এক্সক্লুসিভ

কীনব্রিজ নিয়ে অবস্থান বদলালেন আরিফ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

কীনব্রিজ নিয়ে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। হালকা যান চলাচলের জন্য ব্রিজ খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। ১লা সেপ্টেম্বর রাতে পায়ে চলার রাস্তা করতে নিজেই উপস্থিত হয়ে কীনব্রিজের উভয় পাশে  লোহার ব্যারিকেড দিয়েছিলেন। এরপর থেকে ওই ব্রিজে কোনো যানবাহন চলছে না। পায়ে হেঁটেই বৃটিশ আমলে নির্মিত এই সেতু দিয়ে পথচারীরা চলাচল করছিলেন। এরই মধ্যে সিলেটের ঐতিহাসিক স্থাপনা কীনব্রিজ পরিদর্শন করে গেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার। তিনিও কীনব্রিজ দেখে প্রশংসা করেন। বিকল্প হিসেবে নগরীর কাজিরবাজার ও উপশহরের শাহজালাল সেতু দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করছিলো। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হন নগরীর দক্ষিণ অংশের তিন ওয়ার্ডের মানুষ। কীনব্রিজ বন্ধ করায় এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দাবি তুলে তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেন।

গত ১৪ই সেপ্টেম্বর রাতে দক্ষিণ সুরমা নছিবা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে কীনব্রিজ বন্ধের প্রতিবাদে মতবিনিময় হয়। নগরীর দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা ও ঝালোপাড়া এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে এ সভায় কীনব্রিজ খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর দক্ষিণ অংশের বাসিন্দারা কীনব্রিজের প্রবেশ মুখে সমাবেশের ডাক দেন। এ সময় সেখানে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি সমাবেশে কীনব্রিজ বন্ধ করে দেয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। বলেন- ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে হাল্কা যানবাহন চলাচলের জন্য অচিরেই কীনব্রিজ খুলে দেয়া হবে। ব্রিজ বন্ধ করার আগে আমার উচিত ছিল আপনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা। এটা না করে ব্রিজটি বন্ধ করার জন্য দুঃখিত।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত ঐতিহ্যবাহী কীনব্রিজটি সংস্কার করে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বিভিন্ন সেক্টর থেকে জানানো হয়েছে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ। যানবাহন ও মানুষ চলাচলের সময় ব্রিজটি কাঁপে।

মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আমি ব্রিজ বন্ধ করেছি। দক্ষিণ সুরমার ৩টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছি।’ এ সময় মেয়র এলাকায় যত ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে সব অপরাধ নির্মূল করতে সকল মহলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রফিকুল হকের সভাপতিত্বে ও ভার্থখলা স্বর্ণালী সংঘের সভাপতি শিপল চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলী আহমদ ও অ্যাডভোকেট মামুন হোসেনের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, প্যানেল মেয়র-১ তৌফিক বকস লিপন, ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকবীরুল ইসলাম মিন্টু, ২৫, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ, ভার্থখলা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি হাজী মিছবাহ উদ্দীন আহমদ, বরইকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ হাবিব হোসেন, শাহ আলম জুনেদ, হাজী আব্বাস উদ্দীন জালালী, খন্দকার মহসিন কামরান প্রমুখ। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৫, ২৬ ও ২৭ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘মেয়র যখন ব্রিজটি বন্ধ করেন তখন বিষয়টি আমরাও জানতাম না। ব্রিজ বন্ধ করায় প্রথম আমরা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। পরে এলাকার মানুষ ব্রিজটি খুলে দেয়ার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন। পরে অবশ্য মেয়র তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।

 ব্রিজটি মেরামতের জন্য তিনি দুই মাসের সময় নিয়েছেন। দু’মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ করে ব্রিজটি পূর্বের মতো হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র।’ এদিকে কীনব্রিজকে ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়ে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা। এই দাবিতে তারা গত  ১৬ই সেপ্টেম্বর বিকালে কীনব্রিজের উপরে মানববন্ধন করেন। এ সময় তারা জানিয়েছেন, বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘতম হাঁটার সেতুতে পরিণত হতে পারে কীনব্রিজ। সুতরাং যথাযথ সংরক্ষণের জন্য বাপার নেতৃবৃন্দ দাবি জানান। বাপার এই আয়োজনে সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। এদিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কীনব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়ার পর সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু আখ্যায়িত করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status