বাংলারজমিন

ব্যথানাশক ট্যাবলেটই এখন ‘গরিবের ইয়াবা’

রফিকুল ইসলাম, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) থেকে

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:০২ পূর্বাহ্ন

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যথানাশক ট্যাবলেটের চাহিদা ব্যাপকভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে ৫০, ৭৫ ও ১০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেটের পাতা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব ধরনের ব্যথানাশক ট্যাবলেটের ব্যাপক চাহিদা নেই। বেশ কিছু ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের মার্কেট ধরে রাখতে কৌশল অবলম্বন করে ব্যথানাশকের নাম করে নেশা জাতীয় ক্যাপেইন দিয়ে তৈরি ট্যাবলেট বাজারজাত করে থাকে। এসব ওষুধ সেবন করলে ব্যথার পাশাপাশি ঘুম ও নেশার চাহিদা মেটায়। এটি মার্কেটিং অফিসারদের মাধ্যমে গোপনে ওষুধের দোকানগুলোতে প্রচার-প্রচারণা চালায়। তারপর দোকানের মালিক-কর্মচারী রাতারাতি বিত্তবান হওয়ার স্বপ্নে অতি লাভের আশায় সরবরাহ করে সেবনকারীদের মাঝে। যা দিনের পর দিন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ সুবাদে ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাকগুলোর পাশাপাশি এসব নেশা জাতীয় ব্যথার ট্যাবলেট দোকানগুলোতে ব্যাপকভাবে বাজারজাত করে আসছে। প্রশাসনের তৎপরতায় ইয়াবা-হেরোইন-ফেনসিডিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প দামের এসব ট্যাবলেট বর্তমানে মাদকসেবীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন নামে এ জাতীয় ট্যাবলেট ছেড়েছে। দিনের চেয়ে রাতে এর চাহিদা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ওষুধের দোকানগুলোতে মাদকসেবনকারীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। অপরদিকে সন্ধ্যা হলেই পান-সিগারেটের দোকানের আংপাত সেবনকারীদের জন্য উধাও হয়ে যায় নির্মিষেই বলে একাধিক পান ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজারহাট বাজারের থানা মোড়, সোনালী ব্যাংক চত্বর, চৌরাস্তা মোড়, রাজারহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায়, নাজিমখান বাজার, নাককাটিরহাট, সিংগারডাবরীহাট, ফরকেরহাট, টগরাইহাটসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ওষুধের দোকানে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওইসব ওষুধ দেদারছে বিকিকিনি হচ্ছে। নেশাজাতীয় ট্যাবলেট কিনতে আসা একাধিক সেবনকারী জানান, প্রশাসনের কঠোর তৎপরতায় বাজারে ইয়াবা সংকট। দামও অনেক চড়া। তাই গরিবের ইয়াবা হিসেবে টাপেন্টা, লোপেন্টা, পেন্টাডল ও সিনটা বিকল্প নেশা হিসেবে ব্যবহার করছি। এরমধ্যে শুধু লোপেন্টাতে হুবহু হেরোইনের স্বাদ পাওয়া যায়। বাকি সব ট্যাবলেটে ইয়াবার মতো নেশা হয়। এ ট্যাবলেট সেবনে ঘুম ভাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের ফিলিংস পাওয়া যায়। রাজারহাট বাজারের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, ইদানিং উপজেলায় মাদক সেবীদের কাছে ব্যথানাশক ট্যাবলেট ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাদক সেবীদের শতকরা ৬০-৬৫ ভাগই এখন ব্যথা নাশক ট্যাবলেটে আসক্ত। বেশি চাহিদার কারণে এসব ট্যাবলেটের খুচরা মূল্য ২৫-৩০ টাকা হলেও প্রতিপিচ ৮০-১০০ টাকা দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ইয়াবা প্রতিপিস ২০০-৩০০ টাকা, গাঁজা ১০০-২০০ টাকা প্রতি পুরিয়া ও ফেনসিডিল প্রতিটি ৮০০-১০০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, নিয়মিত এসব ব্যথানাশক ওষুধ সিগারেট বা আংপাতে পুড়িয়ে ব্যবহার করে ধোঁয়া টানলে মস্তিষ্কে সমস্যা, কিডনির সমস্যা, মাইগ্রেন, হাড়ক্ষয়, হাইপারটেনশন হতে পারে। রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ কৃষ্ণ কুমার সরকার বলেন, এসব ট্যাবলেট নেশা হিসেবে ব্যবহার করা হয় তা জানতাম না। প্রেসক্রিপসন ছাড়া যেন বিক্রি না করতে পারে, সেজন্য ওষুধ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হবে।




   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status