অনলাইন

গ্রামীণ ফোন, রবিতে প্রশাসক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু

মানবজমিন ডেস্ক

১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

ব্যবসা পরিচালনার জন্য গ্রামীণ ফোন ও রবি’তে প্রশাসক নিয়োগ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এ বিষয়ে জানেন এমন অনেক সূত্র বলেছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির মতে, সরকারের পাওনা ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা আদায় করাই এর উদ্দেশ্য। ২০১৬ সালে বিটিআরসির দুটি আলাদা অডিটের মাধ্যমে এই টাকার এই অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়। মঙ্গলবার প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় অনুমোদনের জন্য টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে মঙ্গলবার দুটি চিঠি পাঠিয়েছে বিটিআরসি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি স্টার।
এতে বলা হয়, ওই দুটি চিঠিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে চারজন করে প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার বলেছেন, আমরা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রকদের সুপারিশ পেয়েছি। যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হবে আজ। তিনি আরো বলেন, আমি মৌখিকভাবে বিটিআরসিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছি এবং বলেছি, প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে। তিনি বলেন, এমন উদ্যোগ বাংলাদেশে অপ্রত্যাশিত।
টেলিযোগাযোগ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মন্ত্রণালয় সরকারের সম্মতিতে সামনে অগ্রসর হয়েছে। গত ৫ই সেপ্টেম্বর গ্রামীণ ফোন ও রবি’কে দুটি নোটিশ ইস্যু করে বিটিআরসি। এতে জানতে চাওয়া হয় বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য তাদের ২জি এবং ৩জি লাইসেন্স কেন বাতিল করা উচিত হবে না। এর জবাবে এ মাসে এ দুটি মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, বিটিআরসির নোটিশ ছিল অবৈধ। কারণ, অডিট সংক্রান্ত বিষয় এখনও বিচারাধীন।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহিরুল হক বলেছেন, তাদের এ জবাব সন্তোষজনক নয়। তাই ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রশাসক নিয়োগের আগে পর্যন্ত তাদের ২জি এবং ৩জি লাইন্সে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে ২জি ও ৩জি সেবা অব্যাহত থাকবে। এমন অবস্থায় গত মাসে মধ্যস্থতায় নামেন অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তাফা কামাল। তিনি ঘোষণা দেন যে, এ প্রতিষ্ঠান দুটি ও বিটিআরসির মধ্যে বিষয়টি মিটমাট করতে তিনি সমঝোতা শুরু করবেন। ৩রা অক্টোবরে অডিট রিপোর্ট রিভাইস করার জন্য দুটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
ওই মিটিংয়ের পরে এ দুটি প্রতিষ্ঠান এমেইল মারফতে অবিলম্বে তাদের বকেয়ার মূল পরিমাণ (জরিমানা ছাড়া) পরিশোধের জন্য আলাদা একটি প্রস্তাব পায়। এই অর্থকে বলা হয় নির্বিবাদ অর্থ। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠান দুটি জানায় এই মূল টাকা নির্বিবাদ নয়। এরপর তারা এর কোনো জবাব পায় নি।  
২০১৬ সালে দীর্ঘ অডিট প্রক্রিয়া চালায় বিটিআরসি। এরপর তারা দাবি করে যে, গ্রামীণ ফোনের কাছে তারা পাবে ১২,৫৭৯.৯৫ কোটি টাকা এবং রবির কাছে পাবে ৮৬৭.২৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গ্রামীণ ফোনের কাছে মূল পাওনার পরিমাণ হলো ২২৯৯.৭১ কোটি টাকা এবং রবির কাছে পাওনা ৩১৯ কোটি টাকা। ওদিকে টেলিযোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ মাসের মধ্যে প্রশাসক নিয়োগ করবে বিটিআরসি। বকেয়া পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত তারা গ্রামীণ ফোন ও রবি’তে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রতিটি কোম্পানিতে যে চারজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হবে তার মধ্যে একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। বাকি তিনজন দেখবেন আইনগত বিষয়, প্রকৌশল এবং আর্থিক ও মার্কেটিং বিষয়। তিনি আরো বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি পাওনার অর্থ মুক্ত করা। এই অর্থ পাওয়ার জন্য এই প্রশাসক টিম কোম্পানির মূল কর্তৃপক্ষ হবেন।
ওদিকে এমন সিদ্ধান্তের কড়া সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন কোম্পানি দুটির মুখপাত্ররা। তারা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে মারাত্মক পরিণতির মুখে পড়তে হবে সরকারকে। একটি প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ স্থানীয় নির্বাহী বলেছেন, যেহেতু গ্রামীণ ফোন ও রবি’র মূল কোম্পানি টেলিনর এবং এজিয়েটায় নরওয়ে এবং মালয়েশিয়ায় বিপুল পরিমাণ সরকারি বিনিয়োগ আছে, তাই প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পর পরই এটা সরকার-টু-সরকার ইস্যু হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, আমাদের গ্রুপ এরই মধ্যে আমাদেরকে সরকারি কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা শিগগিরই প্রতিক্রিয়া জানাবো এবং তাতে পরিণতি হবে খুব কঠোর।
গত আগস্টে অডিট রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে গ্রামীণ ফোন ও রবি। কোম্পানি আইন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম রবি’র মামলায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি বলেছেন, যখন একটি কোম্পানি গুটিয়ে যায় তখনই সরকার সেখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে। গ্রামীণ ফোন ও রবি’তে প্রশাসক নিয়োগ হবে বেআইনি, যেহেতু তারা এ ইস্যুতে কোর্টে মামলা করেছে।
ওদিকে দুটি কোম্পানিই বলেছে, তারা এখনও পর্যন্ত বিটিআরসি থেকে কোনো নোটিফিকেশন পায় নি এ মর্মে। রবি’র চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক কোনো নোটিফিকেশন এখনও আমরা পাই নি। আমরা আবারও বলছি এ বিষয়ে আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে মামলা। তিনি আরো বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগ হবে দেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়। বলাই বাহুল্য যে, এতে দেশে বিদেশী বিনিয়োগের যে নিরাপদ পরিবেশ আছে তার অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
ওদিকে গ্রামীণ ফোনের ভারপ্রাপ্ত হেড অব কমিউনিকেশন হোসেন সাদাত বলেছেন, যেহেতু বিটিআরসি থেকে আমরা এমন উদ্যোগের বিষয়ে কোনোই তথ্য পাই নি, ফলে এ নিয়ে কিছু বলবো না। আমাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে স্বচ্ছতা, সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং সময়মত সমাধান। সম্প্রতি আমরা সরকারের কাছ থেকে নতুন এক সেট নির্দেশনা পেয়েছি, যা বিরোধকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারে। দুঃখজনক হলো গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে বিটিআরসির ভিত্তিহীন বিধিনিষেধ এবং শোকজ নোটিশ এখনও বিদ্যমান রয়েছে। এটা স্বাভাবিকভাবে আমাদের কাজকর্ম চালাতে বাধা দিচ্ছে। আমাদের কাস্টমাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
জুলাই মাসে গ্রামীণ ফোনের ব্যান্ডউইথ শতকরা ৩০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে বিটিআরসি। রবির ক্ষেত্রে তা শতকরা ১৫ ভাগ। বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থতার জন্য এটা করা হয়েছে। কিন্তু দু’সপ্তাহ পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। ২২ শে জুলাই সরকার তাদেরকে নতুন প্যাকেজ বা সেবা, নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত সরঞ্জাম আমদানি অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রী মুস্তাফা জব্বার বলেছেন, প্রশাসক দায়িত্ব দেয়ার পর এই বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status