বাংলারজমিন

গৃহহীন গীতা, জামেনা, নাজমারা এখন স্বপ্নের নীড়ে

মো. সাওরাত হোসেন সোহেল, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে

১৬ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ৮:০৩ পূর্বাহ্ন

 ভাঙাচোরা অথবা অন্যের ঘরে দুঃখ কষ্টে বসবাস করতো- গীতা, জামেনা, নাজমা, তছিরন, বিবি, মালেকা ও কবিতন। স্বপ্ন দেখতো একটি নিজের সুন্দর ঘরে থাকবেন তারা। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না, স্বপ্ন স্বপ্নই থাকতো। রোদ বৃষ্টিতে কষ্টে দিনাতিপাত করতো। ঝড় উঠলেই বাড়তো  ভয়। শুধু তাই নয়, কখনো বন্যা আবার কখনো ভাঙন কেড়ে নেয় তাদের স্বপ্ন, ভেঙে দেয় আশা। ভেসে নেয় সাজানো সংসার। সব হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন ইতিমধ্যে নিঃস্ব। আবার অনেকের জায়গা থাকলেও ছিল না আশ্রয়স্থল। আশ্রয়হীন সেই মানুষরা খুঁজছিল আশ্রয়। ঠিক এ সময় এগিয়ে এসেছে সরকার। দিয়েছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।  ‘আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় কুড়িগ্রামের চিলমারীতে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের পক্ষ থেকে চলতি বছরে ৭২টি পরিবারসহ প্রায় ১৭০টি পরিবার খুঁজে পেয়েছে তাদের স্বপ্নের নীড়। গীতা রানী উপজেলার সবুজপাড়ার বাসিন্দা। স্বামী মাছ বিক্রি করলেও পুঁজি না থাকায় মহাজনের কাছে জিম্মি সব সময়। এক সময় বাধ্য হয়ে বাপের সম্পদ বিক্রি করে খুব অল্পমূল্যে সবুজপাড়া নালার পাড়ে ২শতক জমি ক্রয় করেন। বাপের ভিটা বিক্রি করে ব্যবসায় নামলেও ভালো ফল পাননি। তাই স্বামীর করুণ অবস্থা দেখে গীতা রানী অন্যের বাড়িতে বেছে নেয় ঝিয়ের কাজ। স্বামী-স্ত্রী সন্তানরা মিলে যা আয় করতো তা দিয়ে সংসারেই চলতো না। বাধ্য হয়েই একটি ছোট ভাঙা ঘরে গীতা রানী স্বামী, সন্তান ও ছেলের বউদের নিয়ে খুবই কষ্টে থাকতেন। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন উপজেলা প্রশাসন। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ (জমি আছে ঘর নাই) প্রকল্প থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা তাকে একটি সুন্দর ঘর করে দিয়ে তার পরিবারকে দেখিয়েছেন সুখের ঠিকানা। ভরটপাড়ার জামেনা। ছিল না নিজের কোনো ঘর। রাত কাটতো অন্যের ঘরে কিংবা বারান্দায়। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় জামেনা এখন পেয়েছে নতুন ঠিকানা, ফুটেছে মুখে সুখের হাসি। উত্তর ফেইচকা এলাকার নাজমা। নিজের জমি থাকলেও অভাবের সংসার তৈরি করতে পারেনি একটি থাকার উপযুক্ত ঘর। কষ্ট ছিল, ছিল দুঃখ। এই প্রকল্পের অধীনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীর বিক্রমের সহযোগিতায় ঘর পেয়েছেন। স্বামীহারা মালেকা। স্বপ্ন ছিল একটি ঘর করবেন। কিন্তু নুন আনতে পানতা ফুরানোর সংসারে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছিল না তার। অবশেষে সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর পক্ষ থেকে চলতি বছরে সরকারি খরচে ওই জমিতে একটি মেঝেপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। তার স্বপ্ন পূরণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গীতা, জামেনা, নাজমা, মালেকাসহ অনেকের মতো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ডাটিয়ারচর এলাকার কেরামত আলী,  চড়ুয়াপাড়া এলাকার মৃত আক্তার আলীর স্ত্রী সবেদাসহ অনেকেরই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ জমি আছে ঘর নাই নামে প্রকল্পের একপত্রে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে কোনো লোক গৃহহীন থাকবে না। সেটির অংশ হিসেবে এই উপজেলাকে এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অসহায় মানুষজন এখন খুঁজে পাচ্ছে তাদের একটি আশ্রয়, একটি ঠিকানা। সেই সঙ্গে সরকারের এই প্রকল্পটি ব্যাপক সাড়াও ফেলেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status