শেষের পাতা

চট্টগ্রামের ক্লাবগুলোতেও ক্যাসিনো কয়েন-কিরিচ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাটে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাব ও হালিশহর এলাকায় আবাহনী ক্লাবসহ পাঁচটি  ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ। অপর ক্লাব দুটি হচ্ছে কাজীর দেউড়ি সংলগ্ন ফ্রেন্ডস ক্লাব ও শতদল ক্লাব।
অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে জুয়ার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবের ভেতর থেকে ক্যাসিনো কয়েন ও দা-কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এসব ক্লাব থেকে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অভিযানের খবর পেয়ে তারা সটকে পড়েছেন। জুয়ার সরঞ্জামও সরিয়ে নেয়া হয়েছে এমন ধারণা র‌্যাব ও পুলিশের।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজামউদ্দিনের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যা থেকে একই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান ও আবাহনী ঘিরে রাখার পর সেগুলোতে অভিযান শুরু করে র‌্যাবের পৃথক টিম। অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে প্লে-কার্ড, জুয়ার গুটি ও বোর্ড জব্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে কিছু জুয়ার সরঞ্জাম পাওয়া গেছে যেগুলো দিয়ে এখানে ক্যাসিনোর মতো খেলা হতো। এ ছাড়া দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

নিজামুদ্দীন বলেন, ক্লাবগুলো থেকে জুয়ার আলামত আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। সরিয়ে নেয়া আলামতগুলো জব্দ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট জানান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবের দেয়ালে ওখানকার কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পাওয়া যায়। ওই তালিকায় সভাপতি হিসেবে নাম রয়েছে হারুন উর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক একে এ সরোয়ার কামাল, সদস্য সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, মাহাবুবুল আলম চৌধুরী ও খোরশেদ আলম। তাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের নির্বাহী কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলম দাবি করেন, ওই সংসদটির কার্যালয় তারা খসরু নামক একজনকে ৪ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছিল। এজন্য প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে তাদের পরিশোধ করতে হতো ইজারাদারদের। কার্যালয়টি মূলত বিভিন্ন সময়ে ছেলেরা এসে তাস খেলে থাকে। কিন্তু এখানে জুয়া খেলার বিষয়টি তারা জানেন না বলে জানান খোরশেদ আলম।

তিনি বলেন, আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট ক্লাবটি পরিচালনা করতো। বছর তিনেক আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ক্লাবটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। বর্তমানে এই ক্লাব পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হারুন-আর-রশিদ।

তিনি জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টি হলে পেছনের নালা দিয়ে ক্লাবে পানি ঢোকে। মেরামত করার জন্য ফান্ডে পর্যাপ্ত টাকা নেই। সে কারণে এটা অমেরামত অবস্থায় পড়ে আছে। ক্লাবটি মেরামত করে না দেয়ায় ছয় মাস আগে চুক্তি শেষ হওয়ার পর আর নবায়ন হয়নি। এরপর কয়েক মাস ধরে এখানে আর কার্ড খেলা হয় না। অনেকদিন হচ্ছে এটা বন্ধ আছে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের ওই ক্লাবটির বিভিন্ন কক্ষ একটি নর্দমার মতো থাকতে দেখা যায়। ওই সময় বিভিন্ন কক্ষের কিছু সরঞ্জাম ওই নর্দমার পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় ছিল। তবে বিভিন্ন কক্ষে টিভি, বিদ্যুৎ লাইন, সিসিটিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম সচল থাকতে দেখা যায়। এদিকে একই সময় সদরঘাটে মোহামেডান ও আবাহনী ক্লাবগুলো থেকে বিভিন্ন প্লে-কার্ডসহ জুয়ার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

জানা গেছে, হালিশহরে আবাহনী ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন একই দলের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। অন্যদিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি শাহ আলম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন শাহবুদ্দিন শামীম।
এদিকে র‌্যাবের অভিযানের পর নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত ফ্রেন্ডস ক্লাব ও শতদল ক্লাবে অভিযান চালায়। তবে অভিযানে ক্লাব দু’টির ভেতর থেকে জুয়া খেলার কোনো সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।

এর আগে শুক্রবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে জুয়াবিরোধী অভিযান চালানো হয়। নগরীর আলমাস সিনেমার মোড়ে হেং আউট নামের একটি ক্লাবে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে অনুমতি ছাড়া পুল ও স্নোকার খেলা হতো, ওই সময় ক্লাব মালিকের ছেলে খলিকুজ্জামান ও কর্মচারী রবিউল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status