বাংলারজমিন

মধুপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গারোদের ‘ফং’

মো. নজরুল ইসলাম, মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে

১৯ আগস্ট ২০১৯, সোমবার, ৮:০৯ পূর্বাহ্ন

দেখতে অনেকটা লাউয়ের মতো মনে হলেও এটি আসলে লাউ নয়। স্বাদে তেঁতো বলে স্থানীয়রা একে ‘তিত লাউ’ বলে। স্বাদে যাই হোক ব্যবহারিক গুরুত্বের দিক বিবেচনা করলে এর দাম অনেক বেশি। প্রতিটি ফং এর দাম ৩০০-৩৫০ টাকা।
দামের কারণ হিসেবে জানা যায়, তিত লাউ দিয়ে গারোরা বিশেষ ব্যবহার্য ‘ফং’ তৈরি করে। বড় আকৃতির পাত্রে তৈরি করা ‘চু’ (গারো মদ) ‘ফং’-এর মধ্যে ঢেলে ছোট পাত্রে বা গ্লাসে তুলে গারোরা পরিবেশন করে।
মজার বিষয় হলো, গারোদের মধ্যে এ ‘ফং’ ব্যবহারেও আছে নারী-পুরুষের পার্থক্য। লম্বা অংশ ছাড়া শুধু বৃত্তাকার ‘ফং’ নারীরা আর লম্বা অংশ যুক্ত ‘ফং’ পুরুষরা ব্যবহার করেন। তবে এটি এখন শুধু অভিজাত গারোরা ব্যবহার করেন। অধিকাংশ গারো পরিবারে প্লাস্টিক বা ড্রিংকসের বোতল ‘ফং’-এর জায়গা দখল করে নিয়েছে। সহজেই বোতল কেটে তারা ‘ফং’ বানিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারেন। ফলে তিত লাউ থেকে তৈরি আসল ‘ফং’-এর ব্যবহার কমে গেছে। গারোদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তিত লাউ আগে বনে হতো। এখন বন সংকুচিত ও দখল হয়ে যাওয়ায় বনের মধ্যে অন্য ফসল আবাদ হচ্ছে। এতে তিত লাউসহ বনজ অনেক গাছ জন্মায় না। আগ্রহীরা এটি চাষ করলে কেবল এলাকায় তিত লাউ তথা এ থেকে তৈরি ‘ফং’-এর সন্ধান মেলে। লাউয়ের মৌসুমেই অর্থাৎ কার্তিক-অগ্রহায়ণের দিকে এটি আবাদের জন্য বীজ বপন করা হয়। ডুগডুগি বানাতে লাউকে যেমনভাবে করা হয় একই প্রক্রিয়ায় পরিপক্ব তিত লাউয়ের ভেতর থেকে নরম অংশ আলাদা করে ফেলে দেয়া হয়। তিত লাউ শুকিয়ে তেল মাখিয়ে মসৃণ করে পূর্ণাঙ্গ ‘ফং’ তৈরি হয়। গারোদের নানা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ‘ফং’ তৈরি করে ভালো দামে বিক্রি করা হয়। এক সময় পার্বত্য এলাকায় ‘ফং’-এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। নারীরা পানির পাত্র হিসেবেও ব্যবহার করতো। এটি এখন আর সহজে মেলে না ফলে ‘ফং’-এর ব্যবহার দিনদিন ভুলে যাচ্ছে গারোরা। সেদিন আর বেশি দূরে নয়- হারানো সংস্কৃতির তালিকায় ‘ফং’ যুক্ত হয়ে যাওয়ার। মধুপুরে প্রায় ৬০০ প্রজাতির ঔষধি গাছ উৎপাদনকারী নির্মলা হাদিমা জানান, একসময়ে প্রতিটি গারো পরিবারে ‘ফং’ এর ব্যবহার হতো। আর এটি ছিল গারো সংস্কৃতির অংশ।
আদিবাসী নেত্রী মধুপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক জানান, বন উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে ফংও বিলুপ্তি হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ফং কী জিনিস বলতেই পারবে না।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status