এক্সক্লুসিভ

এনআরসি: ‘বাবার মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিক সরকার, আমরা নেবো না’

মানবজমিন ডেস্ক

১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আটক শিবিরে বন্দি আসামের এক প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিবার বলছে, তারা মৃতদেহ নিতে চান না। ‘বাবাকে যখন বিদেশি বলেই ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশেই পাঠিয়ে দিক দেহ, আমরা নেবো না,’ বলছিলেন দু’বছর আটক থেকে মারা যাওয়া দুলাল পালের ছেলে আশিস।
প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে, মৃত ব্যক্তিকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশি বলে ঘোষণা করার পরেই তাকে আটক করে তেজপুর জেলের ভেতরে অবস্থিত আটক শিবিরে রাখা হয়েছিল।

শোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং বিবিসিকে জানিয়েছেন, মাসখানেক আগে আটক শিবিরে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে পাঠানো হয় দুলালকে। তার মানসিক ব্যাধি ছিলই, এর সঙ্গে যোগ হয় ডায়াবেটিসও। গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে তার চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই তিনি গত রোববার মারা যান।

শোনিতপুর জেলার আলিসিঙ্গা-রবারতলার বাসিন্দা ছিলেন দুলাল পাল। তার দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত থাকার কথা নিশ্চিত করেছে তার পরিবারও। সে অবস্থাতেই তাকে আটক করে রাখা হয়েছিল ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে।

আশিস বলেন, ‘১৯৬৫ সালে জমি কেনার দলিল রয়েছে আমাদের। সেটাই তো প্রমাণ যে, আমার বাবা ’৭১-এর আগে এসেছিলেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সেটা মানলো না। বাবা বা আমাদের ভাইদের কারও নামই এনআরসিতে ওঠেনি।’ আশিসের মা ঘরেই মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেন, আর তিনি নিজে গ্যারেজে কাজ করেন। জমি আর মায়ের সামান্য সোনার গয়না বিক্রি করে বাবাকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করার জন্য মামলা লড়তে হয়েছে তাদের। কোনোদিনই তিন বেলা ভরপেট খেতে পারেন না তারা।

ক্ষোভ নিয়ে আশিস বলেন, ‘কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে আমাদের। এত কিছু করেও বাবাকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে পারিনি। জীবিত অবস্থায় যখন তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তাহলে আমরা কেন দেহ নেবো? আগে লিখিতভাবে প্রশাসন জানাক যে, আমার বাবা ভারতীয় ছিলেন, তবেই দেহ নেবো।’

এদিকে দুলাল পালের পরিবারের অটল অবস্থান নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন পড়েছে এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে। ডেপুটি কমিশনার সিং বলেন, ‘তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছিল ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। যেকোনো কারণেই হোক তিনি একবারও ভোট দেননি। সে জন্যই তার নাম প্রথমে ‘ডি-ভোটার’ করা হয়েছিল, তারপরে ট্রাইব্যুনালেও তিনি প্রমাণ দিতে পারেননি যে, তিনি বিদেশি নন। সেক্ষেত্রে আমাদের তো করার কিছু নেই। আমরা তো ট্রাইব্যুনালের আদেশ বদলাতে পারি না।’

গত তিনদিন ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা আশিস পাল আর তার পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইনি সহায়তা, মরদেহ গুয়াহাটি থেকে শোনিতপুরে নিয়ে আসার ব্যবস্থাসহ নানা সাহায্য করতেও তারা প্রস্তুত বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনিক কর্তারা। একই সঙ্গে কীভাবে আটক অবস্থাতেই মৃত্যু হলো দুলাল পালের, তা তদন্ত করে দেখার নির্দেশ জারি করেছেন শোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং।

এখনো দুলাল পালের মৃতদেহ গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজের মর্গেই রাখা রয়েছে। আর ওদিকে তার বাড়িতে পরিবার পরিজন হিন্দু শাস্ত্র মতে অশৌচও পালন করতে পারছেন না দেহ সৎকার না হওয়ায়। তার ছেলে বলছিলেন, ‘বাবাকে দাহ করা হয়নি, তাই আমরা শুধু ফলটল খেয়ে আছি।’
(সূত্র: বিবিসি বাংলা)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status