বাংলারজমিন

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সেবার সঙ্গে ওষুধ ফ্রি

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ থেকে

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৭:০২ পূর্বাহ্ন

চিকিৎসা সেবা দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিদিন আউটডোর, ইনডোর ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস মিলে গড়ে ৯ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে ১০০% ওষুধ, স্বল্প ফি’তে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে হাসপাতালটি। রোগীদের কল্যাণে বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ২০১৭ সালে ১৯ নভেম্বর ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয় এই হাসপাতালে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস সারা দেশের একটি মডেল। সেবা পেয়ে রোগীরা শতভাগ সন্তুষ্ট। পাশাপশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে বহুগুণ। অনেকগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলে মানুষ শতভাগ সুচিকিৎসা পাচ্ছে। যার নেতৃত্বে এত বড় সফলতা এসেছে তিনি হচ্ছেন হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদ। বিগত ৪ বছরে তিনি দিনরাত শ্রম, ত্যাগ স্বীকারের ফলে হাসপাতালটি আজ এই পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। ভালো মানের চিকিৎসা প্রদানের ফলে কিছু বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে কর্র্তৃপক্ষকে। ভালো চিকিৎসা পাওয়ায় মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ।  ফলে সেবা দিতে সীমিত ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান ও কর্মকর্তা কর্মচারীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ২ কোটি মানুষের একমাত্র শেষ ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। এ ছাড়া গাজীপুর ও সুনামগঞ্জ জেলার মানুষও চিকিৎসা নিতে আসে এই হাসপাতালে। ২০১৫ সালে ১লা নভেম্বর বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদ যোগদান করেন। যোগদানের পর হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নে পরিকল্পনা শুরু করেন। তিনি বলেন, দেশের অন্যতম ৩টি হাসপাতালের মধ্যে একটি এই হাসপাতাল।

পরিকল্পিতভাবে পরিকল্পনা করা এটার পিছনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে লেগে থাকার সার্বক্ষণিক তদারকি সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতার ফলে এই মান অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এটি দলগত প্রয়াস ছিল। একক কোনো ব্যক্তির কৃতিত্ব নেই। হাসপাতাল পরিচালক জানান, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে গড়ে ৩ হাজারের অধিক রোগী ভর্তি থাকছে। এ ছাড়া হাসপাতালের আউডোরে প্রায় ৬ হাজার ও ওয়ানস্টপ সার্ভিসসহ জরুরি বিভাগে আরো প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছে। এক হাজার শয্যার অনুমোদিত লোকবল দিয়ে বাড়তি এসব রোগীর চাপ সামাল দিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরা। তারপরও ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের আন্তরিকতার ফলে হাসপাতালের সেবাদান কার্যক্রম ও অগ্রযাত্রার জন্য দেশসেরা হাসপাতালের মর্যাদা লাভ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল। সর্বশেষ গত ২০১৮ সালে প্রসূতি সেবায় বিদ্যমান কার্যক্রমের জন্যও পুরস্কার লাভ করে হাসপাতালটি। নামমাত্র ফিতে পরীক্ষাসহ বিনামূল্যের শতভাগ ওষুধ পেয়ে খুশি রোগীরা। এসবের পাশাপাশি আধুনিক মানের এমআরআই ও সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন, হেমোডায়ালাইসিস মেশিনে কিডনি রোগীদের সেবা, থ্যালাসেমিয়া, চক্ষু রোগীদের আধুনিক পরীক্ষার মেশিন সংযোজন এবং হৃদ রোগীদের জন্য বহুল প্রত্যাশিত ক্যাথল্যাব স্থাপন প্রক্রিয়াধীন বলে জানান পরিচালক। নিউরো সার্জারি ও ইউরোলজিসহ বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি সংযোজন রোগীদের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়েছে বলে জানান পরিচালক।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, বর্তমান পরিচালকের নানামুখী ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে হাসপাতালের রাজস্ব আয় বেড়েছে বহুগুণ। গত ২০০৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভর্তি, টিকিট, এম্বুলেন্স, কেবিন ও পেয়িং বেড ভাড়াসহ অপারেশন চার্জ ও টেস্টের ফি নির্ধারণ করে দেয়। এসব খাত থেকে আদায় করা অর্থ ইউজার ফি হিসেবে জমা হয় সরকারি কোষাগারে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ইউজার ফি থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেলের রাজস্ব আয় ছিল ৪ কোটি ২৯ লাখ ৩৭৩ টাকা, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয়  ৪ কোটি ৭২ লাখ ৯৪ হাজার ১৬৬ টাকা, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল ৬ কোটি ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৩ টাকা। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই আয় ছিল ৮ কোটি ৩১ লাখ ১৪ হাজার ৭৯১ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই আয় ছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ ৯৮ হাজার ৬২৫ টাকা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক লাফে এই রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ টাকা।

মুক্তাগাছার চেচুয়ার রঘুনাথপুর গ্রামের আঃ মান্নান (৬৫) বলেন, হাতের আঙ্গুলের অপারেশন করতে হাসপাতালে এসেছেন। ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। শহরের জেলাখানা রোড গলগণ্ডার মো. নজরুল ইসলাম (৫২) বলেন, ডায়বেটিকসহ নানা সমস্যা নিয়ে দেড় মাস ধরে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের ১০০% ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পেয়ে সে অনেক খুশি। গরিব লোকদের চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতাল অনেক উপকার করছে। হাসপাতালের ১নং গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি সদরের টান কাতলাসেন নুরজাহান বেগম (২৫)। সিজারে সন্তান হয়েছে। তার শ্বশুর আঃ গনি জানান, হাসপাতালে তার চিকিৎসা বাবদ কোন খরচ হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব হাসাপাতাল থেকে দিচ্ছে। ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। একই ওয়ার্ডে ভর্তি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা আগত  কাকলী (২৫) তার সিজারে বাচ্চা হয়েছে। কোনো চিকিৎসা খরচ লাগেনি। অনেক ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। হাসপাতালের পরিচালক, ডাক্তার ও নার্সদের কাছে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মাত্রাতিরিক্ত রোগীর জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। এক্সরে, অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিয়াল দিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া ৪তলা বিশিষ্ট পুরাতন ২টি ভবনের ৮টি ওয়ার্ড সংস্কার কাজের জন্য ভর্তিকৃত রোগীদের স্থানাভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর জন্য হাসপতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। বহির্বিভাগে একজন ডাক্তারকে ১৫০-২০০ পর্যন্ত রোগী দেখতে হয়। ৬ ঘণ্টায় এত রোগী দেখা ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানান, জনগণের দেয়া ১০%  সার্ভিস চার্জ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ১৬ ডাক্তারসহ ১৩১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়েছি। এতেও সামাল দেয়া কঠিন হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status