দেশ বিদেশ

এবার গানে গানে কালুরঘাট সেতুর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে

১৭ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামের দুঃখ কালুরঘাট সড়ক কাম রেলসেতু। প্রায় ৯০ বছর আগে তৈরি একমুখী এই সেতু দিয়ে দৈনিক পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করে। একসময় চট্টগ্রাম মহানগর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৭ উপজেলা ও কক্সবাজার-বান্দরবান জেলায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল এটি।
কিন্তু সেই সেতুটি এখন জরাজীর্ণ। মরণফাঁদ। কক্সবাজার, বান্দরবান জেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬ উপজেলায় সড়কপথে যাতায়াতের জন্য নগরীর কর্ণফুলী নদীর ওপর শাহ্‌ আমানত সেতু নির্মাণ হলেও রেল চলাচল ও বোয়ালখালী উপজেলার মানুষ এখনো জরাজীর্ণ সেতুর উপর নির্ভরশীল। যার উপর দিয়ে মরণ হাতে নিয়েই মানুষ চলাচল করছে নিত্যদিন।  
স্থানীয় লোকজনের মতে, কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি বহু বছরের। এই সেতুর দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে বর্তমানে। সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, অনশন সব শেষ হয়েছে। সেতুর কোনো পরিণতি না দেখে চলতি বছরের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দীন খান বাদল।
গত ৯ই আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই সেতুর বিনিময়ে দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিতেও রাজি বলে ঘোষণা দেন তিনি।
তাতেও কার্যত হলো না কিছুই। ফলে সেতু নির্মাণের দাবিতে এবার হৃদয়ছোঁয়া গান গাইলেন বোয়ালখালীর তরুণ কণ্ঠশিল্পী আলাউদ্দিন আহমদ। সেতুর জনদুর্ভোগ নিয়ে ‘সর্বনাশা সেতু’- শিরোনামে মিউজিক ভিডিওটি নির্মাণ করেন সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আদিল মাহবুব। গানটির কথা লিখেছেন, রোমান রাজবর। সুর করেছেন আদিল মাহবুব।  
গানের কথা শুরু হয় সেতুর ইতিবৃত্ত দিয়ে। ‘তুমি দুর্ভাগা, তুমি হতভাগা, তুমি সর্বনাশের হেতু, তুমি চট্টগ্রামের কালুরঘাটে রেলওয়ে সেতু।’ পুরো গানে যেমন উঠে এসেছে সেতুর জরাজীর্ণ দশা’র চিত্র তেমনি প্রতিদিন এই সেতু পারাপারে মানুষের দুঃখ-দুর্ভোগের চিত্রও।
সেতু নির্মাণে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে গানের কথায়- ‘কত সরকার এলো গেলো, হায় কতো না দিয়েছে আশা; বঙ্গবন্ধুর কন্যাও কি করবে নিরাশা।’ গানের শুরুতে সেতুর দাবিতে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের দেয়া আল্টিমেটামও লাগানো হয়েছে। মাঝখানে আছে সেতু বাস্তবায়নে এই সংসদ সদস্যে আকুতি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল এই সেতু নিয়ে বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু ন গইল্ল্যে আই যাইয়ুম গুই (অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি কিছু না হয়, তাহলে আমি চলে যাব)।
তিনি বলেন, আমার জীবদ্দশায় কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতুটির বাস্তবায়ন দেখে যেতে চাই। সেতুর জন্য আমি আমার ‘সবেধন নীলমণি’ রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি এমপি পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার কথা পর্যন্ত বলেছি। আমার দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর জন্য আমি তো আর কিছু চাইনি।
তিনি বলেন, প্রেমের টানে মানুষ জাত-কুল মান বিসর্জন দেয়। আমি এবার জনগণের প্রেম রক্ষায় নিজের জাত ছেড়ে প্রয়োজনে আওয়ামী লীগে যাব। সেতু ছাড়া আমার আর কিছুই চাই না। বাদল বলেন, কালুরঘাটে নতুন সেতু নিয়ে চারবার সমীক্ষা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান, বাংলাদেশ ও কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সমীক্ষাগুলো চালিয়েছে। কোরিয়ান কোমপানি চূড়ান্ত সমীক্ষা করেছে। রেলওয়ের ধারণা, ৮০০ কোটি টাকা লাগবে।
কোরিয়ানরা বলেছিল, ১২০০ কোটি টাকা লাগবে। তারা ৮০০ কোটি টাকা দিতে রাজি। জলাবদ্ধতার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা অনির্বাচিতদের হাতে দিলেন। অথচ মাত্র ৩৯০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পেলেই কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু করা যায়।
এ সেতুর জন্য তার মরা মা-বাবাকে গালি খেতে হয় অভিযোগ করে বাদল বলেন, কালুরঘাট সেতুর ৭১-৭৯ জায়গায় কর্ণফুলী দেখা যায়। আড়াই মাইল গতিতে ফার্নেস অয়েলবাহী ও কয়েকটি যাত্রীবাহী ট্রেন যায়। ৫০ হাজার লোক এ সেতু দিয়ে হেঁটে পার হন। ২-৩ ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষাকালীন মানুষ আমার মৃত মা-কে গালি দেন। এর থেকে মুক্তি চাই।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বাদল বলেন, আপনি চট্টগ্রামের দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন। এ চট্টগ্রামের উন্নয়নে আপনি হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছেন। সর্বশেষ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম উদ্যোগ কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করছেন। চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেললাইন করতে কালুরঘাট রেল সেতু নির্মাণ করা হবে। আমার দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর একমাত্র দাবি শুধু রেল সেতুর সঙ্গে সড়ক সংযুক্ত করা। এ সড়ক কাম রেল সেতুটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে সমগ্র দেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তিনি আরও বলেন, এটি সবচেয়ে বড় সামরিক প্রয়োজনীয়তা মেটাবে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ হাবকে সংযুক্ত করবে। কক্সবাজারে ঝিনুক মার্কা আন্তর্জাতিকমানের রেল স্টেশন করা হচ্ছে। আমি এর বিপক্ষে নই। যদি কালুরঘাট সেতু না হয় তাহলে ঝিনুক ভেঙে মুক্তা বেরিয়ে যাবে।
বাদল বলেন, ফ্লাইওভার করছেন সবার বাধা উপেক্ষা করে। চট্টগ্রাম পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য যেখানে ফ্লাইওভারের নিচেও পানি, উপরেও পানি। গবেষণা বলছে, ৪১ বছর পর চট্টগ্রাম পানির নিচে ডুবে যাবে। এর নমুনা এখন দেখছি। চট্টগ্রাম-৮ আসনের শহরাঞ্চলে জোয়ারের পানি ঢোকে। জোয়ার কবে আসবে জেনে বিমানবন্দরে যেতে হবে।
তিনি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, দায়দায়িত্ব মাথায় রেখে বলতে চাই, ১০ বছরে বহুবার বলেছি, চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ হচ্ছে। রাষ্ট্রের বিনিয়োগে মাথায় রাখতে হবে প্রায়োরিটি ও কস্ট বেনিফিট। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের জন্য কর্ণফুলী, শঙ্খ, মাতামুহুরী, বাঁকখালীতে সেতু লাগবে।
পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর ধারণা সঠিক নয় উল্লেখ করে বাদল বলেন, চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল হলে দেশের ৩০ বছরের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এটিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মহিউদ্দিন চৌধুরী সন্দ্বীপ চ্যানেলে বন্দর করার কথা বহু আগে বলেছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনার জন্য কর্ণফুলী নদীতে সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। ১৯৩০ সালে নির্মিত সেতুটি ওই বছরের ৪ জুন উদ্বোধন করা হয়। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পুনরায় বার্মা ফ্রন্টের যুদ্ধে মোটরযান চলাচলের জন্য ডেক বসানো হয়। দেশ বিভাগের পর ডেক তুলে ফেলা হয়। পরে ১৯৫৮ সালে সব রকম যানবাহন চলাচল যোগ্য করে সেতুটির বর্তমান রূপ দেয়া হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status