উপজেলা-পৌর কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবি

তড়িঘড়ি করে মানিকগঞ্জের সাত উপজেলা ও দুই পৌরসভায় বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি  ঘোষণা করায় জেলাজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই কমিটিগুলোকে পকেট কমিটি হিসেবে আখ্যা দিয়ে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ কমিটির কয়েক নেতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে স্বয়ং জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ২৮ জন সদস্য। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এবং সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র কমিটি গঠন করার প্রতিবাদ ও সদ্য ঘোষিত কমিটি ভেঙে দেয়ার জন্য বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি’র কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন ওই ২৮ নেতা। এ ছাড়া জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির বড় একটি অংশসহ ২৮ জন নেতা গতকাল শনিবার দুপুরে আহ্বায়ক কমিটির কিছু নেতা কর্তৃক স্বেচ্ছাচারী কায়দায় সদ্যঘোষিত ৭টি উপজেলা এবং ২টি পৌরসভা কমিটি বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক  অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিশ মাখন ও যুগ্ম আহ্বায়ক তোজাম্মেল হক তোজা, সদস্য আব্দুল বাতেন, নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ যাদু, এসএমএম ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মেজবাউল হক মেজবা, অ্যাডভোকেট আরিফ হোসেন লিটন, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, আব্দুল কাদের, গোলাম রফি অপু, রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া হাবুসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।   নেতারা বলেন, ১১ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় বসে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জামিলুর রশীদ খান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান আতা, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন এবং সদস্য সচিব এস এ কবীর জিন্নাহসহ গুটিকয়েক নেতা স্বেচ্ছাচারী কায়দায় দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তি দিয়ে ৭টি উপজেলা এবং ২টি পৌরসভা পকেট কমিটি করেছে। বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা  বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আফরোজা খান রিতা ও বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট খোন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলুসহ সিনিয়র কোনো নেতা এমনকি বর্তমান জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির বড় একটি অংশের নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা এবং সাধারণ মিটিং না করেই রাতারাতি উপজেলা ও পৌরসভায় বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটিগুলো ঘোষণা করেছে। কমিটিকে পকেট কমিটি উল্লেখ করে   সেগুলো বাতিল করে ত্যাগী নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান।  
এ ছাড়া গত ১০ই সেপ্টেম্বর মানবজমিনে জেলা বিএনপি’র হালচাল নিয়ে একটি প্রতিবেদনের পর আলোড়ন সৃষ্টি হয় বিএনপি’র ভেতর। ওই প্রতিবেদনে উপজেলা ও পৌরসভায় বিএনপির কমিটিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। নেতারা শঙ্কা করেছিল তড়িঘড়ি করে উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলে দলের ভেতর বিরোধ ও দ্বন্দ্ব বেড়ে যাবে। শেষমেশ মানবজমিনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনই সত্য হয়েছে। এখন জেলা বিএনপি’র ভেতর অভ্যন্তরীণ বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই।  
এদিকে সদ্য ঘোষিত জেলার ৭টি উপজেলা ও দুটি পৌরসভায় বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি’র প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পুত্র বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খোন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু। তিনি মানবজমিনকে বলেন, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির জামিল, আতা এবং জিন্নাহসহ কিছু নেতা ঘরে বসে প্রত্যেকটি উপজেলায় এবং পৌরসভায় তাদের পছন্দের লোকজন দিয়ে একটি পকেট কমিটি গঠন করেছে। যা ঘরের মধ্যে বসে ঘর পোড়ার মতো। অদক্ষ ও অযোগ্য লোকজন দিয়ে গঠন করা পকেট কমিটিগুলো আমরা কোনোভাবেই মেনে নেবো না। ইতিমধ্যে দলের মহাসচিবকে লিখিত অবগত করা হয়েছে। আমরা চাই অদক্ষ ও অযোগ্য লোকজন দিয়ে যেসব উপজেলা ও পৌরসভায় বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে তা দ্রুত ভেঙে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় এমন কমিটি করা হোক। শুধু তাই নয়, জেলা বিএনপি’র বর্তমানে যে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে সেটাও ভেঙে দেয়ার জোর দাবি জানাই।