প্রথম পাতা

ছাত্রলীগকে পদ না দেয়ায়...

রাশিম মোল্লা

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

মিটফোর্ড হাসপাতাল । প্রসব বেদনায় কাতর রাবেয়া ইসলাম। ঘণ্টা দু’য়েক সময়ের মধ্যেই সিজার শুরু হবে তার। স্বামী জাকির হোসেনকে চিকিৎসকরা জানান চার ব্যাগ রক্ত লাগবে  রাবেয়ার। আগে থেকেই দু’ ব্যাগ রক্ত রেডি ছিল। বাকী রক্ত হন্য হয়ে খোঁজা শুরু করেন জাকির। কিন্তু কোথাও মিলছেনা এক ব্যাগ রক্ত। হঠাৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর কথা মনে পরে তার। দ্রুত তিনি যান হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে সন্ধানী অফিসের সামনে। কিন্তু দেখেন অফিসে তালা। দরজার ওপরে মাকড়সার বাসা। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, আড়াই বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে সন্ধানী সংগঠনটির কার্যক্রম। নিরাশ হয়ে ফিরে যান জাকির। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই জাকিরের মতো কেউ না কেউ রক্তের প্রয়োজনে সন্ধানীর অফিসে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালে সব সময়ই রক্তের প্রয়োজন হয়। এই বিবেচনায় বেশির ভাগ হাসপাতালেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী কিংবা বাধঁনের শাখা রয়েছে। ১৯৭৭ সালে দেশের অন্যতম হাসপাতাল স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ট মেডিকেলে শুরু হয় সন্ধানীর কার্যক্রম। কিন্তিু গত আড়াই বছর ধরে ওই হাসপাতালে সন্ধানীর অফিসটিতে তালা ঝুলছে।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৫ই এপ্রিল সন্ধানীর কমিটিকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের সমর্থকরা সন্ধানীর অফিসে তালা সেঁটে দেয়। তাদের দাবি সন্ধানীর কমিটিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে পদ দিতে হবে। অন্যথায় এই মেডিকেলে সন্ধানীর কার্যক্রম চলতে দেয়া হবে না। তৎকালীন সন্ধানীর কর্মকর্তারা, তাদের গঠনতন্ত্রে দলীয় লোকজন কমিটিতে অন্তভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এ যুক্তি দেখেয়ে তারা ছাত্রলীগের কাউকে পদ দিতে অসম্মতি জানায়। সন্ধানীর এই কথায় ওই গ্রুপের নেতা কর্মীরা সন্ধানীর অফিসে তালা মেরে দেয়। এরপরের দিন ঝামেলার আশংকা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রিন্সিপাল রুমটিতে তালা মেরে দেন। সেই থেকে আজ অবধি বন্ধ হয়ে গেছে মিটফোর্ট হাসপাতালে সন্ধানী শাখার কার্যক্রম। অন্য আরেকটি সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের এক কর্মীকে সন্ধানীর সেক্রেটারি করার প্রস্তাব দেয় মেডিকেল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. অচিন্ত কুমার কীর্তনীয়া। কিন্তু সন্ধানীর তৎকালীন কর্মকর্তারা তাকে জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যিনি সন্ধানীর সভাপতি- সেক্রেটারি হবেন, তাকে কমপক্ষে তিনবার সন্ধানীর কার্যনির্বাহী কমিটির যে কোনো পদে দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেহেতু তিনি এখনো তিনবার কার্যনির্বাহী কমিটির দায়িত্ব পালন করেনি, সেহেতু তাকে সেক্রেটারি করা সম্ভব নয়। সন্ধানীর এ জবাবের পর ছাত্রলীগের সেক্রেটারি গ্রুপের নেতাকর্মীরা সন্ধানী অফিসে তালা মেরে দেন। এ ব্যাপরে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড শাখার ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. অচিন্ত কুমার কীর্তনীয় বলেন, আমার কোনো নেতাকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে সন্ধানীর অফিসে তালা দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল শাখার সন্ধানীর সাবেক নেতৃবৃন্দ ফায়দা লুটানোর জন্য অছাত্রদের সন্ধানীর কমিটিতে রাখা হতো। আর কমিটির ওই সব লোকজন নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করলেও তারা অরাজনৈতিক ছিল না। উল্টো তারা ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন গ্রুপের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ত। অপরদিকে মিটফোর্ড ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ডা. রাতুল শিকদার বলেন, সন্ধানীসহ সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম চালু থাকা দরকার। বন্ধ হওয়া সন্ধানীর কার্যক্রম ফের চালু করতে হলে তাদের রাজনৈতিক মুটিভ মুক্ত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সব ধনরেণর সহায়তা থাকবে। এ ব্যাপারে সন্ধানীর কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি মিনহাজুল ইসলাম হৃদয় বলেন, রাজনৈতিক কারণে সন্ধানী মিটফোর্ড মেডিকেল শাখায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে গত বছর প্রিন্সিপালের সঙ্গে কার্যক্রম চালৃুর অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলে আবার সন্ধানীর কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সন্ধানীর কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, সন্ধানী স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত একটি সংগঠন। আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত এই সন্ধানীর অফিসে তালা দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সংগঠনটির অফিস কোনো ভাবেই বন্ধ করা ঠিক হয়নি। সংগঠনটি থেকে প্রতিদিন ২০-২৫ জন দারিদ্র রোগী রক্ত গ্রহন করত। তবে প্রফেসর ডা. মো. বিল্লাল আলম বলেন, তিনি নিজে দুবার সন্ধানীর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কলেজের সন্ধানীর কার্যক্রম স্থগিত থাকায় তিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন। মূলত সংগঠনের নেতৃত্বে নিয়ে বিবাদমান ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের মধ্যে পদ নিয়ে মারামারি হয়। ক্যাম্পাসে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে এটিকে বন্ধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিবাদমান দুই গ্রুপ যদি গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি পদ সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে পারে তবে খুব দ্রুতই একাডেমিক কাউন্সিলে সন্ধানীর কার্যক্রম চালু করার জন্য উঠানো হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status