এক্সক্লুসিভ

তিন বছর ধরে পড়ে আছে চামড়া শিল্প উন্নয়নের ২০ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৪ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ৮:১৫ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের পর থেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে চামড়া খাত। রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে খাতটি। ব্যবসায়ীদের মতে, অর্থ সংকটের কারণে সামনে এগুতে পারছেন না তারা। কিন্তু চামড়া ও টেক্সটাইল শিল্পের উন্নয়নে গঠিত ২০ কোটি ডলারের তহবিল প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে আছে।
জানা গেছে, চামড়া ও টেক্সটাইল শিল্পের প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে ২০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (১ ডলার= ৮৫ টাকা)। কিন্তু এই গ্রিন ট্রান্সফর্মেশন ফান্ড (জিটিএফ) থেকে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর তীব্র অনীহা। এই ফান্ডটি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে চামড়া শিল্পের এই করুণ অবস্থা দেখতে হতো না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ফান্ড থেকে চামড়া ও টেক্সটাইল শিল্পে ঋণ বিতরণের জন্য ১৯টি ব্যাংক চুক্তি করেছে। কিন্তু চলতি বছরের (২০১৯) মার্চ মাস পর্যন্ত এখান থেকে ঋণ দেয়া হয়েছে মাত্র দুইটি প্রজেক্টে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৭ ডলার বা ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার ৫৪৫ টাকা (১ ডলার= ৮৫ টাকা)। কিন্তু এই ঋণটিও বিতরণ হয়েছে টেক্সটাইল খাতে।
পরিবেশবান্ধব শিল্প কারখানা বাস্তবায়নের জন্য রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল এবং টেক্সটাইল পণ্যগুলিতে সমস্ত উৎপাদনকারী সরঞ্জাম এবং চামড়া উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি ও আনুষাঙ্গিক উপাদান আমদানির সুবিধার্থে জিটিএফ গঠন করা হয়। পানি সংরক্ষণ পরিচালনা ও পরিশোধন, সম্পদ সংরক্ষণ এবং পুনর্ব্যবহার, শক্তির পুনর্ব্যবহার, তাপ এবং তাপমাত্রা
পরিচালন, বায়ু চলাচল ও কাজের পরিবেশ উন্নয়নে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হলেও বিতরণে আগ্রহ নেই কোনো বেসরকারি ব্যাংকের।
রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের বছর থেকেই টান পড়েছে চামড়া রপ্তানিতে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয় ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। ওই অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১২ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯.২৭ শতাংশ কম।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরের প্রায় অর্ধেক চামড়া এখনো বিক্রিই হয়নি। এছাড়া শিল্পের স্বার্থে ট্যানারি স্থানান্তর করা হলেও তা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। যার মাশুল এখন গুণতে হচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র জানায়, এই ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট (লাইবর) থেকে এক শতাংশ বেশি সুদ কর্তন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ১০ শতাংশের নিচে খেলাপি বিশিষ্ট যেকোনো তফসিলি ব্যাংক। বর্তমানে লাইবর রেট ২.২৩ শতাংশ। সুতরাং সর্বোচ্চ ৫.২৩ শতাংশ সুদেই এই ফান্ডের ঋণ পাবেন চামড়া বা টেক্সটাইল শিল্পের একজন গ্রাহক।
সূত্র আরো জানায়, প্রতি বছরই সরকারি ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি দেয়া হয়। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে ট্যানারি মালিকরা সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। বেসরকারি ব্যাংকে ঋণের সুদহার কম হলেও ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। সে কারণেই সরকারি ব্যাংক বেছে নেন ট্যানারি ব্যবসায়ীরা।
এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন জানান, সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চামড়ায় ঋণ বিতরণের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। যখন থেকে রপ্তানি খাত হিসেবে চামড়া খাত স্বীকৃতি পেয়েছে তখন দেশে বেসরকারি ব্যাংক ছিল না। এখন এই খাতে খেলাপি সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারি প্রণোদনা থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোই চামড়া খাতে ঋণ দেয়। সরাকার সব সময় চেয়েছে এই খাতের গতি যেন নষ্ট না হয়। যে কোনোভাবে খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এই মুহূর্তে চামড়া শিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থের সংকট। অর্থের অভাবে আমরা কিছুই করতে পারছি না। ব্যাংকগুলো চামড়া শিল্পে ঋণ দিতে অনাগ্রহী। তবে গ্রিন ট্রানসফর্মেশন অ্যান্ড জিপিএফ থেকে ঋণ নিয়ে চামড়া শিল্পকে সবুজ শিল্পে পরিণত করা এখনো সম্ভব নয়। কারণ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status