দেশ বিদেশ

সিলেটের ক্বীন ব্রিজকে ঐতিহ্যের মর্যাদা দিতে নাগরিকবন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

অবিলম্বে ক্বীন ব্রিজকে ঐতিহ্যের মর্যাদা দিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও জালালাবাদ পার্কের উঁচু প্রাচীর ভেঙে, দৃশ্যমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সিলেট নগরে নাগরিকবন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের যৌথ উদ্যোগে ক্বিন ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে এ নাগরিকবন্ধনের আয়োজন করা হয়। নাগরিক বন্ধনে বক্তারা সিলেট শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে ও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ক্বীন ব্রিজকে সংরক্ষণ করার দাবি জানান। এ ছাড়াও ব্রিজ সংলগ্ন জালালাবাদ পার্কের উঁচু প্রাচীর ভেঙে পার্কে আগত মানুষজনের দৃশ্যমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। নাগরিকবন্ধনের শুরুতেই কর্মসূচির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আবদুল করিম কিম। তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে শাহজালাল সেতু উদ্বোধনের পূর্ব পর্যন্ত দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে সিলেট নগরীতে প্রবেশের সমস্ত ধকল ক্বীন ব্রিজকে একা সহ্য করতে হয়েছে। বিগত ৩৫ বছরে সুরমা নদীতে ভিন্ন আরো চারটি ব্রিজ তৈরি হয়েছে। এখন ব্রিজটিকে ঐতিহ্য হিসেবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা উচিত। পদচারী সেতু হিসেবে এই ব্রিজের ব্যবহার শুরু করায় বাপার পক্ষ থেকে তিনি সিলেট সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি ক্বীন ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন জালালাবাদ পার্কের অপরিকল্পিত উঁচু বেষ্টনী নির্মাণ করায় সিটি করপোরেশনের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, সিলেট শহরের একমাত্র পার্কটিকে উঁচু বেষ্টনী দিয়ে কারাগার বানিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারণে ভ্রমণার্থীদের পার্কের ভেতরে প্রবেশ করতে অনীহা। ভেতরে অসামাজিক কার্যকলাপ হওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে জালালাবাদ পার্কের উঁচু প্রাচীর ভেঙে পার্কটি দৃশ্যমান নতুন বেষ্টনী দিতে হবে। বাপার এই দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সভাপতির বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই ক্বিন ব্রিজ আমাদের সিলেটের ঐতিহ্য। তাই এই ব্রিজ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। এখন পায়ে চলাচলের জন্য এই ব্রিজ উন্মুক্ত আছে। কিন্তু রাতে ব্রিজের নিচে মাদক সেবীদের আড্ডা থাকে। তাদের কারণে পথচারীরা ছিনতাইসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই কিছু বিষয়ে মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্রিজ ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জালালাবাদ পার্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, এত সুন্দর একটি পার্ক অথচ এখানে কোনো মানুষ ভয়ে প্রবেশ করে না। এর মূল কারণ এই পার্কের উঁচু দেয়াল। এই দেয়ালের কারণে এই পার্ককে জেলের মতো মনে হয়। তাই এই পার্কটিকে সচল করতে পার্কের টাইম শিডিউল ঠিক করা ও উঁচু দেয়াল ভেঙে পার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেষ্টনী তৈরি করতে হবে। এই দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার আজীবন সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল। তিনি বলেন, লন্ডনের টেমস নদীর বুকে টাওয়ার ব্রিজ, লন্ডন ব্রিজ ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজ, ওয়াটারলু ব্রিজ একদিকে যেমন বৃটিশদের ঐতিহ্যের সাক্ষী অপরদিকে এসব ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বিশ্ব থেকে প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন পর্যটক যান। ফলে এ ব্রিজগুলোকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প যেমন বিকশিত হয়েছে তেমনি এখানে সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য। যেখানে বৃটিশ সরকার বিলিয়ন পাউন্ড আয় করে থাকে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় সিলেটের ক্বিন ব্রিজ শুধু সিলেটের ঐতিহ্যের সাক্ষী না এটা সিলেটের পর্যটন শিল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের অংশ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর হাসান বলেন, ক্বিন ব্রিজ সিলেটের প্রাইড। এই ব্রিজকে হেরিটেজ হিসেবে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। নাগরিকবন্ধনে আরো বক্তব্য দেন সাংবাদিক নেতা শাহ মুজিবুর রহমান জকন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল মুনির, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল বাসিত শেরো, গণজাগরণ মঞ্চ-সিলেট এর মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু, উদীচী মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাফিজ চৌধুরী ইমু, বাপা সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, সেইভ হেরিটেজ এন্ড এনভায়রনমেন্ট-এর সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী, ব্রতচারী সংগঠক বিমান তালুকদার, পরিবহন নেতা আবদুস সাত্তার মামুন, জেলা মোটর মালিক সমিতির সদস্য সোহেদুল হক দারা। আরো উপস্থিত ছিলেন, শ্রমিক নেতা আবদুল আহাদ, নূর ইসলাম, মুরাদ আহমদ, খোকন আহমদ, চান মিয়া, রফিক মিয়া, ফরহাদ হাসান প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status