প্রথম পাতা

স্কটিশ আদালতের রায়

পার্লামেন্ট স্থগিতের ঘোষণা অবৈধ

মানবজমিন ডেস্ক

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

ব্রেক্সিট নিয়ে চরম নাটকীয়তার মুখে দাঁড়িয়ে বৃটেন। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্ট পাঁচ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে একদিন পরেই পার্লামেন্টের স্থগিতাদেশকে বেআইনি ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন স্কটল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত। গত মাসে পার্লামেন্ট স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতৃত্বে ব্রেক্সিট-বিরোধী ৭৮ এমপি আদালতে আবেদন করেছিলেন। এ মর্মে এডিনবার্গের কোর্ট অব সেশনের তিন বিচারক সর্বসম্মত রায় দিয়েছেন। তারা বলেছেন, পার্লামেন্ট স্থগিত করা অসাংবিধানিক। তবে আদালতের এমন ঘোষণার বিরুদ্ধে লন্ডন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে জনসন সরকার। আগামী মঙ্গলবার সেখানে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে। সেই শুনানির আগে পার্লামেন্ট স্থগিতের বিরুদ্ধে কোনো নির্দেশ দেয়নি ওই তিন বিচারকের বেঞ্চ।

লিখিত রায়ে বিচারকরা বলেছেন, আগামী ১৪ই অক্টোবর পর্যন্ত ওয়েস্টমিনস্টারের দরজা বন্ধ করতে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে প্রধানমন্ত্রী যে অনুরোধ করেছেন, তাতে রয়েছে পার্লামেন্টকে কোণঠাসা করার অনুচিত উদ্দেশ্য। এতে যা অনুসরণ করা হয়েছে তা বেআইনি। তারা বলেন যে, পার্লামেন্ট স্থগিত করার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল পার্লামেন্ট নির্বাহীদের সমালোচনা সীমিত করে দেয়া। যা সংবিধানের সুশাসনের মূলনীতির প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই পার্লামেন্ট স্থগিত করে দেন প্রধানমন্ত্রী। স্কটল্যান্ডের আদালতে তার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন করেন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির ৭৮ জন এমপি। দলটির এমপি জোয়ানা চেরি তাৎক্ষণিকভাবে পার্লামেন্ট সচল করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখতে বরিস জনসন ও জ্যাকব রিজ-মগসহ অন্যরা এই ষড়যন্ত্র করেছেন। যাতে তারা অননুমোদিত ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করলেও আমরা তাদের ভুল-ত্রুটি ধরতে না পারি। ব্রেক্সিটবিরোধী ব্যারিস্টার জলিয়ন মঘাম কিউসি আবেদনের একজন পিটিশনার। তিনি বিশ্বাস করেন, আদালতের এই সিদ্ধান্তের মানে হচ্ছে, পার্লামেন্ট আর স্থগিত নেই।

এর আগে পার্লামেন্টে আবারও পরাজিত হয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। আগাম নির্বাচন চেয়ে তার আনা দ্বিতীয় প্রস্তাবও পার্লামেন্ট প্রত্যাখ্যান করেছে। এরই মধ্যে দলের বিদ্রোহী ও বিরোধী লেবার পার্টির এমপিদের আনা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট আটকে দেয়ার বিলে সম্মতি দিয়েছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ফলে ওই বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় ৫ সপ্তাহের জন্য বৃটেনের পার্লামেন্ট স্থগিত করা হয়।

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর আগাম নির্বাচনের দ্বিতীয় প্রস্তাবে ভোটে দেয়া হয়। এর পক্ষে মোট ২৯৩ জন এমপি ভোট দেন। ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় ওই প্রস্তাব। এতে অটোমেটিকভাবে জনসনের আগাম নির্বাচনের প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। তিনি চেয়েছিলেন ১৫ই অক্টোবর আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। বিরোধীদলীয় এমপিরা নিশ্চিত করে দিয়েছেন যে তারা এই নির্বাচন চান না। উল্টো চুক্তিবিহিন ব্রেক্সিট আটকে দেয়ার বিরুদ্ধে যে আইনে অনুমোদন দিয়েছেন রানী, তারা চাইছেন সেই আইন অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী এর বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে বৃটেনের আইন বলে যে,  ব্রাসেলসের সঙ্গে কোনো চুক্তি হোক বা না হোক, আগামী ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে যেতে হবে বৃটেনকে। কিন্তু সোমবার নতুন প্রস্তাবে রাজকীয় অনুমোদন পাওয়ার পর সেই আইনে পরিবর্তন এসেছে। যদি কোনো চুক্তি করা সম্ভব না হয় অথবা চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের দিকে অগ্রসর হয় সরকার, তাহলে ২০২০ সালের ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট বিলম্বিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করতে পারবেন এমপিরা।

বিবিসির রাজনৈতিক সম্পাদক লরা কুয়েন্সবার্গ বলছেন, যদিও ১০ ডাউনিং স্ট্রিট বলছে তারা নতুন আইন লঙ্ঘন করবে না, তবু এই আইনের ফাঁকফোকর অথবা এর বিভিন্ন দিক যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পার্লামেন্টের এমন অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছেন, এই পার্লামেন্ট আমার হাতকে বেঁধে দেয়ার জন্য যত বেশি উপকরণই আবিষ্কার করুক না কেন, আমি জাতীয় স্বার্থে একটি চুক্তি করার জন্য চেষ্টা চালিয়েই যাবো। তবে এই সরকার কোনোভাবেই ব্রেক্সিট আর বিলম্বিত হতে দেবে না। আমরা আরো পক্ষাঘাত ও বিচ্যুতি দিয়ে ব্রেক্সিট গণভোটের রায়কে আস্তে আস্তে শ্বাসরোধ করতে অনুমোদন দিতে পারি না। এ সময় তিনি লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিনের সমালোচনা করেন। করবিন এর আগে বলেছিলেন, যদি ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট সম্পাদনে সরকারকে বাধা দেয়া হয় তাহলে আগাম নির্বাচন সমর্থন করবেন তিনি। তার এ বক্তব্য তুলে ধরে জনসন বলেন, তার নিজের যুক্তিতে এখন একটি আগাম নির্বাচন অনুমোদন অবশ্যই দেয়া উচিত তার। কিন্তু তা তিনি দেন নি। এর ফলে হাউজ অব কমন্সে ৬ বারের মতো পরাজিত হলেন বরিস জনসন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status