বাংলারজমিন

পুকুর খননের নামে হরিলুট

পানির নিচে দুই হাজার একর জমি

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

২৪ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ৮:০৬ পূর্বাহ্ন

রংপুরের বদরগঞ্জে সরকারি টাকায় অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করে বাঁধ নির্মাণ করায় সাতটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার একর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে চারা রোপণ করতে না পারায় প্রায় দুই শতাধিক কৃষক সর্বনাশের মুখে পড়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। উল্টো মৎস্য অধিদপ্তরের টাকায় বাঁধ নির্মাণকারী প্রভাবশালীদের হুমকি-ধমকিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী চাষিরা। এ নিয়ে কৃষকরা প্রতিবাদ করলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। আবার অভিযোগকারী কৃষকদের নামে থানায় মামলা দিয়ে নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে, উপজেলার লোহানীপাড়া ও কালুপাড়া ইউনিয়নের সীমানায় দাঁড়িয়ারবিল এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দাঁড়িয়ারবিলটি উপজেলার লোহানীপাড়া ও কালুপাড়ার দুই ইউনিয়নে অবস্থিত। এরমধ্যে লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ী, নয়াপাড়া, চৌকিদারপাড়া, কুঠিপাড়া, হাটখোলাপাড়া ও মৌলভীপাড়াসহ সাতটি গ্রামের চাষাবাদের জমি রয়েছে ওই দাঁড়িয়ারবিলে। প্রতি মৌসুমে স্থানীয় চাষিরা ধান, পাট, কলা চাষের পাশাপাশি অন্যান্য আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অপরিকল্পিতভাবে একটি প্রভাবশালী চক্র মৎস্যজীবী সমিতির নামে বিলের প্রায় ৪ একর জমি বন্দোবস্ত নেন। তারা পানির প্রবাহমুখে একটি পুকুর খননের জন্য স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার নেন। ওই টাকার মাত্র ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে বিলের পানি প্রবাহের মুখ বন্ধ করে বাঁধ নির্মাণ করে সেখানে তারা মাছের পোনা ছাড়েন। ওই সময় স্থানীয় কৃষকরা বিষয়টি বুঝতে পেয়ে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু প্রভাবশালী ওই চক্রটি কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে রাতারাতি সেখান থেকে সঠকে পড়ে। চলতি মৌসুমের বৃষ্টিপাত শুরু হলে গোটা বিলের পানি বের হতে না পেরে উপচে পড়ে। এতে তলিয়ে যায় কৃষকদের রোপা আপনের চারা। দিশাহারা হয়ে পড়েন স্থানীয় চাষিরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল-মিটিং করেও তারা কোন সমাধান বের করতে পারছেন না। উল্টো হয়রানি করতে গত সোমবার নেতৃত্বদানকারি চারজন কৃষকের নামে থানায় মামলা দেয়া হয়েছে। মামলা দেন উপকারভোগী সদস্যদের একজন শ্যামল দাস। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বদরগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল আলম পারভেজ। গতমাসে তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এ ব্যাপারে তিনি জানান, ভূমি অফিসের মাপজোখের ভিক্তিতে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় অর্ধেক টাকায় করা হয়েছে-এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। কৃষকদের নামে থানায় অভিযোগকারী ও মৎস্যজীবী সংগঠনের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, ‘বাঁধ কেটে দেয়া ও বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলার আশঙ্কায় ৫ জন কৃষকের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুকুর খননের সময় তারা বাঁধা দেয়নি কেন। আর চাষাবাদের ব্যাপারে তাদের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা সুষ্ঠুভাবে সমাধান চাইতে পারেন। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে কি না তা আগে চিন্তা করা উচিত ছিল।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবীরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে একটি ক্যানেল তৈরি করা যেতে পারে। কিন্তু  অভিযোগকারী কৃষকরা চাইছে সরকার থেকে বাঁধ কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করুক। যারা লিজ নিয়েছেন তারা মাছের ক্ষতি না করে যাতে কৃষকদের উপকার করা যায় সে বিষয়ে রাজি আছেন। রংপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরুণ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status