এক্সক্লুসিভ

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ

টানাপড়েনে ডাকসুর ৬ মাস অন্যগুলোতে নির্বাচনের খবর নেই

পিয়াস সরকার

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ ২৮ বছর পর নির্বাচিত প্রতিনিধি পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। নতুন নেতৃত্ব ইতিমধ্যে ছয় মাস পার করেছে। অনেক চাওয়া পাওয়ার এই কমিটি এই সময়ে কি করতে পেরেছে তা নিয়ে এখন চলছে বিশ্লেষণ। শিক্ষার্থীদের পার্লামেন্ট খ্যাত ডাকসুর প্রথম ছয় মাস পার হয়েছে অনেকটা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পর দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেরও দাবি উঠেছিল জোরেশোরে। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। তবে এখন এ প্রক্রিয়া অনেকটা থেমে আছে।
গত ১১ই মার্চ ডাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদের মাঝে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ছাত্রলীগ। তারা পায় ২৩টি পদ ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক এই দুটি পদ ছাড়া। এই দুই পদ পান কোটা সংস্কার আন্দোলন নেতা এবং সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থীরা।
নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ২টি সাধারণ সভা করেছে নতুন কমিটি। প্রথম সভা হয় ২৩শে মার্চ। দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয় ৩০শে মে। এই দুই সভাতেই উপস্থিত ছিলেন, ডাকসু‘র সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আখতারুজ্জামান। এরপর থেকেই নিষ্ক্রিয় ডাকসু। ডাকসুর তৎপরতা কেন লক্ষণীয় নয় এবিষয়ে জানতে চাইলে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের পাওয়া যায় না। যদিও অপর পক্ষের অভিযোগ ডাকসুর একাধিক সভা হলেও ছিলেন না নুর।
ভিপি নুরুল অভিযোগ করেন, জিএস ও এজিএস ডাকসু কার্যালয়ের কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন, তারা না আসলে যেনো তার রুমের তালা না খোলা হয়। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ এই ডাকসু নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চায় না। শিক্ষার্থীদের একটি বড় দাবি ছিলো গণরুম বা গেস্ট রুম বন্ধের দাবি। আমরা উদ্যোগ নিলে ছাত্রলীগ সেটাকে শুধুমাত্র দেখানোর জন্য এটি করে আসছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ব্যবহারটা দাস প্রথার মতো। মোট কথায় বলতে হয়, আমরা মূলত ছাত্রলীগের অসহযোগীতার কারণেই এগুতে পারছি না। ডাকসুর জিএস গোলাম রব্বানী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, নতুন দল গঠনের জন্য ভিপি তোড়জোড় করছেন। তার বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক কোন চিন্তা নেই। তাকে কেন সহযোগীতা করব।
এবার ডাকসু’র জন্য বাজেট পাস করা হয়েছে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। আর অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ আছে ৩০ লাখ টাকা। তবে সেটি এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এই বিষয়ে জিএস’র দাবি প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই অনুষ্ঠিত হবে এই অনুষ্ঠান। জানা যায়, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ৫টি অনুষ্ঠান বাবদ নিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। এদিকে, হল সংসদের ১৮টি হলে হয়নি বার্ষিক বাজেট। অভিযোগ আছে, চাঁদা না পেয়ে ক্যান্টিন পরিচালককে কৌশলে বিতাড়িত করেছে বিজয় একাত্তর হলের ভিপি সজিবুর রহমান ও জিএস নাজমুল হাসান। আর রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ জানান, দ্রুতই তার হলে হবে বাজেট। ডাকসু ও হল সংসদের তৎপরতায় মুগ্ধ ভিসি মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ডাকসু বিভিন্নভাবে অনেক কর্মসূচি পালন করছে আর সেগুলোতে বিপুল শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা দেখা যায়। এটিই প্রত্যাশিত। ৬ মাসের মধ্যে তারা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ডাকসু সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশী পূরণে কতোটুকু সফল? এমন প্রশ্নের জবাবে নেতিবাচক কথা শোনা যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে। আবাসিক শিক্ষার্থী অমিত হাসান বলেন, আগের যে অবস্থা তাই বিরাজ করছে হলজুড়ে। অবস্থার উন্নতি হয়নি হলরুম, খাবার কোন কিছুতেই। আরেক শিক্ষার্থী ফেরদৌস হাসান বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিলো অনেক কম। আমরা চেয়েছিলাম, হলগুলোতে পরিবেশের উন্নয়ন। কিন্তু আমাদের ডাকসু’র প্রতিনিধিরা নিয়মরক্ষার যে কাজটুকু সেটুকুও করছেন না।
ডাকসুর এজিএস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, উন্নয়ন হয়েছে তবে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বিভিন্ন উন্নয়ন ফি প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন বাস সংযোজন, পাঠাগার, সুইমিং পুলের সময় বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজ হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আবাসন সমস্যা নিয়ে বলেন, এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন আবাসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আমরা এই বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আর ভিপি’র বিষয়ে বলেন, তিনি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে অন্যান্য কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। তিনি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে নাম করার চেষ্টা করছেন। তার ডাকসু বিমুখতার কারণেই অনেক কাজ স্থবির হয়ে রয়েছে।
সাদ বিন কাদের চৌধুরী (স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক) বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ না থাকায় আমাদের সামনে অনেক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে অংশগ্রহন করেছিলেন অরনী খান। তিনি বলেন, এই ডাকসু কতোটুকু কী করলো তার থেকে বড় কথা এই নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই ছিলো না স্বচ্ছ। আর এই প্রতিনিধিদের নিয়ে কতোটুকু উন্নয়ন করা সম্ভব সেটা ভাববার বিষয়। আর শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি যারা সঠিকভাবে নির্বাচিত হননি তাদের কাছে চাইবোটা কী?
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বর্তমান ডাকসুর মূল্যায়ণ করে বলেন, জোর জবর দখল করে হওয়া ডাকসু। এই ডাকসু থেকে আশা করার কিছু নাই। এদিকে, ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আওয়াজ উঠে। প্রস্তুতি প্রক্রিয়াও শুরু হয়। তবে এসব প্রক্রিয়া এখন থমকে গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে কমিশন। তবে সেটি আটকে আছে ফাইলের মাঝেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চাকসু নির্বাচনের জন্য ৩ মাস আগে নীতিমালা গঠনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তারা এখনো কোন রিপোর্ট জমা দেননি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের জন্য দেড় মাস আগে আইন প্রণয়নের কমিটি গঠন করা হয়। রিপোর্ট আসার পর তা সিন্ডিকেটে পাস হলে আইন হবে। আর এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। একই অবস্থা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থীরা বারবার প্রশাসন বরাবর আবেদন জানিয়েছেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য। বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি দেয়ার পরেও কোন উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩ মাস আগে নির্বাচনের জন্য গঠন করা হয় কমিটি। তারা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো সঙ্গে আলোচনা ও দাবি দাওয়া শোনার পরেও নির্বাচনের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি এ পর্যন্ত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status