অনলাইন

প্রায় ১ মাস রিজার্ভ চুরির তথ্য গোপন রাখেন আতিউর রহমান

অনলাইন ডেস্ক

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ১:৪০ পূর্বাহ্ন

রিজার্ভ চুরির তথ্য প্রায় এক মাস গোপন করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আতিউর রহমান। দেশের বাইরের একটি সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেন।  রিজার্ভ চুরির বিষয়টি গোপন করাকে অযৌক্তিক, গর্হিত অপরাধ এবং অসদাচরণ বলে মন্তব্য করেছে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটি বলেছে, এসব গুরুতর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও নির্লিপ্ততা সত্যিই বিস্ময়কর। খবর প্রথম আলো’র।

রিজার্ভ চুরি হয়েছিল ২০১৬ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নিশ্চিত হয় ৬ঠা ফেব্রুয়ারি দুপুরে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী কাউকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম তথ্য গোপনের বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে ৬ই ফেব্রুয়ারি। অর্থ চুরির ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পরে ওই দিন দুপুরে তিনি বিষয়টি গভর্নর আতিউর রহমানকে জানান এবং থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে জিডির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে পাঠানোর জন্য বলেন তিনি। কিন্তু গভর্নর এই পরামর্শ আমলে না নিয়ে তাকে জানান, জিডি করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা হয়রানির শিকার হবেন এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। আর অর্থমন্ত্রী কোথায় কী বলে ফেলেন ঠিক নেই। এমনকি অভ্যন্তরীণ তদন্তও গোপনে করার জন্য তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

তৎকালীন গভর্নরের এই আচরণকে দায়িত্ব জ্ঞানহীন উল্লেখ করেছে ফরাসউদ্দিন কমিটি। তদন্ত কমিটি বলেছে, স্বাধীনতার ৪৪ বছরে ১২ জন অর্থমন্ত্রী ও ১০ জন গভর্নর কাজ করেছেন। অর্থমন্ত্রী-গভর্নর মতান্তর, এমনকি মনান্তর আগেও ঘটেছে। তবে এবার এটি যেভাবে দ্বন্দ্বে রূপ নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছে, তা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত, অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এবং দেশের সুশাসন ও সুনামের জন্য মারাত্মক নেতিবাচক।’

যদিও এ বিষয়ে ওই কমিটির কাছে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আতিউর রহমান জানিয়েছেন, তার বন্ধু ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আমান্দো এম তেরেঙ্গার সঙ্গে রিজার্ভ চুরিরি বিষয়ে তিনি টেলিফোনে কথা বলেছেন। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর তাঁকে বলেছেন, জানাজানি হলে অপকর্মকারীরা পালিয়ে যাবে; বরং গোপন থাকলে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে।

একজন বিদেশি কর্তৃপক্ষের পরামর্শ ও অনিশ্চিত আশ্বাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিষয়টি কোনো আইনানুগ কর্তৃপক্ষকে, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। ২৯শে ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের দ্য ইনকুয়ারার পত্রিকায় বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ১লা মার্চ গভর্নর গোয়েন্দা সংস্থাকে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠান এবং ৭ই মার্চ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

সরকারকে না জানানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা পেতে আতিউর রহমানকে কমিটির সঙ্গে  সাক্ষাতের অনুরোধ করেছিল ফরাসউদ্দিন কমিটি। কিন্তু ‘মিডিয়া তাঁর ওপর চড়াও হয়ে যাবে, তাই বাসভবনের বাইরে তিনি যেতে চান না’ এই কারণ দেখিয়ে তিনি সাক্ষাত করেননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status