দেশ বিদেশ

আল-জাজিরার প্রতিবেদন

বৈদ্যুতিক শক, মারধর: কাশ্মীরে চলছে বাছবিচারহীন নির্যাতন

মানবজমিন ডেস্ক

১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৪ পূর্বাহ্ন

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলে থাকেন বশির আহমেদ দার। গত ১০ই আগস্ট তার বাড়িতে অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে দুই দফা প্রচণ্ড মারধর করে সেনারা। ৫০ বছর বয়সী বশির আহমেদকে বলা হয় কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয়া তার ছোট ভাইকে খুঁজে বের করে আনতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে। এজন্য বশির আহমেদকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করা হয়। মারতে মারতে চেতনাহীন করে তাকে বাড়িতে রেখে আসে সেনা সদস্যরা। তিনি জানান, জ্ঞান ফেরার পর যন্ত্রণায় তার পক্ষে বসে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ১৪ই আগস্ট আবার সেই সেনারা তার বাড়িতে এসে হামলে পড়ে। বাড়িতে থাকা খাবারে কেরোসিন ও সার মিশিয়ে নষ্ট করে দেয়া হয়। তবে কাশ্মীরে তিনি একাই এমন ব্যক্তি নন যিনি ভারতীয় সেনাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা এপি সেখানকার অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা প্রায় সকলেই জানিয়েছেন যে, গত ৫ই আগস্টের পর ভারতীয় সেনারা তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। সেনারা তাদের ব্যাপক মারধর এমনকি বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তারা। কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাদেরকে নোংরা পানি খেতে বাধ্য করা হয়েছে এবং বাড়ির অন্যান্য খাবার নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পরিবারের মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে ভারতীয় সেনারা। গত এক মাসে কাশ্মীর থেকে হাজারো যুবককে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে শ্রীনগরে অবস্থিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়াকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি কাশ্মীরের গ্রামগুলো থেকে আসা অভিযোগকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। উল্টো তিনি জানান, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীরা সংগঠিত হচ্ছে। সেখানকার কিছু তরুণ এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী এসব সন্দেহভাজন দেশবিরোধীদের আটক করা হচ্ছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বলেন, কাশ্মীরে কোনো অভিযানে সেনাবাহিনীকে নিযুক্ত করা হয়নি। সেখানে কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু কাশ্মীরের পারিগাম গ্রামের বাসিনা বাকের সোনাউল্লাহ সোফি জানান, ভারতীয় সেনারা এসে তার দুই সন্তানকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাদেরকে অকারণেই বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারা হচ্ছিল। তিনি জানান, রাস্তায় সেনাদের অত্যাচারে আমার ছেলেরা চিৎকার করছিল। কিন্তু আমি ছিলাম অসহায়। তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। তার ২০ বছর বয়সী ছেলে মুজাফফর আহমেদ জানান, আমাদের ধরে নেয়ার পর গ্রাম থেকে আরো ১০ যুবককে ধরে আনে সেনারা। আমাদেরকে ভারতবিরোধী আখ্যা দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। তারা আমাদের পিঠে ও পায়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে এসে আমাদেরকে বৈদ্যুতিক শকও দেয়া হয়। তিনি জানান, আমরা যখনি যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেছি তখনি তারা আরো নৃশংসভাবে মারতে শুরু করেছে। তারা আমাদের ড্রেন থেকে নোংরা পানি খেতে বাধ্য করেছে। বছরের পর বছর ধরে কাশ্মীরের বাসিন্দা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ করে আসছে যে, ভারতীয় সেনারা সেখানে নির্যাতন ও বেআইনিভাবে গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। কাশ্মীরে ক্ষোভ, আতঙ্ক ও হতাশা গত ৫ সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার অঞ্চলটি স্বশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়ার পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে কাশ্মীরের বেশিরভাগ এলাকাকে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশিরভাগ পরিসেবাগুলো।
এপির হিসেব অনুযায়ী, ৫ই আগস্টের পর থেকে কমপক্ষে তিন হাজার কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ ও যুবক। অনেককেই আবার শুধু দিনে আটকে রেখে রাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের পিতামাতাকে নির্দেশ দেয়া হয় পরদিন দিনের বেলা তাদের ছেলেকে থানায় নিয়ে যেতে।
কাশ্মীরে সংকট শুরু হওয়ার পর সেখানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ভারত একে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধের ফল হিসেবে দাবি করে থাকে। বর্তমানে কাশ্মীর অঞ্চলে পৃথিবীর সবথেকে বেশি সেনা মোতায়েন করা আছে। সেখানকার অধিবাসীদের একটি বড় অংশই কাশ্মীরে এই সেনা অবস্থানের ঘোর বিরোধী। তারা স্থানীয় বিদ্রোহীদেরও সমর্থন করে। কাশ্মীরের বর্তমান প্রজন্মও সেই ধারাবাহিকতায় ভারতবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে। কেউ কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে, আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দিল্লির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status