প্রথম পাতা

যেভাবে হত্যা করা হয় আবরারকে

পিয়াস সরকার

৮ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা। অসীম মহাকাশের অন্তে। আবরার ফাহাদের ফেসবুক বায়োতে লেখা এই কথা। তার বায়োর মতোই মহাকাশের অন্তে হারিয়ে গেছেন তিনি। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে। আবরার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিপল-ই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। শেরে বাংলা হলের এই শিক্ষার্থীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আববাররের ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাসের কারণেই ক্ষুব্ধ হয় ছাত্রলীগের কর্মীরা হত্যা করে বলে সহপাঠীদের অভিযোগ। রোববার বিকালে আবরার তার এক বন্ধুর সঙ্গে পলাশীতে গিয়েছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বন্ধু বলেন আমরা সেখানে ঘণ্টাখানেক ছিলাম। তখনই জানান স্ট্যাটাসের কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বড় ভাইয়েরা। সেদিন তারা ৬টার দিকে হলে ফেরেন। তার বন্ধু থাকেন ১০১০ নম্বর রুমে। আর আবরার থাকতেন ১০১১ নম্বর রুমে। আবরারের বন্ধু বলেন, সাড়ে ৭ টার দিকে অংক করছিলো আবরার। সেই অংকের খাতায় দেখা যায় একটি অংকের স্টেজ ৩ সমাধান করবার সময়েই ডাক পড়ে। ফাহাদ সমাধান না করে দুটি শুণ্য লিখে উঠে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ সম্পাদক অমিত সাহাসহ ৩ জন তাদের রুমে নিয়ে যায় ২০১১ নম্বর রুমে। ঠিক তার ওপরের রুমে। এরপর তাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এরপর সেখানে কিহয় তা জানা না গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু তার ঘনিষ্টজনদের বলেন, তার ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার ঘেটে দেখা যায় সে বিভিন্ন শিবিরের পেইজে লাইক দেয়া ও সেই সঙ্গে শিবিরের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এরপর শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় বড় ভাইদের ডেকে আনি। এরপর আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে রাতে শুনি আবরার মারা গেছে। রাত ১০ টার দিকে সেই রুম থেকে ১ জন এসে আবরারের জন্য কাপড় নিয়ে যায়। তিনি বলেন, তখন ধারণা করি রক্তাক্ত করা হয়েছে আবরারকে। এরপর ওপরে যাই। ওপরে থেকে মার ও চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ২০১১ নম্বর রুমে চলছিলো নির্যাতন আর ২০১০ নম্বর রুমের একজন জানান, তিনিও চিৎকারের শব্দ শুনেছেন। কিন্তু চিৎকারের শব্দ শোনার পরেও কেন এগিয়ে গেলেন না। এর জবাবে বলেন, বড় ভাইয়েরা প্রায়শই এভাবে নিয়ে গিয়ে মারধোর করেন। এটা নতুন কিছু না। ফাহাদের বন্ধু রাত ২টার দিকে চিৎকারের শব্দ শুনে বের হন। বের হয়ে দেখেন তোশকের মধ্যে শোয়ানো আবরার। ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন। বলছিলো, আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। এদিকে ঘটনার পর সোমবার সকালে উদ্ধার করা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, তিনজন ধরে নিয়ে আসছে আবরারকে। তার পিছনে আসছেন বেশ কজন। তারা তাকে নিয়ে দুই সিঁড়ির মাঝখানে নিয়ে রাখে। আবরারের বন্ধু বলেন, নির্যাতনকারী ৩ জন সেখানে উপস্থিত ছিলো। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। ফাহাদের অন্তিম মুহুর্তে ছিলাম আমি। নির্যাতনকারীরাই ডাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার। আমরা এম্বুলেন্স ডাকি। এম্বুলেন্সের স্ট্রেচার রেডি করার সময়ে আসেন ডাক্তার। ডাক্তার বলেন, ফাহাদ আর নেই। সেময় তার শরীরে ছিলো মারের চিহ্ন। তিনি আরো বলেন, ফাহাদ আমার কলেজ ফ্রেন্ড। এরপর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই হলে পাশাপাশি রুমে থাকি। তার মৃত্যু হলেও মেনে নিতে পারতাম না। আর এতো পরিকল্পিত হত্যা। আবরার কিছুদিন আগে কয়েক বন্ধু মিলে গিয়েছিলেন তাবলীগে। তার দেয়া ৩০শে সেপ্টেম্বর এক স্ট্যাটাসের কারণেও হুমকির মুখে পড়েছিলেন। সেই স্ট্যাটাসটি ছিলো ‘কে বলে হিন্দুস্থান আমাদের কোন প্রতিদান দেয়না। এইযে ৫০০ টন ইলিশ পাওয়া মাত্র ফারাক্কা খুলে দিছে। এখন আমরা মনের সুখে পানি খাবো আর বেশি বেশি ইলিশ পালবো। ইনশাল্লাহ আগামী বছর এক্কেবারে ১০০১ টন ইলিশ পাঠাবো।’
যে রুমে নির্যাতন করা হয় সেই রুমে গিয়ে দেখা যায় অমিত সাহার টেবিলের ওপরে কয়েকটি মদের বোতল। আর পড়ার টেবিলের বিভিন্ন দেব দেবীর ছবি। আর উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদের পড়ার টেবিলের ওপর আল্লাহু লেখা ফলক। আর অসংখ্য সিগারেটের শেষাংশ।


 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status