এক্সক্লুসিভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্বিঘ্নে পুকুর ভরাট, অস্থায়ী মার্কেট

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

১৯ আগস্ট ২০১৯, সোমবার, ৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রভাবশালীর পুকুর ভরাট ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। শুধু তাই নয়, ভরাট শেষে সেখানে চালু করা হয়েছে অস্থায়ী সুপার মার্কেট। শহরের কোর্ট রোড এলাকার গোলাপ রেস্ট হাউজ সংলগ্ন পুকুরটি মাস দেড়েক আগে ভরাট করার কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর একাধিকবার বাধাও দিয়েছে। কিন্তু তাদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েই চলে ভরাট। এক বছর আগে পুকুর থাকা অবস্থাতেই শ্রেণি পরিবর্তন করে কাগজপত্রে ভিটি বানানো হয় পুকুরটিকে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট মামলা দিয়েছেন তারা। চট্টগ্রামে এর শুনানি হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শহরের কোর্ট রোড এলাকার ৭৬ শতক আয়তনের পুকুরটি মূলত ২০১৭ সাল থেকেই ভরাট শুরু হয়। ওই বছরের ১৪ই ডিসেম্বর মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ১৮ই ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হাসান আলী সরজমিন
 ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুরের কিছু অংশ বালু ভরাট অবস্থায় দেখতে পান। এর পর ২০১৮ সালের ১৫ই মার্চ পুকুর ভরাটে জড়িত গোলাপ মিয়া (৬০) ও জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে সোহেল কবীরকে (৩২) শুনানির নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে ২২শে মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরে সশরীরে হাজির হতে বলা হয় তাদের। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর উপধারা ৬ (ঙ) অনুযায়ী পুকুর ভরাট করায় তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না- এর লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করেননি পুকুর ভরাটকারীরা। পরিবেশ অধিদপ্তরও অজ্ঞাত কারণে পরে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর মধ্যেই ২০১৮ সালের ২৪শে জুলাই সদর ভূমি অফিস পুকুরটির শ্রেণি পরিবর্তন করে দেয়। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থাকা সোহেল রানা ও সদর  ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত রেকর্ডে হালে ভিটি শ্রেণির বলে উল্লেখ করা হয় পুকুরকে। মাস দেড়েক আগে তোড়জোড়ে আবার এই পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়। খবর পেয়ে যথারীতি জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সেখানে যান। অভিযোগ, তাদের জোরালো পদক্ষেপ না থাকার সুযোগে পুকুর ভরাট চলতে থাকে। দিনে-রাতে ট্রাকটরে করে বালু এনে ফেলা হয় সেখানে। একজন গণমাধ্যমকর্মী জানান- পুকুর ভরাট চলতে থাকার সময় একাধিকবার জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে তিনি নিজে ফোন করেন। প্রত্যেকবারই বলা হয় -‘তাই নাকি। খোঁজ নিচ্ছি। এই পুকুর ভরাট হতে দিব না।’ ঠিক একই সময়ে শহরের মধ্যপাড়ায় বালু ফেলে একটি পুকুর ভরাটের সংবাদ পেয়ে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়াসহ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেসময় ঘটনাস্থলে পুকুরের মালিকপক্ষ উপস্থিত না থাকলেও তাকে বাড়ি থেকে ডেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নেয়া হয়। পুকুর ভরাটের দায়ে ওই মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও তিনদিনের মধ্যে পুকুর থেকে বালু অপসারণের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু কোর্ট রোডের এই পুকুরের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক ঠেকে মানুষের কাছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ কর্মকর্তা রুনায়েত আমিন রেজা বলেন- আমরা এ ব্যাপারে এনফোর্সমেন্ট প্রেরণ করেছি। এর ভিত্তিতে এখন শুনানি হচ্ছে। শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ার কারণে তারা সরাসরি অ্যাকশনে যেতে পারেননি বলে জানান তিনি। তা না হলে মোবাইল কোর্ট করা হতো। রাতারাতি কিভাবে পুকুর ভিটিতে পরিণত করা হলো সেটি খতিয়ে দেখার কথাও বলেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন জায়গাটি অবশ্যই পুকুর। তারা পুকুর থেকে শ্রেণি পরিবর্তনে ভিটি করেছেন। যা আইনত দণ্ডনীয় একটি কাজ। জানা গেছে, গত ৭ই আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে পরিচালক ও যুগ্ম সচিব আজাদুর রহমান মল্লিকের উপস্থিতিতে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে অংশ নেন অভিযুক্ত সোহেল মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, গোলাপ মিয়া। এদিকে পুকুর ভরাট করে নির্মাণকাজে বাধা দেয়ায় ওই পুকুর সংলগ্ন এলাকার অমরেন্দ্রনাথ লাল রায়সহ ১১জন ব্যবসায়ীকে গত ২৯শে জুন গোলাপ ও জাহাঙ্গীরসহ তাদের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখান। যেকোনো সময় জায়গা জোরপূর্বক দখল করে নেয়ার হুমকি দেন। পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ১৪৪ ধারা জারি করার জন্য আবেদন করেন ওই ব্যবসায়ীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status