শেষের পাতা

ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, আওয়ামী লীগ নেতা বহিষ্কার

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

১১ অক্টোবর ২০১৯, শুক্রবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

ভারতের সঙ্গে হওয়া বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শেখ বাহারুল আলমকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না তার কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয়া হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া 
হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ।
জানা যায়, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সরকার প্রধান, দলীয় প্রধান ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ফেসবুকে দেয়ায় এবং তা স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।

গত ৬ই অক্টোবর বিকাল ৫টা ২৪ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ভারতের সঙ্গে কী চুক্তি হয়েছে তা জানার অধিকার এদেশের জনগণের রয়েছে’ এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শেখ বাহারুল আলম। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
“ভারত বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বলা হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ ও অধিকার চরম উপেক্ষিত...........................
দুর্বল অবস্থানে থেকে বন্ধু-প্রতিম শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে-ফলাফল শক্তিধরের পক্ষেই আসে। বাংলাদেশ- ভারত উভয়-পক্ষীয় সমঝোতা স্মারক নাম দেয়া হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয় দুর্বল রাষ্ট্রকে।
ভারত বাংলাদেশ থেকে তার সকল স্বার্থই আদায় করে নিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এখনো ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি।

১) দীর্ঘদিনের আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন এবারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় স্থান পায়নি।
২) ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হুঙ্কার দিয়েছে নাগরিকপঞ্জীতে বাদ পড়া জনগণকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হবে। তারপরও এবারের সমঝোতা চুক্তিতে ‘অভ্যন্তরীণ’ অজুহাতে বিষয়টি স্থান পায়নি।
৩) বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত কিছু বলেনি।
৪) তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুপ থাকলেও বাংলাদেশ অংশের ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরা রাজ্যের পানীয় জল হিসেবে প্রতিদিন ১.৮২ কিউসেক টেনে নেবে ভারত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।
৫) বাংলাদেশের জনগণের তরল গ্যাসের চাহিদা পূরণের ঘাটতি থাকলেও ভারতে তরল গ্যাস রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং যৌথভাবে সে প্রকল্প উদ্বোধনও হয়েছে।
৬) চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দর ভারত কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য ভারতের কোনো বন্দর সেই তালিকায় ছিল না।
অমানবিক আচরণের শিকার হয়েও বাংলাদেশ পানি ও গ্যাস সরবরাহ দিয়ে মানবিকতার প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ ও অধিকার উপেক্ষিত রেখে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হয়েছে।
শক্তিধর প্রতিবেশীর আধিপত্যের চাপ এতোই তীব্র যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে কিনা আশঙ্কা হয়। কারণ ভারতের চাপিয়ে দেয়া সকল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে হচ্ছে।”

ডা. শেখ বাহারুল আলম খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখার সভাপতি।
দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বক্তৃতা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মোল্লা জালাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট কাজী বাদশা মিয়া, পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ও বি এম এ সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান জামাল ও মো. আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি, ত্রাণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিমাই চন্দ্র রায়, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদ আহম্মেদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মিজানুর রহমান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হালিমা ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ আলম, সদস্য অ্যাডভোকেট রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, সদস্য অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল, সদস্য নুরে আলম জোয়াদ্দার প্রমুখ।
জরুরি সভায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সরকার ও দলীয় প্রধান এবং রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ফেসবুকে প্রদান এবং গত ৭ই অক্টোবর তা স্থানীয় দৈনিক সময়ের খবরে প্রকাশিত হওয়ায় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. শেখ বাহারুল আলমকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং কেন তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে না, তা আগামী ৭ দিনের ভেতরে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমি এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল কোনো কাগজ বা চিঠি পাইনি। আমি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক ও আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দেশের পক্ষে কথা বলা ও ভারতের বিপক্ষে কথা বলা দলের বিরুদ্ধে কথা বলা হতে পারে না। বাংলাদেশের যে সকল স্বার্থ এবং অধিকার ভারতের কাছ থেকে পাওয়া আবশ্যক ছিলো তা না পাওয়ায় সংক্ষুব্ধ উক্তি ফেসবুকে দেয়া হয়েছে। এতে জননেত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও ভারত সফর সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের স্বার্থ ভারত যথাযথভাবে পালন না করার কারণে সংক্ষুব্ধ হয়ে কথা বলেছি। এভাবে যদি আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে থাকে এক সময় আমাদের সার্বভৌমত্ব নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেবে। ভারতের আধিপত্যের কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন একটি আশঙ্কা থেকেই এ বক্তব্য দেয়া। এটা কোনোভাবেই দলীয়বিরোধী ও দলীয় সরকারবিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধী তো নয়ই। তারপরও তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি তাদের সুবুদ্ধির উদয় হবে। হাতে কাগজ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status