প্রথম পাতা

ডেঙ্গু রোগী কমছে ঢাকার বাইরে তিনজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে ১৫৬ জনে নেমে এসেছে। প্রায় আড়াই মাস পর ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমলো। একই সঙ্গে কমেছে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তবে এখনো প্রতিদিন ঢাকার বাইরে ভর্তি নতুন রোগীর সংখ্যা বেশি। একই সঙ্গে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গতকালও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ১৫৬ জন ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে নতুন ৩৭১ জনসহ সারা দেশে ৫২৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। গত ২৩শে জুলাইয়ের পর এই প্রথম সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫০০ জনের নিচে নামলো। আর এ মৌসুমে গত ২রা জুলাই সর্বশেষ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বনিম্ন ১৫৫ জন রোগী ভর্তির তথ্য রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম ও সর্বোপরি ব্যাপক গণসচেতনতার ফলে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই কমছে। তারা বলেন, তবে সে তুলনায় ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম কমছে। ঢাকাতে এডিস ইজিপ্টি প্রজাতির মশার কামড়ে আক্রান্ত হলেও ঢাকার বাইরে এডিসের ভিন্ন প্রজাতি অ্যালবোপিকটাস মশার কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন থেকে বছরব্যাপী সারা দেশে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালে মোট ৮০ হাজার ৫৬৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। বেসরকারি হিসাবে এটা কয়েকগুণ বেশি হবে। চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এ পর্যন্ত ২০৩ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তা পর্যালোচনার জন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে(আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটি ১০১টি মৃত্যু ঘটনা পর্যালোচনা করে ৬০ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত হয়েছে। এখনও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে।

ভেড়ামারায় ডেঙ্গু কেড়ে নিলো গৃহবধূর প্রাণ
ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে আরো এক গৃহবধূর প্রাণ। রওশন আরা নামের (৪৫) ওই গৃহবধূ ভেড়ামারা উপজেলার ঠাকুর দৌলতপুর গ্রামের মসলেম মালিথার স্ত্রী। স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ৬ দিনের মাথায় গতকাল ভোর ৬টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ নিয়ে ভেড়ামারা উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো তিনে। এর আগে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ধরমপুর ইউনিয়নের কাজিহাটা গ্রামের রায়হান আলীর স্ত্রী মিনা খাতুন এবং পরানখালী গ্রামের মাসুদ আলম লিটনের ছেলে সাঈদ (১০) মৃত্যুবরণ করে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নিহত রওশন আরার স্বামী মসলেম মালিথা জানিয়েছে, নিজবাড়ি থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় রওশন আরা। স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর প্রথমে ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে তারা রেফার্ড করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোর ৬টার দিকে মারা যায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, গত ৮ই সেপ্টেম্বর প্রথম ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত হয় রওশন আরার। এরপর ১০ই সেপ্টেম্বর তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হয়। রাজশাহীতে আসার পর তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সাধারণ ওয়ার্ড থেকে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি মারা গেছেন।

শিবচরে ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল যুবলীগ নেতার
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাদারীপুরের শিবচরের উদেপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. সেলিম মাদবরের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের রামরায়েরকান্দি গ্রামের লালমিয়া মাদবরের ছেলে। সেলিম গত ১০ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় পাসপোর্ট করতে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। পরদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তবে সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে তার লাশ গ্রামের বাড়ি আনা হয়। এ নিয়ে জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হলো। জানা যায়, উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. সেলিম মাদবর গত ১০ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিবচরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিন বুধবার তাকে পরিবারের লোকজন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার দিক তার মৃত্যু হয়।

সিরাজগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে নিলুফার ইয়াসমিন (৫৬) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয়। মৃত নিলুফার ইয়াসমিন সিরাজগঞ্জ শহরের রহমতগঞ্জ মহল্লার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী। নিহতের ছেলে সুমন জানান, বুধবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তার মা নিলুফার ইসলামকে শহরের বেসরকারি নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুদিন চিকিৎসা নেয়ার পর ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শুক্রবার রাতে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। রাতেই তাকে ঢাকার সিএমএইচে নেয়া হলে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. এম এম মাসুদ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনি বিভাগের সহকারি রেজিস্টার ডা. এস এম নাজিম ওয়াহিদ উল্লাহ জানান, নিলুফার ইয়াসমিনের রক্তে প্লাটিলেট একেবারে কমে যাওয়ায় তাকে ঢাকার সিএমএইচে রেফার্ড করা হয়েছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status