বিশ্বজমিন

আদালতে হারলেন ট্রাম্প, আয়কর রেকর্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ

মানবজমিন ডেস্ক

৮ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

নিজের ৮ বছরের আয়কর রেকর্ড সরকারি কৌঁসুলিদের কাছে হস্তান্তর করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। নিউ ইয়র্ক রাজ্যের কৌঁসুলিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে তদন্ত করছেন, তার অংশ হিসেবে তার আয়কর রেকর্ড চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই নোটিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ট্রাম্প। সেই মামলায় তিনি পরাজিত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, আদালতে প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা এই যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় একজন প্রেসিডেন্ট সব কিছু থেকেই দায়মুক্তি (ইম্যুনিটি) পাবেন। আদালত সেই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রসঙ্গত, ডনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলেও নিজের আয়কর রেকর্ড প্রকাশ করেননি। তীব্র চাপ সত্ত্বেও তিনি নিজের আয়কর রেকর্ড প্রকাশ না করার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। ১৯৬০ সালের পর থেকে তিনিই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি নিজের আয়কর রেকর্ড প্রকাশ করেননি।
খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল দাবি করা দুই নারীকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে নিউ ইয়র্কের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। সেই তদন্তের অংশ হিসেবেই প্রেসিডেন্টের আয়কর নথি চাওয়া হয়েছিল।
সোমবার নিজের ৭৫ পৃষ্ঠার রায়ে, বিচারক ভিক্টর মারেও লিখেছেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়া থেকে প্রেসিডেন্টের সম্পূর্ণ ও সীমাহীন দায়মুক্তির যে দাবি করা হয়েছে,’ তা তিনি গ্রহণ করেননি। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের এই যুক্তি দেশের সরকারি কাঠামো ও সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থি।
রায়ের পর ট্রাম্পের আইনজীবীরা তাৎক্ষণিক জরুরি ভিত্তিতে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করেছেন। সোমবার ট্রাম্প নিজেও এ বিষয়ে টুইট করেছেন। তিনি বলেন, চরমপন্থি বাম ডেমোক্রেটরা সব ক্ষেত্রেই পরাজিত হয়েছে। তারা তাই নিউ ইয়র্ক শহর ও রাজ্য ডেমোক্রেটদলীয় কৌঁসুলিদের ব্যবহার করছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এ ধরণের কোনো কিছুই আগে কখনই হয়নি। কাছাকাছি কিছুই নয়।
তবে নিউ ইয়র্কের কৌঁসুলি সাইরাস ভেন্স জুনিয়র তদন্ত করে দেখছেন, দুই নারীকে অর্থ প্রদান করে ট্রাম্প নির্বাচনী শিবির নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করেছেন কিনা। বিদ্যমান রায় যদি আপিল আদালত বহাল রাখে, তাহলে তিনি তার নোটিশ কার্যকরে পদক্ষেপ নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রেও এই ট্যাক্স রেকর্ড প্রকাশ করা হয়তো হবে না।
প্রসঙ্গত, ওই দুই নারীকে দেওয়া অর্থের কথা নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়নি। মার্কিন আইনানুযায়ী, একটি ভোটকেও প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যেও যদি কোনো অর্থ খরচ করা হয়, তাহলে তা কমিশনকে অবহিত করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প ওই অর্থ দিয়েছিলেন নিজের ব্যক্তিগত সুনাম রক্ষা করতে, নাকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে?
এর আগে ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত আইনজীবী কোহেন ওই অর্থ প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করেছেন। তিনি এখন ৩ বছরের সাজা ভোগ করছেন। তবে ট্রাম্প বলছেন, ওই অর্থ প্রদান বৈধ ছিল। তিনি নির্বাচনী তহবিল থেকে নয়, বরং ব্যক্তিগতভাবে ওই অর্থ দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, কোহেন স্বল্পমেয়াদী সাজার জন্য মিথ্যা কথা বলেছেন।
নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের এই তদন্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, কৌঁসুলি ভ্যান্স একজন ডেমোক্রেট। এছাড়া বিচারক মারেরোকে ১৯৯৯ সালে নিয়োগ দিয়েছিলেন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।
এর আগে বহুবার ট্রাম্পের আয়কর রেকর্ড পাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বর্তমানে ট্রাম্প পরিবারের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি যাচাই বাছাই করছে। সেখান থেকে বাধ্যতামূলক নোটিশ জারি করা হয়েছে ডয়েচে ব্যাংকের কাছে, যেন সেখানে থাকা ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টের যাবতীয় তথ্য হস্তান্তর করা হয়। ট্রাম্প এ বিষয়েও মামলা ঠুকে দিয়েছেন।
এ মাসের শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি আইন একজন বিচারক সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। ওই আইনানুযায়ী, ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে, ট্রাম্পকে নিজের ব্যক্তিগত আয়কর রেকর্ড প্রকাশ করতে হতো। কিন্তু বিচারক সেই আইন আপাতত স্থগিত রেখেছেন। যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার কৌঁসুলিরা আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status