এক্সক্লুসিভ

জাবি’র আইন বিভাগে তিনদিনে পাঁচ সভাপতি

জাবি প্রতিনিধি

১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ৭:৩৭ পূর্বাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে তিনদিনের ব্যবধানে পাঁচজন শিক্ষক বিভাগীয় সভাপতি হয়েছেন। মূলত সাজ্জাদ মহাসীন বিভাগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই ‘নাটকীয়’ ঘটনা ঘটে। তিন দিনব্যাপী ‘নাটকীয়’ পরিবর্তন শেষে ১৬ই সেপ্টেম্বর বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম। মূলত, এই পরিবর্তনের পেছনে অভ্যন্তরীণ শিক্ষক রাজনীতি ও বিভাগের নতুন নিয়োগের সমীকরণ রয়েছে বলে দাবি বিভাগের শিক্ষকদের একাংশের। অপরাংশ বলছে, আইনগতভাবে সব হয়েছে।

জানা যায়, আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষক কে এম সাজ্জাদ মহসীনকে ২০১৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৩ এর অ্যাক্টের ১ম স্ট্যাটিউটের ৯ (১) এর ধারা বলে ৩৬ মাসের জন্য বিভাগের সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এর আগে ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ২৮শে নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত তৎকালীন সভাপতি রবিউল ইসলাম উচ্চ শিক্ষায় বিদেশ থাকায় ৮৯ দিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাজ্জাদ মহাসীন। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বের সময় মূল দায়িত্বে গণনা করা হবে কি হবে না এই দ্বন্দ্বের মুখে সাজ্জাদ মহাসীন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ১৪ই সেপ্টেম্বর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান। তার অব্যাহতি চাওয়ার ফলে তিনদিনে পাঁচজন বিভাগীয় সভাপতি পেলো বিভাগটি।

রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র বলছে, আগামী ৬ই ডিসেম্বর সাজ্জাদ মহাসীনের দায়িত্ব শেষ হওয়ার থাকলেও ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বের সময় মূল দায়িত্বে গণনা করা হবে দাবি করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন শিক্ষকদের অপরাংশ। চিঠির জবাবে রেজিস্ট্রার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার সূত্র দিয়ে সাজ্জাদ মহাসীনের মূল দায়িত্ব ৩৬ মাস। ৩৬ মাসই থাকবে বলে জানান।

কিন্তু এই জবাবে সন্তুষ্ট নন বিভাগের অপরাংশের শিক্ষক। ফলে, দুই পক্ষের শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ভিসিপন্থি শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। কিন্তু সেখানেও কোনো সমাধান আসেনি। এদিকে ৯ই অক্টোবর রেজিস্ট্রার বরাবর ফের চিঠি দেন অপরাংশের শিক্ষক। ফলে, ‘অভিমানে’ সাজ্জাদ মহাসীন অব্যাহিত চান বলে জানা যায়। যোগাযোগ করা হলে কে এম সাজ্জাদ মহাসীন এসব বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি হননি। তবে তিনি নতুন সভাপতির জন্য শুভ কামনা জানান।

এদিকে, সাজ্জাদ মহাসীনের অব্যাহতির ফলে গত ১৪ই সেপ্টেম্বর বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শায়লা আলম আশাকে বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সেদিনই মায়ের গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার বরাবর দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন।
শায়লা আলম আশার অপারগতার প্রেক্ষিতে পরদিন ১৫ই সেপ্টেম্বর জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আবু সাঈদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু একই দিন উচ্চ শিক্ষার্থে ছুটিতে যাওয়ার প্রাক্কালে (২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি) তিনিও দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ফলে, একইদিন নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় আরেক সহকারী অধ্যাপক সুপ্রভাত পালকে। পারিবারিক জমিজমা সংক্রান্ত ব্যাপার ও দেশ-বিদেশে উচ্চ শিক্ষার চেষ্টার কথা বলে তিনিও অপারগতা প্রকাশ করে চিঠি দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বরাবর।

ফলে, ১৬ই সেপ্টেম্বর বিভাগে সভাপতি হিসেবে নতুন দায়িত্ব পান সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম। যোগাযোগ করা হলে নতুন সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, ‘বাকিরা ফরওয়ার্ড আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। যেহেতু ভারপ্রাপ্ত সময় ও মূল দায়িত্বের সময়ের মধ্যে কোনো ব্রেক নাই ফলে মূল দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব কাউন্ট হবে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।’ এ ছাড়া এই রেওয়াজের সিদ্ধান্ত একটি বিশেষ সিন্ডিকেটেও পাশ হয়েছে বলে জানান তিনি।

 ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন,‘সংবিধি অনুযায়ী আমরা বিভাগের সভাপতি পরিবর্তন করেছি। সাজ্জাদ মহাসীন অব্যাহতি চাওয়ার পর যার দায়িত্ব পাওয়ার কথা তার মায়ের অসুস্থতা, পরবর্তী জনের উচ্চ শিক্ষা এবং এরও পরবর্তী জনের পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। আরেক সহকারী অধ্যাপক তাপস কুমার দাস বিদেশ রয়েছেন। ফলে, আমরা সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলামকে ফের দায়িত্ব দিতে হয়। তবে তিনি পূর্বে দায়িত্ব পালন করলেও এবারো পূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে আইনগত কোনো জটিলতা নেই। তাছাড়া সহকারী অধ্যাপকের নিচের কাউকে (প্রভাষক) সভাপতির দায়িত্ব নিয়ম না থাকায় আমরা বিভাগের ২ জন প্রভাষককে সভাপতির দায়িত্বের জন্য বিবেচনা করতে পারিনি।’ মূল দায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বের পক্ষ বিপক্ষের মত নিয়ে জানতে চাইলে রহিমা কানিজ বলেন, ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব মূল দায়িত্বে গণনা করা হয় না। তবে শিক্ষকদের একটি অংশের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এ ছাড়া চিঠির জবাবে ভারপ্রাপ্ত সময় গণনা করে কখনো মূল দায়িত্বের সময় কমে যায় না বলে জবাব দেয়ার কথাও স্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার।

এদিকে, পাঁচ মাস আগে হওয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে সামনে হতে যাওয়া নিয়োগের কারণে বিভাগের সভাপতির পদ এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়। এরই প্রেক্ষিতে স্নাতকোত্তর পর্বের ফলাফল আটকিয়ে রাখার অভিযোগও রয়েছে। বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে রাবি-ঢাবি দ্বন্দ্বের কারণে পাঁচ মাস ধরে নিয়োগ ঝুলে আছে বলেও জানা যায়। এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিভাগের নতুন সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে এই ডাইমেনশন আছে। সিনিয়র হিসেবে সেটা আমি মিনিমাইজ করার চেষ্টা করবো। নিয়োগ ঝুলে থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তৎকালীন বিভাগীয় প্রশাসন বলতে পারবে। আমি চাই দ্রুত বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হোক। ফলাফল আটকে নেই আসলে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে আমি প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করেছি। কিন্তু ফলাফল সমন্বিত হবে নাকি থিসিস নন থিসিস আলাদা হবে সেটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় ব্যয় হয়েছে। আজ কালের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’
উল্লেখ্য, তিনি স্নাতকোত্তর পর্বের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status