অনলাইন

ডেঙ্গু কেড়ে নিল আরো এক মাকে

হৃদয়বিদারক দৃশ্য

মোহাম্মদ আবুল হোসেন

১৯ আগস্ট ২০১৯, সোমবার, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন

আদরের দু’ সন্তান রামিছা মোর্শেদ (৮) ও রাফসান মোর্শেদ (৬) বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। তাদের সামনে সাদা কাপড়ে মোড়ানো মা সৈয়দা সামিয়া আক্তার (৩২)। চারপাশে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পিতা রিয়াজ মোর্শেদ বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। এমন দৃশ্য তারা কখনো দেখেনি। দু’সন্তান বার বার মায়ের কাছে গিয়ে ‘মা মা ওঠো’ বলে চিৎকার করছে। কিন্তু মা তাদের নড়াও দেন না। চোখও খোলেন না। বলেন না, স্কুলে গিয়ে দুষ্টুমি করবে না। ঠিকমতো টিফিন খেয়ো। কি করে বলবেন! তিনি তো চিরবিদায় নিয়েছেন।

সৈয়দা সামিয়া আক্তার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা গেছেন ঢাকায় হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এ সময় তাকে রাখা হয়েছিল আইসিইউতে। সেখানেই কাউকে কিছু না বলে বিদায় নিলেন চিরদিনের জন্য। এ সময় তার সন্তানরা কাছে ছিল না। সন্ধ্যার অন্ধকারের মতোই যেন তাদের জীবনেও নেমে এলো এক অজানা অন্ধকার। যখন ওই দুই সন্তানের সামনে মাকে হাজির করা হলো তখন তিনি মৃত।  সৈয়দা সামিয়া আক্তার ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার চরমুরারদিয়া গ্রামের রিয়াজ মোর্শেদের স্ত্রী। স্বামীর পেশাগত কারণে থাকতেন ঢাকায়।

সামিয়া আক্তারের মামা মোহাম্মদ নিসারুল বাশার নিপুন জানান, পবিত্র ঈদুল আযহায় গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আনন্দে ঈদ করতে। সেখানেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। ঈদের আগেরদিন জ্বর আসে সামিয়ার। তাকে ঈদের দিন ভর্তি করানো হয় ফরিদপুর ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ার পর রেফারড করা হয় ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে। তারাও অবস্থার অবনতি দেখতে পায়। তারা রেফারড করে ঢাকার কোনো ভালো হাসপাতালে। রিয়াজ মোর্শেদ স্ত্রীকে নিয়ে প্রাণপণ ছোটেন ঢাকা। ভর্তি করেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৫ই আগস্ট স্থানান্তর করা হয় হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। তাকে ১৬ ই আগস্ট নেয়া হয় এ হাসপাতালের আইসিইউতে। সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে থাকেন তিনি। তার ফুসফুস অকেজো হয়ে যেতে থাকে। একটি ফুসফুস একেবারে অকেজো হয়ে যায়। অন্যটিরও অবনতি হতে থাকে।

জানা যায়, রোববার তার একটি ফুসফুসের এক-তৃতীয়াংশ কাজ করছিল। লিভার পুরো নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় তার দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে। আইসিইউতে মনিটর ক্রমশ জানান দিচ্ছিল তিনি অজানার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। ঠিকই রাতের অন্ধকার যখন নেমে আসছে, অন্ধকার যখন গ্রাস করছে চারপাশ, ঠিক তখনই সামিয়া আক্তার সবাইকে গাঢ় অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে চলে গেলেন চিরদিনের জন্য। রিয়াজ মোর্শেদ সেই অন্ধকারে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। হাউমাউ করে কাঁদছেন আর বলছেন, আমার দুটি সন্তানকে আমি কি বলবো? ওরা যখন মায়ের কথা বলবে, ওদের সামনে বাবা হয়ে আমি কি জবাব দেবো? আমার সন্তানদের লেখাপড়ার কি হবে? আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে চিৎকার করছেন তিনি। চারদিক থেকে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে কান্নার রোল। কে কাকে শান্তনা দেবেন! এ এক ভয়াবহ দৃশ্য। এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।

সামিয়া আক্তারের মৃতদেহ গত রাতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফরিদপুরে। আজ স্থানীয় আলীপুর গোরস্থানে বাদ যোহর তার দাফন হওয়ার কথা রয়েছে। সৈয়দা সামিয়া আক্তার ফরিদপুর পৌরসভার কুঠিবাড়ি কমলাপুরের সৈয়দ আবু সালেহ মোহাম্মদ মুছার কন্যা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status