন্ধসহ রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ করেছেন। তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, হয়তো ছাত্রলীগ যা করে আসছিলো সেখান থেকে সরে আসবে। তারা যদি সাময়িক সময়ের জন্যও অন্তত থেমে যায় সেটা হবে দারুণ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status