বিনোদন

বাংলার মুকুটবিহীন নবাবের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১২:১৯ অপরাহ্ন

তাকে বলা হয় বাংলার মুকুটবিহীন নবাব। খান আতার ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিটির নাম ভূমিকায় দাপুটে অভিনয় সুবাদে তিনি পরিণত হয়েছিলেন কিংবদন্তিতে। আর এ ছবির আগে ও পরে অসংখ্য ছবিতে নানামুখী চরিত্রে তার অভিনয় সমৃদ্ধ করেছে বাংলা চলচ্চিত্রকে। তিনি অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। সবার শ্রদ্ধার, সবার প্রিয় আনু ভাই অর্ধশতকেরও বেশি সময় বাংলা চলচ্চিত্রে সরব পদচারণার পর ২০১৩ সালের এই দিনে পৃথিবীর সব বন্ধন ত্যাগ করে পাড়ি জমান না-ফেরার দেশে। আজ এ কিংবদন্তির ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে  দোয়া মাহফিল, গরিব এতিম বাচ্চাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। আনোয়ার হোসেনের জন্ম জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে ১৯৩১ সালের ৬ই নভেম্বর। তার পিতা নাজির হোসেন ছিলেন জামালপুরের সাবরেজিস্ট্রার। শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের বেশ ক’বছর কেটেছে তার জামালপুরে। মূলত স্কুলজীবন থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। স্কুল জীবনে প্রথম অভিনয় করেন আসকার ইবনে সাইকের ‘পদক্ষেপ’ নাটকে। এরপর বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। ১৯৫১ সালে জামালপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি।


ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজে পড়াকালীন অনেক মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন। রাজনীতির সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলেন না তিনি। তবে ভাষা আন্দোলনের সময় আবুল মনসুর আহমেদের ছেলে মতলুব আনমের সঙ্গে তার উঠাবসা ছিল বলে সে সময় কিছুটা জড়িত হয়েছিলেন সেই আন্দোলনে। ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। সেই বছরই তিনি ঢাকা বেতারের নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। নাটকটির নাম ছিল ‘নওফেল হাতেম’। ঢাকায় আসার পরপরই তিনি নাসিমা খানমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সে বছরই পরিচালক মহিউদ্দিনের সহকারী মো. আনিস তার সঙ্গে আনোয়ার হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দেন। আর প্রথম পরিচয়েই আনোয়ার হোসেন অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন বলে তার ‘তোমার আমার’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। আর এটাই ছিল এ অভিনেতার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। যে ছবিতে অভিনয় করে সে সময় পারিশ্রমিক হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন ৩০০ টাকা। এরপর থেকে আনোয়ার হোসেন নিয়মিত ছবিতে অভিনয় করেছেন। ২০০৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত একজন বহুমাত্রিক অভিনেতা হিসেবে তিনি পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। আনোয়ার হোসেন অভিনীত প্রথম ছবি ‘তোমার আমার’ ১৯৬১ সালে মুক্তি পায়। ১৯৬৪ সালের ১লা মে তার অভিনীত ‘দুই দিগন্ত’ ছবিটি দিয়ে ঢাকার বলাকা প্রেক্ষাগৃহের শুভ উদ্বোধন হয়েছিল। আনোয়ার হোসেনের অভিনয় জীবনের শ্রেষ্ঠ ছবির মধ্যে ‘নবাব সিরাজদ্দৌলার পর জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ উল্লেখযোগ্য। রাজেন তরফদার পরিচালিত ‘পালঙ্ক’ ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন সন্ধ্যা রায়। তার অসাধারণ অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আনোয়ার হোসেন ১৯৭৫ সালে প্রবর্তিত প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ছবিগুলো হচ্ছে গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), দায়ী কে (১৯৮৭) এবং লালসালু (২০০১)। এছাড়াও বাংলা ভাষার প্রথম ডিজিটাল স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আই ২০০৯ সালে দ্বিতীয় ‘চ্যানেল আই’ চলচ্চিত্র মেলায় আনোয়ার হোসেনকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করে। সর্বশেষ ২০১০ সালে আনোয়ার হোসেনকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status