শেষের পাতা
লার্ভার ডেঞ্জার জোন সিলেটের কদমতলী
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২১ আগস্ট ২০১৯, বুধবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন
এডিস মশার লার্ভার ডেঞ্জার জোনে পরিণত হয়েছে কদমতলী এলাকা। এক মাস আগে এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার ১০ থেকে ১২টি স্থানে এডিস মশা ও লার্ভা মিলেছিলো। পরিত্যক্ত টায়ারে জমে থাকা পানিতেই মিলে লার্ভার অস্তিত্ব। আশপাশেও মিলে এডিস মশা। এরপর একের পর এক বেশ কয়েকটি স্থানে লার্ভা মিলেছে। লার্ভা ধ্বংসে চালানো হচ্ছে কম্বিং অপারেশন। মশক নিধনের যা যা করা দরকার তাই করছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু ধ্বংস হচ্ছে না লার্ভা। গতকাল কদমতলীর পাশের শিববাড়ি রুটে পাওয়া গেছে লার্ভা। ফলোআপে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এই লার্ভার অস্তিত্ব পান। এরপর গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ওই এলাকায় চালানো হয় মশক নিধন অভিযান। সিলেটের কদমতলী এলাকা। যানবাহনের জংশন। একপাশে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশন। অন্যপাশে পেট্রোল পাম্প, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, গাড়ির গ্যারেজ সহ নানা ব্যবসা। ব্যস্ততম এলাকা হচ্ছে কদমতলী। পাশে হুমায়ুন রশীদ চত্বর। সিলেটের প্রবেশমুখ। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যানবাহন গিয়ে ঢুকে ওই এলাকায়। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে- সিলেটে ৭ই জুলাই পাওয়া যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। এরপর থেকে একে একে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। ইতিমধ্যে রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০০ ছাড়িয়েছে। রোগী বাড়ার কারণে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এডিস মশা ও লার্ভার অনুসন্ধান করা হয়। প্রথমেই ধারণা থেকে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিলো কদমতলী এলাকায়। আর সেখানেই মিলে এডিস মশার লার্ভা। পাওয়া যায় এডিস মশা। সিলেটের সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, গতকাল স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম ওই এলাকায় যায়। সেখানে অনুসন্ধানকালে ঢাকা টায়ারের দোকানের ভেতরে টায়ারের মধ্যে এডিস মশার লার্ভার অস্তিত্ব পান। এরপর থেকে ওই এলাকায় লার্ভা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তিনি জানান, এর আগে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, সদর হাসপাতাল ও শাহপরান এলাকায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিলো। তবে আশার কথা হলো স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা খুব কম। প্রায় ২০ জনের মতো স্থানীয় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিনই মশক নিধন অভিযান চালাচ্ছেন। সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমায় রয়েছে সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড। ওই তিনটি ওয়ার্ড সিলেটের গেইটওয়ে। তিনটি ওয়ার্ডে ইতিমধ্যে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মশক নিধনের জন্য ম্যাসিভ অভিযান চালানো হয়েছে। এখন চলছে কেপিআই জোন এলাকায় মশক নিধন অভিযান। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, যে এলাকায় গতকাল লার্ভার সন্ধান মিলেছে সেই এলাকায় আগেও মশক নিধন অভিযান চালানো হয়। এবার দুটি স্থানে দোকানের ভেতরে লার্ভা পাওয়া গেছে। তিনি জানান, ব্যক্তি সচেতনতা ছাড়া কোনো ভাবে পুরোপুরি মশক নিধন অভিযান চালানো সম্ভব নয়। এখন থেকে হার্ড লাইনে যাওয়া ছাড়া সিটি করপোরেশনের আর কোনো পথ খোলা নেই। তিনি বলেন, সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। পানি জমছে। স্থানীয়ভাবে জমি বা স্থাপনার মালিককে প্রথমে তদারকি করতে হবে। সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা চাইলে দেয়া হচ্ছে। সবাইকে চোখ-কান খোলা রেখে চলার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে দক্ষিণ সুরমা নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও। তারা জানিয়েছেন, তদারকির কোনো কমতি নেই। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এরপর কারো বাড়ি কিংবা দোকানের ভেতরে লার্ভা পাওয়া গেলে দায়িত্ব নিতে হবে মালিককেই। এজন্য তারা নতুন করে সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর তাগিদ দেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদ বকস মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কদমতলী ও তার আশপাশ এলাকায় লার্ভা ধ্বংসের জন্য বার বার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মানুষকে সচেতন করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এলাকায় নতুন করে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করা হবে। এদিকে সিলেটে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে। গতকাল নতুন করে ৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে।