ফেসবুক ডায়েরি

জাবির সাহসী সাংবাদিকেরা

মারুফ মল্লিক

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ২:১২ পূর্বাহ্ন

ক্যাম্পাস রিপোটিং-এ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা বরাবরই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সংবাদ প্রকাশ করতে কখনও দ্বিধাবোধ করেনি জাবির সাংবাদিকরা। জাবিতে সাংবাদিকতা বিভাগ ছিল না। যারা কাজ করতেন তারা সবাই নিজ থেকেই সাংবাদিকতায় আসতেন। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগ কিছুদিন হয় শুরু হয়েছে। কিন্তু এর আগে থেকেই জাবির রিপোর্টাররা দক্ষতার ছাপ রাখছেন।

১৯৯৮ সালে ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশ থেকে হালের ২ কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারার সংবাদ; সবই আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংবাদ। ধর্ষণের সংবাদ প্রথম প্রকাশ হয়েছিল মানবজমিন পত্রিকায়। ওইদিন সারা ক্যাম্পাসে মানবজমিনের কোনো কপি পাওয়া যায়নি। দরোজা, জানালা বন্ধ করে চুপি চুপি পড়তে হয়েছিল মানবজমিন। জাফরি কোত্থেকে যেন এক কপি মানবজমিন নিয়ে এসেছিল। রাতের বেলা ভাসানী হলের ৪৩৮ নম্বর রুমে গরমের মধ্যে দরোজা জানালা সব সেটে নিয়ে আমরা সেই সংবাদ পড়েছিলাম। এমনটি পড়ার সময় আমরা জোরে জোরে শ্বাস নিতেও ভয় পাচ্ছিলাম যে, যদি কেউ তাতে জেনে যায়। এবার বুঝে নিন ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি তখন কেমন ছিলো। এইরকম পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয় ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের।

এইবার ২ কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারার সংবাদ প্রকাশ করে প্রথমে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও পরে  ডেইলি স্টার। এখনও প্রতিবেদকরা খুব ভালো নেই। খোদ ভিসি অফিসে শিক্ষকরা সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছেন। আগে ছাত্রলীগের বা ছাত্রদলের ক্যাডাররা হুমকি দিতেন। এখন শিক্ষকেরা দেন। এই যা পরিবর্তন।

যাই হোক এরপরের ইতিহাস এখন সবার জানা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ হারিয়েছেন। ভিসি এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সবারই দুর্নীতির অভিযোগ এখন প্রকাশিত।

জাহাঙ্গীরনগরের প্রতিনিধিদের প্রকাশিত সংবাদ জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জাবি একটা উদাহরণ। প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও সদিচ্ছা ও সাহস থাকলে সংবাদ প্রকাশ করা সম্ভব। সাংবাদিক পেশাই ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। যারা ঝুঁকি নিতে ভয় পান তাদের জন্য সাংবাদিকতা না। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা একজন প্রতিবেদকের আরাধ্য থাকে আজীবন। এটাই সাংবাদিকতা। এছাড়া ইনি বলেন, তিনি বলেন, উনি আরো জোর দিয়ে বলেন টাইপের সংবাদ প্রকাশ কোনো সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না। পিআর কমিউনিকেশন হয়ে যায় বড়জোর। আমি মনে করি জাবির ওইসব প্রতিবেদকদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে নিয়ে লেকচারের আয়োজন করা উচিত। তাদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের শোনা উচিত কিভাবে ঝুঁকি ও চাপকে মোকাবেলা করতে হয়।

আমিও প্রতিবেদক হিসাবে কাজ করেছি জাবিতে। হুমকি-ধমকি কি জিনিস আমি জানি। দুইবার  শোকজ নোটিশ পেয়েছি। তবে জাবি প্রতিনিধি পরিবারের একজন হতে পেরে ভালো লাগছে।

পরিশেষে, আতিক ভাই ও আসাদকে অভিনন্দন। ২১ বছরের ব্যবধানে দুইজন একই সামন্তরালে অবস্থান করছেন। ইতিহাস এই দুইজনকে মনে রাখবে।

(লেখক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও সাংবাদিক, লেখাটি বিশ্বদ্যিালয়ের ক্লোজড ফেসবুক গ্রুপ ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’-এ প্রকাশিত)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status