শেষের পাতা

ইকোনমিস্টের রিপোর্ট

বিকেন্দ্রীকরণে বাধা দিচ্ছেন এমপিরা

মানবজমিন ডেস্ক

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

গত ১২ই সেপ্টেম্বর লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট লাইফ আফটার ঢাকা শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছেপেছে।
প্রতিবেদনটি হলো-শিল্প অঞ্চল, আবাসিক উন্নয়ন, ক্লিনিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা আছে তার। তিনি মংলার মেয়র। শহর সমপ্রসারণে মেয়রকে কিছুটা উচ্চাভিলাষী বলেই মনে হচ্ছে। মংলায় মাত্র ৪০,০০০ মানুষ রয়েছে; তার অফিস একটি ভেঙে পড়া ভবনে, সেটি বন আচ্ছাদিত। তবে আগামী পাঁচ বছরে মেয়র জুলফিকার আলী জোর দিয়েই বলছিলেন, মংলা একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হবে, যেখানে দ্রুত শিল্পায়নের ফলে হাজার হাজার অভিবাসীর থাকার ব্যবস্থা হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার কারণে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে, আর সেটাও শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করবে। (ইতিমধ্যে, সমুদ্র আশেপাশের নিম্ন বদ্বীপ অঞ্চল খেয়ে চলেছে।) ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমি প্রস্তুত থাকতে চাই,’ তিনি বলেছেন।
১৯৭৪ সালে মাত্র ৯% বাংলাদেশি নগর বা শহরে বাস করতেন। আজ দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩৭% লোক শহুরে। আগামী কয়েক দশকে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শহরে বাস করবে। রাজধানী ঢাকা বেশিরভাগ গ্রামীণ অভিবাসীদের আকৃষ্ট করে। ১৯৮০ সালের ৩০ লাখ আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখে।
এটি ‘ইতিমধ্যেই বিস্ফোরণোন্মুখ।’, মন্তব্য করেছেন সলিমুল হক। অভিবাসীদের সহায়তা করার জন্য মংলাসহ ৮টি জায়গায় শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর চেষ্টা করার কাজে নিয়োজিত একটি থিংক ট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত তিনি।
ঢাকায় শ্রমিকের চাপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে। গত এক দশক ধরে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি সাড়ে ছয় ভাগ। দেশের মোট জিডিপির ৩৫ ভাগই ঢাকার অবদান। ক্রমবর্ধিষ্ণু গার্মেন্ট শিল্প থেকেই আসছে ১১ ভাগ জিডিপি। গার্মেন্টে বিপুলসংখ্যক অভ্যন্তরীণ অভিবাসীকে ধারণ করছে।
তবে প্রবৃদ্ধি এসেছে একটি চড়া দামে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দ্বারা সংকলিত একটি সূচি অনুসারে, ট্র্যাফিক জ্যাম ও দূষণের জন্য কুখ্যাত ঢাকা
বিশ্বের তৃতীয়-স্বল্পতম বাসযোগ্য শহর। আর একটি থিংক ট্যাংক হলো সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস)। তাদের মতো অনুসারে প্রায় ৬০% বাসিন্দা অস্থায়ী কাঠামোয় বাস করেন। এই বস্তিবাসিন্দাদের অনেকেরই পরিষ্কার জল এবং স্যানিটেশন ব্যবহারের অভাব রয়েছে। এবং তারা উচ্ছেদের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।
এই পরিস্থিতিতে রোগগুলো বিশেষত জলবাহিত রোগগুলোর বিস্তার ঘটে। বেসরকারি সংস্থা আরবান পুওরের আবদুস শাহীন বলেছেন, ঘন ঘন অসুস্থতা, যা বস্তিবাসীদের কাজ থেকে বিরত রাখে এবং তা কার্যত তাদের দারিদ্র্যের ফাঁদে আটকে রাখে।
‘এটি অবশ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করে,’ তিনি যোগ করেন।
পরিবেশগত ব্যয়ও রয়েছে। প্রতিদিন ১১ লাখ ঘনমিটার আবর্জনা নদীগুলোতে পাম্প করা হয়। শহরটি নিকটবর্তী জলাভূমিতে প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
এই সমস্যাগুলো অত্যধিক কেন্দ্রীকরণ এবং উপেক্ষিত নগর পরিকল্পনার সংমিশ্রণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন আরবান স্টাডিজের নজরুল ইসলাম। গার্মেন্ট শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটলেও সরকার তার করণীয় সম্পর্কে অসচেতন থেকেছে। গার্মেন্ট কর্মীদের স্বল্প খরচে আবাসন বা পরিষেবা দেয়ার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি, তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বললেন।
প্রায় ৩০ বছর পরে, সরকার আর সমস্যাটিকে উপেক্ষা করছে না। ডিসেম্বরে টানা তৃতীয় ৫ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পল্লী থেকে অভিবাসন রোধ করার চেষ্টা করছে। গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে তারা বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটের অ্যাক্সেসসহ নগর অঞ্চলের মতো সমান সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছে।
বিকেন্দ্রীকরণও এজেন্ডায় রয়েছে। সরকার নতুন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তৈরি করছে। এবং তাদের উন্নয়নের জন্য আরও অর্থ প্রদান করছে। ঢাকার বাইরে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে, আগামী দশকে ১০০টি শিল্প অঞ্চল তৈরি করা হবে। এ বছরের শুরুর দিকে ১১টি উদ্বোধন করা হয়েছিল। মোংলা তার অন্যতম।
এদিকে ঢাকায় একটি মেট্রো সিস্টেম নির্মাণাধীন। রাজউক, শহরের পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ নগরটির উত্তর এবং পূর্ব অংশে সুশৃঙ্খল সমপ্রসারণ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক শহরের লাগোয়া চারটি দরিদ্র পাড়া-মহল্লায় পাবলিক স্পেস উন্নয়ন এবং পৌর পরিষেবাগুলো উন্নত করতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
তবে ঢাকা বা নতুন শিল্প অঞ্চলগুলোর আশেপাশে ব্যাপকভাবে সস্তা আবাসনের পরিকল্পনা তাদের নেই, রাজউকের পরিকল্পনাকারী মাহফুজা আক্তার মন্তব্য করেছেন। (মোংলার মেয়র এমন কিছু সস্তা আবাসন গড়তে চান। তবে তিনি এখনও সরকার অনুমোদন পাননি।)
তবে সংসদ সদস্য, যারা তাদের কর্তৃত্ব হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন, তারা বিকেন্দ্রীকরণ প্রতিরোধ করছেন। তবে যাই হোক, ইসলাম আশাবাদী। ঢাকা এতটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে, তিনি যুক্তি দেন, এখন এ থেকে বাঁচতে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করা ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status