ষোলো আনা
৩৩ ঘণ্টার ঈদ যাত্রা
আকিবুল ইসলাম
১৬ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ৮:৩০ পূর্বাহ্ন
ছবিঃ ইমরান আলী
ঈদে বাড়ি ফেরা। যাবো রংপুরে। প্রতিবারই ফিরি। টিকিট করলাম রাত ১১টায়। ৯ই আগস্ট। কাউন্টারে গিয়ে দেখি শত মানুষের ভিড়। না গাড়ি আসেনি। কাউন্টার থেকে জানানো হলো আসতে দেরি হবে। কখন আসবে তার কোনো ঠিক নেই। আমরা চার বন্ধু মিলে একই সঙ্গে টিকিট করেছি। আমরা চারজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রাত ১২ টায় জানানো হলো গাড়ির সম্ভাব্য সময় রাত আড়াইটা। এরপর ফের অপেক্ষা শুরু। ১টার সময় ফের জানানো হয় গাড়ি আসবে ভোর ৬টায়। ফের অপেক্ষা শুরু। আমাদের কোনো সমস্যা না হলেও বয়স্ক, মহিলা ও শিশুদের নির্ঘুম রাতের কষ্টটা ছিলো অবর্ণনীয়।
যাক ভোরবেলা গাড়ি এলো। তা ছাড়লো ভোর সাড়ে ৬ টায়। ঘুমে কাতর মানুষগুলো বাসে উঠতেই ঘুমিয়ে গেল অধিকাংশই। আর ছোট বাচ্চার কান্নার শব্দতো আছেই। এরপর কিছুসময় যেতেই নতুন বিপত্তি। এলেঙ্গা যেতেই থেমে গেল বাস। দু’পাশে তীব্র যানজট। বসে আছি তো আছি। ততক্ষণে ঘুম ভেঙেছে প্রায় সকলের। নতুন করে শোনা যায় বাচ্চার কান্নার শব্দ।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে বসা। চলছে না বাস। প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দেয়ার জন্য আমাদের কোনো সমস্যা না হলেও মহিলারা পড়েন বিপাকে। এরপর কিছুটা চলার পর। টাঙ্গাইল পেরুলাম। এরপর এক ফিলিং স্টেশনে থামানো হলো। সেখানে ছিলো টয়লেটের ব্যবস্থা। এরই মাঝে বঙ্গবন্ধু সেতু আসার আগেই রাত। আশপাশে অনেকেই নিচে নেমে হাঁটাহাঁটি করছেন। করার কিছুই নেই। তেষ্টায় কাতর। এরই মাঝে কিছু লোক শুরু করেন ব্যবসা। এক গ্লাস পানি ৫ টাকা। একটা ডাব ১২০ টাকা। একটি ১৫ টাকার বিস্কুটের প্যাকেট ৫০ টাকা। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারেই আটকা ছিলাম প্রায় ৫ ঘণ্টা। সেতু পেরুতেই প্রায় ভোর।
কী অবর্র্ণনীয় কষ্ট দেখেছি মানুষের তা বলে বোঝাতে পারবো না? বাচ্চার কান্নাটাও একসময় কান সওয়া হয়ে যায়। সেতু পেরিয়ে ফের আটকা ৩ ঘণ্টা। এভাবেই সব থেকে দীর্ঘ বাস যাত্রা শেষ হয় সকাল ৮টায়। ১১ টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল কল্যাণপুর থেকে। রংপুরে পৌঁছাই পরদিন সকাল ৮ টায়। আর ভাবতেই কষ্ট হয় বয়স্করা কীভাবে এই যাত্রার ধকল সহ্য করেছেন?