দেশ বিদেশ

কক্সবাজার প্রশাসনের প্রতিবেদন

রোহিঙ্গা সমাবেশে মদতদাতারা চিহ্নিত

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৮:৩০ পূর্বাহ্ন

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ নিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে সমাবেশের নেপথ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের নামে গঠিত বেশ কয়েকটি সংগঠন, কয়েকটি এনজিও এবং চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি। রোহিঙ্গাদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী এসব ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন থেকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কাছে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে। ২৫শে আগস্ট প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের একাধিক সংগঠন কুতুপালং ক্যামেপর এক্সটেনশন ব্লকে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। লাখো রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সর্ববৃহৎ এ সমাবেশ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ নিয়ে তদন্তে নামে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ছাড়াও যেসব এনজিও সংস্থা এবং সমাবেশে মদতদাতা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে কাজ করে জেলা প্রশাসন। এনজিও ব্যুরোর কাছে পাঠানো পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গঠিত রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটি (আরআরসি), ভয়েস অব রোহিঙ্গা, আরকাইন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ) এবং এনজিও সংস্থা এডিআরএ ও আল মারকাজুল ইসলামী সংস্থা নামে দুটি এনজিও রোহিঙ্গা সমাবেশে টি-শার্ট ও ব্যানার সরবরাহ করেছে। রোহিঙ্গা সংগঠন এআরএসপিএইচ এর উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীসহ কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতের একজন পিপি, দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক এবং ক্যামেপ কর্মরত এক এএসআই। গত ১লা সেপ্টেম্বর উখিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গাদের সমাবেশের পূর্বে এডিআরএ নামক একটি এনজিও সংস্থা গত ১৯ ও ২১শে আগস্ট কক্সবাজার কলাতলিস্থ শালিক রেস্তরাঁয় বৈঠক করে। বৈঠকে আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে আড়াই লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। এ ছাড়াও আল মারকাজুল ইসলামী সংস্থা সমাবেশে রোহিঙ্গাদের জন্য টি-শার্ট তৈরিতে সহযোগিতা করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫শে আগস্ট বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ক্যাম্পে র‌্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করে। ক্যামপ-৪ এর ই্লব্লক এলাকায় সবচেয়ে বড় সমাবেশটি হয়। তা ছাড়া রেজিস্টার্ড ক্যামেপ ফুটবল খেলার মাঠ ডি-৫ ব্লক মাঠে ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের পক্ষে সমাবেশ ও র‌্যালি করা হয়। সমাবেশ সফল করতে ডি-৫ ব্লক রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটি (আরআরসি) সংগঠনের চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফার নেতৃত্বে ২৫ হাজার টাকা করে চাঁদা সরবরাহ করা হয়।
সংগঠনের সেক্রেটারি সাইফুল হকের কাছের আত্মীয়স্বজন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করায় তাদের কাছ থেকেও চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। বিশেষ করে লন্ডনের নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাদের প্রায় ৫-৬ মাস আগে সংগঠনের অফিস নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা অনুদান দেন। এই সংগঠনের মূল কমিটি ২৫ জনের। সমাবেশের টি-শার্ট তৈরি করতে ক্যামেপ কর্মরত এক এএসআইর মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গঠিত ভয়েস অব রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটির (আরআরসি) পক্ষ থেকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ভয়েস অব রোহিঙ্গা ৭শ’ সাদা হাফ টি-শার্ট ও ২৮টি ব্যানার উখিয়া উপজেলার মসজিদ মার্কেটের নিশাত প্রিন্টার্স ও মিডিয়া প্রিন্টার্স থেকে ছাপানো হয়। রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিউনিটির (আরআরসি) ১শ’ হাফ টি-শার্ট ছাপানো হয় কক্সবাজার বাজারঘাটা শাহ মজিদিয়া প্রিন্টার্স থেকে। তবে, রোহিঙ্গা ক্যামেপ বেশকিছু সংগঠন কাজ করলেও মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মুহিবুল্লাহর সংগঠনের ৩শ’ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এ সংগঠনের সাধারণ সমপাদক হিসেবে রয়েছেন উখিয়া সিকদার পাড়া এলাকার আব্দুল করিম ভূঁইয়ার ছেলে উখিয়া কলেজের প্রভাষক নুরুল মাসুদ ভূঁইয়া। ২৫শে আগস্ট তিনি উপজেলার মানবাধিকার সংগঠন পিসওয়ে হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সমপাদক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। মাসুদের পূর্ব পুরুষ মিয়ানমারের নাগরিক বলেও উল্লেখ করা হয়। সংগঠনটির ৭ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে, যারা কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা। গত ২৫শে আগস্ট অনুষ্ঠিত সমাবেশে যেসব ক্যামপ থেকে রোহিঙ্গা সংগঠনগুলো সহযোগিতা পায়নি, সেসব ক্যামেপর মাঝিদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, গত ৩১শে আগস্ট রাতে পালংখালী ইউনিয়নের জামতলি ১৫নং ক্যামেপর হেডমাঝি ফারুক ও সহকারী মাঝি রহিমের ওপর হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে আর্মি চেকপোস্টের সামনে ফেলে রেখে চলে যায়। হেডমাঝি ফারুক মুহিবুল্লাহ বিরোধী বলে তাদের ওপর এ হামলা
চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে অন্যান্য ক্যামেপর মাঝিদের মাঝে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হামলার পরিকল্পনা বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে জেলা প্রশাসন গত ৩রা সেপ্টেম্বর এনজিও ব্যুরোতে একটি প্রতিবেদন পাঠান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যামেপ ডি-৫ ব্লকের রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটির (আরআরসি) চেয়ারম্যান সিরাজুল মোস্তফা এবং সেক্রেটারি সাইফুল হকের নেতৃত্বে সামবেশটি পরিচালিত হলেও ভয়েস অব রোহিঙ্গা এবং রোহিঙ্গা রিফিউজি কমিটিও সামাবেশে অংশগ্রহণ করে। তবে ক্যামপ-৪ এ সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে সক্ষম হয় আরকাইন রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউমিনিটি রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামে সংগঠনটি। এ সংগঠনের সভাপতি মুহিবুল্লাহ এবং সাধারণ সমপাদক উখিয়ার সিকদার বিল এলাকার বাসিন্দা ও উখিয়া কলেজের প্রভাষক নুরুল মাসুদ ভূঁইয়া সমাবেশের নেতৃত্ব দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নুরুল মাসুদ ভূঁইয়ার পূর্ব পুরুষ মিয়ানমারের বাসিন্দা ছিলেন। এ ছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন মাস্টার আব্দুর রহিম। রয়েছে সংগঠনের ৭ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা। এদের মাঝে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীসহ রয়েছেন কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতের দু’আইনজীবী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ফরিদুল আলম ও মৌলানা ইউসুফ। ক্যামেপ কর্মরত এক এএসআইর মোটরসাইকেল ব্যবহার করে কমিটির কর্মকর্তারা ইনানী পর্যন্ত যান। সেখান থেকে কক্সবাজার গিয়ে সমাবেশে ব্যবহৃত টি-শার্ট তৈরি করা হয়। উখিয়া উপজেলার মসজিদ মার্কেটের নিশাত প্রিন্টার্স এবং কক্সবাজার পৌরসভার বাজারঘাটাস্থ শাহ মজিদিয়া প্রিন্টার্স হতে টি-শার্ট ও ব্যানার ছাপানো হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status