বাংলারজমিন

বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৭:১৯ পূর্বাহ্ন

সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আত্মনির্ভরশীল ও সমাজের নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য গাজীপুর জেলা পরিষদ ভিন্ন রকম ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদ হাজার হাজার বেকার যুবকদের নানামুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বেকারদের হতাশার জীবনের চাকা ঘুরিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়ে দিয়েছে। বদলে দিয়েছে জীবনমান। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান বলছেন, দেশের উন্নতি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি সাধনে সরকারের ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশ এবং রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী দেশকে সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ উন্নত দেশে পরিণত করার অংশ হিসেবেই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে গাজীপুর জেলা পরিষদ। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ শ্রেণির জেলা গাজীপুর। এর পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জেলা হিসেবেও পরিচিত। এই জেলার বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার লক্ষ্যে জেলা পরিষদ জীবনমান উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালা করছে নিয়মিত। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কম্পিউটার বেসিক প্রশিক্ষণ, অনলাইন আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ, সেলাই, ব্লক, বাটিক, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, ইলেকট্রিক্যাল ও ওয়েডিং প্রশিক্ষণ, লেদার টেকনোলজি, গার্মেন্ট মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে নানা ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে। ২০১১ হতে ২০১৯ পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে জেলা পরিষদ। তাদেরই একজন প্রতিবন্ধী যুবক তারেক মাহমুদ অপু। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) জামিল আহমেদ জানান, গাজীপুরের নয়াপাড়া এলাকার প্রতিবন্ধী যুবক তারেক মাহমুদ অপু। প্রতিবন্ধী এই যুবক মাস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করে চাকরি না পেয়ে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় এক বন্ধুর মাধ্যমে অপু জানতে পারে গাজীপুর জেলা পরিষদ বিনামূল্যে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়। বন্ধুর কাছে খবর পেয়ে জেলা পরিষদের ওয়েব ডিজাইন প্রশিক্ষণ কোর্সটি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সম্পন্ন করেছে। তারপর নিজ বাসায় কিছু কিছু অনুশীলনের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে ওঠে। এরপর তিন-চার মাস চেষ্টা করার পর ফ্রিল্যান্সার ডটকম মার্কেট সাইডে ৫০ হাজার ডলারের একটা ওয়েব ডিজাইনের কাজ পেয়ে যায়। সেই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। পরবর্তীতে সেখান থেকে আরো কিছু কাজ পায় এবং এভাবেই উপার্জন করতে সক্ষম হয়। এই প্রতিবন্ধী যুবক অপু এখন প্রতি মাসে প্রায় আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ ডলারের মতো উপার্জন করে, যা বাংলাদেশি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারলে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবে বলে অপু বিশ্বাস করে। ভবিষ্যতে চাকরি না করে, ঘরে বসে স্বাধীনভাবে আয়-উপার্জনের মাধ্যমে নিজেকে অবশ্যই স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার আশা করছে এই প্রতিবন্ধী। একই সঙ্গে একটা বড় প্ল্যাটফরম তৈরি করে দেয়ার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে গাজীপুর জেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামানকে।
মাত্র দু’বছর আগে রিয়া গাজীপুরের জেলা পরিষদ কম্পিউটার থেকে বেসিক অনলাইন সোর্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কাজ শুরু করে এবং বিভিন্ন সাইট থেকে অর্ডার গ্রহণপূর্বক আয় করতে থাকে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছে রিয়া। বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে রিয়া আয় করছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি রিয়া একটি কলেজে একাউন্টিং বিভাগে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। রিয়া শুধু অর্থ উপার্জন করছে না। পাশাপাশি অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। রিয়া মনে করছে, দেশের বোঝা না হয়ে ভবিষ্যতে কোনো প্রকার চাকরি না করে ঘরে বসে স্বাধীনভাবে আয় উপার্জনের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ রয়েছে। নগরের জাঝর এলাকার মনিরা আক্তার ঝর্ণা গাজীপুর জেলা পরিষদ থেকে বিনামূল্যে মৌ চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বর্তমানে একটি বিউটি পার্লারের পাশাপাশি মধু চাষ ও বাজারজাত করে মাসে পনের হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। জেলা শহরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকার বাসিন্দা নুসরাত জাহান তামান্না জেলার একটি কলেজের একাউন্টিং বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নুসরাত জাহান জেলা পরিষদ থেকে প্রথমে ২ মাসব্যাপী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ এবং পরবর্তীতে অনলাইন আউটসোর্সিং সংক্রান্ত ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সফলভাবে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে বাসায় বসেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ শুরু করে এবং বিভিন্ন সাইট থেকে অর্ডার এনে স্বাধীনভাবে কিছু আয় করতে থাকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি আয় করছে। এখন আর তাকে পিতা-মাতার কাছ থেকে কোন টাকা নিতে হচ্ছে না। এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে নুসরাত জাহান তামান্না। এমন সফল গল্প রয়েছে হাজারো মানুষের। যার পেছনের কারিগর হলেন জেলা পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আক্তারউজ্জামান। তিনি জানান, শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত অসচ্ছল যুব মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য জীবনমান উন্নয়ন ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সাল হতে বিভিন্ন ট্রেডে জেলা পরিষদ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। এসব কর্মসূচির আওতায় কম্পিউটার বেসিক প্রশিক্ষণ, অনলাইন আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ, সেলাই ব্লক বাটিক, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ও ওয়েল্ডিং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি অনলাইনে অর্থ উপার্জন করে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করছে। যুবক যুবতীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সন্ত্রাস মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য আমাদের রয়েছে, হাজার হাজার যুবক ও যুব মহিলাদের বিভিন্ন ট্রেডে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে গাজীপুর জেলা পরিষদ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status