বাংলারজমিন

কিশোরগঞ্জে অচল আদালতের কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে

১৮ অক্টোবর ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ বুধবার দুপুরে মামলার নথি দেখতে গিয়ে বিচারকের নির্দেশে সিনিয়র এক আইনজীবীকে চোর বলে হাতকড়া পরিয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থার নিরসন হয়নি। ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা  আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেননি। ফলে আদালতের কার্যক্রম কার্যত অচল ছিল। এছাড়া এ ঘটনায় আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ পদমর্যাদার) মোহাম্মদ সোলাইমানের বিরুদ্ধে আইনজীবী মীর মো. ইকবাল হোসেন বিপ্লব বাদী হয়ে ১নং আমল গ্রহণকারী আদালতে বুধবারই দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির মামলার অভিযোগ দায়ের করেন। তবে মামলার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গতকাল বিকাল পর্যন্ত কোনো আদেশ প্রদান করেননি। ফলে গতকাল আদালত পাড়ায় এক ধরনের সুনশান নীরবতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া আদালতে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখনও সংশ্লিষ্ট আদালতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বুধবার অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠিত জেলা আইনজীবী সমিতির সভায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিচারক মোহাম্মদ সোলাইমানকে অবিলম্বে চাকুরিচ্যূত করা, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করা, দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির মামলা দায়ের করা, কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর কোর্ট বর্জন করাসহ এই কোর্টের দায়িত্ব ট্রাইব্যুনাল-১ এর কাছে হস্তান্তর করার দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে বৃহস্পতিবার ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা কোন বিচার কাজে অংশ নেন নি। এতে কার্যত দ্বিতীয় দিনের মতো অচল ছিলো আদালতের কার্যক্রম।
আদালতের একটি সূত্র জানায়, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জেলা ও দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্টদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনজীবীদের সহনশীল আচরণসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে আল্টিমেটামের ব্যাপারে আদালত কর্তৃপক্ষও কোনো বিবৃতি দেয়নি। এছাড়া ঘটনার বিষয়ে বিচারক মোহাম্মদ সোলায়ানের বক্তব্য জানাও সম্ভব হয়নি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মো. ফেরদৌস বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনজীবীদের কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর কোর্ট বর্জন করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিচারকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়েরসহ তাঁকে দ্রুত চাকুরিচ্যুত করার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি এবং আইনমন্ত্রীকে সার্বিক বিষয়টি অবহিত করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদালত চলাকালীন সিনিয়র আইনজীবী মো. ইকবাল হোসেন বিপ্লব একটি মামলার নথি দেখার জন্য বেঞ্চ সহকারীকে বললে বেঞ্চ সহকারী মামলার নথিটি আইনজীবী বিপ্লবকে প্রদান করেন। অ্যাডভোকেট বিপ্লব মামলার নথিটি নিয়ে আদালতের দরজায় নথিটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখার সময় মামলার ডাক পড়ে। এ অবস্থায় ওই আইনজীবী নথিটি বেঞ্চ সহকারীর নিকট হস্তান্তরের পর বেঞ্চ সহকারী মামলার নথিটি যথারীতি ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. সোলাইমানের নিকট উপস্থাপন করলে বিচারক আইনজীবী বিপ্লবের নিকট জানতে চান, মামলার নথি নিয়ে তিনি কোথায় গিয়েছিলেন? অ্যাডভোকেট বিপ্লব নথিটি দেখার জন্য বেঞ্চ সহকারীর নিকট থেকে চেয়ে নেয়া হয়েছে জানানোর পরও বিচারক আইনজীবী বিপ্লবকে মামলার নথি চোর আখ্যা দিয়ে তাঁকে আটকের নির্দেশ দেন পুলিশকে। নির্দেশ পেয়ে পুলিশ আইনজীবী বিপ্লবকে তাৎক্ষণিক আটক করে তাঁর হাতে হাতকড়া পরিয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখেন। এ ঘটনার পরপরই বারের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শহীদুল আলমসহ উপস্থিত বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী আইনজীবী বিপ্লবকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলেও বিচারক তাঁদের অনুরোধ রাখেননি। এ খবর আইনজীবীদের মধ্যে মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌসের নেতৃত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকের এজলাসে ছুটে গিয়ে আইনজীবী বিপ্লবকে ছাড়িয়ে নেয়। এ সময় উত্তেজিত আইনজীবীরা এজলাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং বিচারক মো. সোলায়মানকে আধাঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। আইনজীবীরা বিচারকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আদালতের সকল পর্যায়ের কার্যক্রমে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছুটে গিয়ে ওই বিচারককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status