প্রথম পাতা

কথা হয়েছে, সিদ্ধান্ত হয়নি: কাদের

ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার আলোচনার নেপথ্যে

স্টাফ রিপোর্টার

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৯:০০ পূর্বাহ্ন

শুরু থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছিল না ছাত্রলীগের নতুন কমিটির। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপরই আন্দোলনে নামেন একাংশ। কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়া হয়েছে এমন দাবিতে টানা বিক্ষোভ-কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে অবশ্য বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দেয়ার ঘোষণা আসে। তবে এ সিদ্ধান্ত আদৌ কার্যকর হয়নি। আগের বিতর্কের যবনিকা হতে না হতেই পুরো কমিটি বিলুপ্তির খবর আসে গণমাধ্যমে। নতুন কমিটির নেতাদের বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে শনিবার আলোচনা হয় আওয়ামী লীগের  স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ বোর্ডের প্রধান। বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রের খবর, আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি ওই কমিটি ভেঙে দেয়ার বিষয়েও আলোচনা করেন। কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এমন খবরও আসে গণমাধ্যমে। যদিও গতকাল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হলেও কমিটি ভেঙে দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কেন কমিটি ভেঙে দেয়ার আলোচনা এমন প্রশ্ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। তারা বলছেন, বর্তমান কমিটির নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড খোদ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা অবহিত। যে প্রত্যাশা নিয়ে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা তারা পূরণ করতে পারেননি। বরং ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয়ে তারা বেশি আগ্রহী। সর্বশেষ ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সিলেট সফর নিয়ে নয়া বিতর্ক দেখা দেয়। সফর শেষে ঢাকা ফেরার পথে তাকে বিদায় জানাতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নজিরবিহীনভাবে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টারমাকে প্রবেশ করেন। তাদের কেউ কেউ বিমানের সিঁড়ি পর্যন্ত চলে যান। এ খবর গণমাধ্যমে আসার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও অনেকে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, দলের সর্বোচ্চ নেতাদের জন্য এভাবে নিয়ম ভেঙে কোন সংবর্ধনা দেয়া হয় না। ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে তিনি এ সংবর্ধনা কিভাবে নিলেন? এমন নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে নেতাদের বিরুদ্ধে।

ওদিকে শনিবারের বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ছাত্রলীগের প্রসঙ্গ তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই। গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। বিশেষ করে তারা দুপুরের আগে ঘুম থেকে ওঠে না। এ সময় মনোনয়ন বোর্ডের অন্যান্য সদস্যও আলোচনায় অংশ নেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা, অন্য একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এমন পরিস্থিতিতে পড়ার ঘটনা উঠে আসে আলোচনায়। এছাড়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে নেতাদের যোগাযোগ না থাকা এবং বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ও নেতারা তুলে ধরেন। আলোচনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী কমিটি ভেঙে দেয়ার কথা বলেন। ছাত্রলীগ নিয়ে নেতাদের এমন আলোচনার সময় সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গণভবনেই অবস্থান করছিলেন বলে একটি সূত্রের দাবি। তাদের নিয়ে এমন নেতিবাচক আলোচনা হওয়ায় সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে তারা গণভবন ত্যাগ করেন।

কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি-কাদের: ওদিকে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কথা প্রসঙ্গে হয়তো কথা আসে। এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত আকারে কোনো কথা হয়নি। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সেটার ফোরাম ওটা (বৈঠক) ছিল না। ওখানে ইনসাইডে আমরা অনেক কথাই বলতে পারি, অনেক আলোচনাই করতে পারি। গতকাল সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলারকে সৌজন্য সাক্ষাৎ দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, শনিবার আমাদের যে মিটিং ছিল, এটা পার্লামেন্টারি বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা। রংপুরের বাই ইলেকশন, ২টি ইউনিয়ন পরিষদ, তিনটি পৌরসভা, সাতটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে অক্টোবরে মাসে। এজন্যই আমরা বসেছিলাম। মনোনয়নে বোর্ডের মিটিংয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে কোনো কোনো প্রসঙ্গে ক্ষোভের প্রকাশও হতে পারে বা কারও কারও রিঅ্যাকশনও আসতে পারে। কিন্তু অ্যাজ এ জেনারেল সেক্রেটারি অব দ্য পার্টি আমার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা এ মুহূর্তে ঠিক হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা ইমপ্লিমেন্টশন প্রসেসে যায়। এখানে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটতে পারে, প্রতিক্রিয়া হতে পারে কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত আকারে কিছু হয়নি। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কিনা এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, কিছু কিছু ব্যাপারে তো থাকতেই পারে। যেমন- আমাদের ইলেকশনে যারা বিদ্রোহী ছিল, আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে, নেতাদের মধ্যে- এসব ব্যাপারে তো ক্ষোভ প্রকাশ হয়। কাজেই ছাত্রলীগেরও বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত কিছু কিছু ব্যাপার আছে, সেগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কনসার্ন থাকতেই পারেন, এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে কোনো স্পেসিফিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি জানি না, কারণ ওই ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার বিষয় আসেনি।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় এ ধরনের কিছু হলে আপনারা তো দেখবেনই। এ ধরনের কিছু হতে গেলে তো এটা পাবলিক স্টেটমেন্ট। ডিসিশনটা জানা যাবে, এটা তো ওপেন সিক্রেট হয়ে যাবে, তখন সিক্রেট থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী মিটিংয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে একথা বলেছেন কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যতক্ষণ এটা সিদ্ধান্ত আকারে না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত এর সত্যতা আমি স্বীকার করব না। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেগুলো সন্তোষ প্রকাশ করার মতো সেগুলোতে সন্তোষ প্রকাশ করি, আর যেগুলো লোকে পছন্দ করে না সেগুলো আমিও পছন্দ করব না। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং সে ব্যাপারে আমি তাদেরকে সতর্ক হতে বলি, সাবধান হতে বলি, তাদেরকে সুনামের ধারায় ফিরে আসতে বলি। তাদেরকে ভালো খবরের শিরোনাম হতে বলি- এটা আমি অহরহ বলে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত ১৩ই মে সম্মেলনের এক বছরের মাথায় ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই কমিটি নিয়ে নানা সমালোচনা চলছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ১২ ও ১৩ই মে সম্মেলনে কমিটি করতে ব্যর্থ হয় ছাত্রলীগ। পরে একই বছরের ৩১শে জুলাই সম্মেলনের দুই মাস পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম আওয়ামী লীগ সভাপতি চূড়ান্ত করার পর তা ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status