প্রথম পাতা

রাজি নয় রোহিঙ্গারা শুরু হলো না প্রত্যাবাসন

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি

২৩ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহে ফের থমকে গেল প্রত্যাশিত প্রত্যাবাসন। চীনের মধ্যস্থতায় তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গতকাল স্বল্প পরিসরে হলেও রোহিঙ্গাদের একটি দলকে ফেরত পাঠানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু না! শেষ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে রাজী হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের তরফে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরে প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর যেভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এটি ঝুলে গিয়েছিল এবার তা হবে না। বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ শরনার্থী সংস্থার প্রতিনিধিরা তালিকায় থাকা ৩৩৯৯ রোহিঙ্গার মধ্যে যাদের এখনও সাক্ষাৎকার বাকী তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার ধারা চলমান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ৩-৪ দিন তালিকায় থাকা সব রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজী কোন পরিবার পাওয়া গেলে তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকবে। এদিকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়ায় স্থানীয় জনগোষ্টির মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে সেনা, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের টহল জোরদার ছিল আগে থেকেই। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেটি অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে।  গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে টেকনাফের নয়াপাড়া শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি অফিসে শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম সংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। এজন্য ৩ হাজার ৪৫০ জনের একটি তালিকা মিয়ানমার সরকার দিয়েছিল।

সেই তালিকায় দুইবার নাম থাকা ব্যক্তি ও পরিবার এবং বাংলাদেশের নাম না পাঠানো সত্বেও ৪জনকে ফেরত চাওয়া মোট ৫১ জনকে বাদ দিয়ে ১০৩৮টি পরিবারের ৩৩৯৯জনের তালিকা ধরে সাক্ষাৎ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল বাংলাদেশ ও  ইউএনএইচসিআর। এর মধ্যে ২৯৫ পরিবারের সাক্ষাৎকার গ্রহন সম্পন্ন করা হয়েছিল। এদের মধ্যে একজনও ফেরত যেতে রাজী হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তালিকায় থাকা বাকী রোহিঙ্গাদের ৩-৪ দিনের মধ্যে সাক্ষাৎকার নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক প্রশ্নে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ কিনা জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটা ব্যর্থ বলা যাবে না। সব পরিবারের সাক্ষাৎকার চলছে। আমাদের বাস ট্রাক প্রস্তুত থাকবে। যে কেউ ফিরতে চাইলে পাঠানো হবে। মিয়ানামারে ফেরত বিষয়ে রোহিঙ্গারা যে সব শর্ত দিচ্ছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, এসব সমস্যা রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের। আমরা শুধু মাত্র ওপারে ফেরত পাঠাব। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকাস্থ চীন দূতাবাসের জেং থাং জু’সহ ২ জন, মিয়ানমার দূতাবাসের একজন নেইন চেং জ্য, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৩ জন কর্মকর্তা, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক জন যুগ্ন-সচিব ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে একজন কর্মকর্তা। এর আগে বৃহস্পতিবার বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম মৈত্রি সেতু দিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। মিয়ানমারও এসব রোহিঙ্গাদের গ্রহনের জন্য প্রস্তুতি ছিল বলে জানা যায়। রোহিঙ্গাদের ট্রানজিট ঘাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫ টি বাস ও মালামাল বহনের জন্য ৩টি ট্রাকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এজন্য শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ট্রানজিট ঘাট পর্যন্ত নিছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী জানান, প্রত্যাবাসনের নামে মিয়ানমার যা করছে তা শুধু আইওয়াশ। তা নাটক ছাড়া কিছু নয়, রোহিঙ্গাদের উত্থাপন করা দাবী সমুহের সমাধান আন্তর্জাতিক ভাবে না হলে প্রত্যাবাসন আদৌ হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে তৃতীয় দিনের মতো তালিকায় থাকার রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছে ইউএনএইচসিআরসহ সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) প্রতিনিধিরা। সাক্ষাৎকার দিয়ে ফেরার পথে শালবাগান ক্যাম্পের রহিমা বেগম ও আবদুল আজিজ বলেন, মিয়ানমার সরকারের দেয়া এনভিসি কার্ড গ্রহন করব না ও আশ্রয় শিবিরেও থাকবো না বলে জানিয়ে দিয়েছি। রোহিঙ্গা স্বীকৃতিসহ পূর্ণ নাগরিকত্ব ও নিজ নিজ ভিটে জমি ফেরত দিলেই কেবল ফিরবো। শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ-ব্লকের নেতা (মাঝি) মো: জাকারিয়া জানান, আগেও মিয়ানমার সরকার কথা রাখেনি। বারবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করেছে। এবারও ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে আইডিপি ক্যাম্পে আটকে রাখবে। তাই পূর্ণ নাগরিকত্ব না দেয়া পর্যন্ত ফেরত যাবো না। ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, নাগরিকত্ব প্রদান, ভিটে-বাড়ি ও জমি-জমা ফেরত, আকিয়াব জেলায় আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িতে ফেরত, কারাগারে বন্দি রোহিঙ্গাদের মুক্তি, হত্যা, ধর্ষনের বিচার, অবাধ চলাফেরা, নিরাপত্তা প্রদান ছাড়া আমরা ফিরে যাবো না। টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোঃ খালেদ হোসেন জানান, তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়াধীন থাকবে। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ ১০৪ পরিবার প্রধানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status