বাংলারজমিন

মানিকগঞ্জে ডেঙ্গু রোগী ৫শ’ ছাড়িয়েছে

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

১৯ আগস্ট ২০১৯, সোমবার, ৮:০৪ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। এতে ক্রমেই চারদিকে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, তরুণ ও যুবক শ্রেণির নারী-পুরুষ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী গেল ২২শে জুলাই থেকে এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় প্রায় ৫শ’ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রোববার সকাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৩ জন রোগী। তাছাড়া মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, ঘিওর সরকারি হাসপাতালে ৬ জন, সাটুরিয়ায় ৯ জন এবং সিংগাইর সরকারি হাসপাতালে ১৪ জনসহ মোট ১৬১ জন রোগী ভর্তি আছেন। তবে এ পর্যন্ত ৩৪৪ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ ছাড়া প্রতিদিনই ৩-৪ জন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। সরজমিন কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন তলায় ভর্তি আছেন ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী এলাকার পরাগ নামের এক কলেজছাত্রী। ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার বাবা গোলাম রব্বানী বুলবুল বলেন, ১৫ই আগস্ট থেকে প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ও মাথাব্যথা আর ঘন ঘন বমি হওয়ায় পরদিন মেয়েকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ায় ওই দিনই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার দুপুর পর্যন্ত রক্তের প্লাটিলেট ৭৫ হাজারে নেমে আসায় খুব টেনশনে আছি। তবে চিকিৎসা ভালো হচ্ছে বলে জানান। একই হাসপাতালে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভর্তি আছেন বানিয়াজুরী এলাকার কলিমুদ্দিন মিয়ার মেয়ে নূপুর। জানালেন, সব সময় জ্বর, মাথা ও শরীর ব্যথায় খুব কষ্ট হচ্ছে। খেতে পারি না। হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ঘিওর উপজেলার শুধুমাত্র বানিয়াজুরী এলাকার হাফ কিলোমিটারের মধ্যে পরাগ ও নূপুরের মতো লাভলু, আওলাদ, আজমির, নাসরিন, কালাম, জনি, রাশিদা, আরাফ, তপু রায়হান, অমূল্যসহ আরো কমপক্ষে ২০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব খান বলেন, আমার এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত হাফ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৫ জনের উপরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যেভাবে ডেঙ্গু রোগ ছড়াচ্ছে এতে মশা নিধনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমরা ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছি। মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাক্তার মনিরুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১২৪ জন। এর মধ্যে রোববার দুপুর পর্যন্ত ভর্তি আছে ২৪ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে ৭ জনকে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীর জন্য আমরা আলাদা আলাদা তিনটি সেল করেছি। শিশু, নারী ও পুরুষ রোগীদের আলাদা সেলে রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসায় যাতে কোনো রোগীর কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য সর্বক্ষণ রোগীদের পাশে থাকছে ডাক্তার ও নার্স।
এদিকে দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বানিয়াজুরী এলাকার মহব্বত হোসেনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার সিট না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে মশারি না পেয়ে বাড়ি থেকে নিজেরাই মশারি টাঙ্গিয়ে তার ভেতরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন নাসরিন। মহব্বত হোসেন জানান, শনিবার ডেঙ্গু ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সিট না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বারান্দায় রোগীকে রাখা হয়েছে। এতে রোগী নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। কারণ হাসপাতালে রোগীর ঠাঁই নেই। মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ডাক্তার লুৎফর রহমান বলেন, বারান্দায় ২-১ জন রোগী থাকতেই পারে। তবে সিট খালি হওয়া মাত্রই তাদের সিটে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ২২শে জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আমাদের জেলা সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হয়েছিল ৩৯০ জন ডেঙ্গু রোগী। বর্তমানে রোগী আছে ৯৩ জন। ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে ৪৬ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৪৫ জন রোগী। তবে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের কোনো সংকট নেই। কিন্তু ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ভিড় বাড়ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status