এক্সক্লুসিভ

দুদকের তদন্তে ফাঁসছেন কেজিডিসিএল-এর ১০ কর্মকর্তা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ৮:২৯ পূর্বাহ্ন

দুদকের তদন্তে ফাঁসছেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোমপানি লি. (কেজিডিসিএল)-এর ১০ কর্মকর্তা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, গুরুদণ্ড প্রদান, পদাবনতি ও একজনকে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
তথ্যমতে, কর্ণফুলী গ্যাসের নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয় তদন্তে নেমে দুদক জানতে পারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অন্য দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. ফিরোজ খান, উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) লুৎফুল করিম চৌধুরীসহ প্রায় ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আলাদা তিনটি মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

দুদক চট্টগ্রাম কার্র্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চাকরিচ্যুত ও বিভাগীয় শাস্তি পাওয়া কর্ণফুলী গ্যাসের মোট তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল কর্ণফুলী গ্যাস। প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রায় সবগুলো নথিতে সই করেছেন। তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার আজ্ঞাবহ কর্মকর্তাদের রোষানলের শিকার হয়েছেন এ তিন কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে জমা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কেজিডিসিএল-এ কর্মরত ছিলেন নিয়ামুল কবীর। দু’বছর আগে ২০১৭ সালের ২৯শে নভেম্বর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে তিনি নিজেও জানেন না কী কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুতির আগে তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। টার্মিনেশন লেটারেও চাকরিচ্যুতির কারণ উল্লেখ করা হয়নি। চাকরি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আর্থিক অনটনে পড়েছেন তিনি। ফলে চাকরি ফিরে পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

আরেক সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলামকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই ২০১৬ সালের ২৩শে অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাময়িক বরখাস্তের ৪২ দিন পর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তিনি নাকি জাতীয় স্বার্থ ও সংস্থার স্বার্থ পরিপন্থি কাজে লিপ্ত রয়েছেন। তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। কমিটিতে প্রতিষ্ঠানের উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) প্রকৌশলী শফিউল আজম খানকে আহ্বায়ক ও উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করা হয়।

তদন্ত কমিটির অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে বিবেচনায় না নিয়ে অনেকটা ইচ্ছেকৃতভাবেই ৩ মাস ২৫ দিন পর ২ বছরের গুরুদণ্ড দিয়ে তাকে স্বপদে বহাল করা হয়। ফলে তিনি ২৪ জন কর্মকর্তার জুনিয়র হয়ে পড়েন।

ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শফিউল আজম খান বলেন, আমরা সহকারী প্রকৌশলী  
কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটিতে ছিলাম। আমরা প্রশাসন বিভাগকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি এমনটাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলাম। পরে কী হয়েছে আমরা জানি না।

বুয়েটের ছাত্র আমির হামজা পেট্রোবাংলায় চাকরি নেন ১৯৯০ সালে। ২০১৬ সালের ১২ই জুন পেট্রোবাংলার একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৪শে আগস্ট আমির হামজাসহ ৫ জনকে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করে কেজিডিসিএল বোর্ড। ওই সময় আমির হামজার বিরুদ্ধে বিগত সময়ে কোনো বিভাগীয় অভিযোগ নেই বলে জানায় কেজিডিসিএল বোর্ড। পদোন্নতি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে মহাব্যবস্থাপক হওয়ার আশায় থাকা উপমহাব্যবস্থাপক আমির হামজাকে মাত্র ২৭ দিনের মাথায় ওই বছরের ২১শে সেপ্টেম্বর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না এমন অজুহাতে বরখাস্ত করা হয়। এর ৫ মাস পর উপমহাব্যবস্থাপক থেকে পদাবনতি দিয়ে ম্যানেজার হিসেবে চাকরিতে বহাল করা হয় তাকে।

এ বিষয়ে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. ফিরোজ খান বলেন, দুদকের কাজ হচ্ছে দুর্নীতি তদন্ত করা। প্রতিষ্ঠানে (কেজিডিসিএল) কিছু দুষ্ট লোক ছিল। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। এখানে দুদক যদি বলে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে। সেটা দুদকই বলতে পারবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status