দেশ বিদেশ

আরো ১৫ দিন সময় চাইলো তদন্ত কমিটি

খুলনায় থানায় ধর্ষিত গৃহবধূর লোমহর্ষক বর্ণনা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

১৫ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

খুলনা জিআরপি থানায় গণধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতে পাকশী থেকে গঠিত তদন্ত টিম প্রতিবেদন জমা দিতে আরো ১৫ দিন সময় চেয়ে আবেদন করেছে। এছাড়া ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বুধবার আদালতে আবেদন করেছে তারা। রেলওয়ে পাকশী জেলা কর্তৃক গঠিত তদন্ত টিমের প্রধান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ জানান, ঈদের কারণে সবাই ছুটিতে থাকায় তদন্ত কাজে কিছু সময় প্রয়োজন। এজন্য আরো ১৫ দিন সময় চেয়ে রেলওয়ে পাকশী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। তিনি গতকাল খুলনায় এসে ভিকটিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন।

এদিকে, জিআরপি থানায় তিন সন্তানের জননীকে (৩০) গণধর্ষণের ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উছমান গণি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে দেওয়া ওই নারীর জবানবন্দিতে ওই রাতের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। শুক্রবার রাতে ৫ ধর্ষক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে রেকর্ডকৃত মামলার এজাহারে উল্লিখিত বর্ণনা তুলে ধরা হলো।

নির্যাতিতা নারীর জবানবন্দি ও এজাহারের হুবহু বর্ণনা- ৪ঠা আগস্ট নির্যাতনের শিকার ওই নারী আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, “পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন জিআরপি খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ নিজে তল্লাশির নামে তার যৌনাঙ্গের ভেতর আঙুল প্রবেশ এবং এর কিছুক্ষণ পর ডিউটি অফিসারের সহায়তায় তার ওপর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করেন। পরবর্তীতে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে একই ডিউটি অফিসারের সহযোগিতায় তাকে চোখ বেঁধে অন্য একটি রুমে নিয়ে গিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে অফিসার ইনচার্জ নিজে তিনবার, ডিউটি অফিসার একবার ও বাকি তিনজন পুলিশ সদস্য সর্বমোট পাঁচজন মিলে পালাক্রমে অসংখ্যবার ধর্ষণ করে। এ বিষয়টি কাউকে বললে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি প্রদান করেন।”

জবানবন্দিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে ডিউটি অফিসার থানায় আসেন। তিনি আমাকে চোখ বেঁধে একটা রুমে নিয়ে যান। রুমে যেতে দু-তিন মিনিট লাগে। রুমে গিয়ে দেখি ওসি সাহেব লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা। তখন ওই ডিউটি অফিসার আমার মুখের ভেতরে ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলে যাতে কথা বলতে না পারি। ডিউটি অফিসার বাইরে গেলে ওসি সাহেব ভেতর থেকে দরজা আটকে দেন। এ সময় তিনি বলেন, “দেখি কোথায় কোথায় লাগছে? এই কথা বলে তিনি আমার শরীরের সকল কাপড় খুলে ফেলে এবং বলে এ ঘটনা যদি কাউরে কইছ তাহলে তোর পরিবারের সবগুলোকে একটার পর একটা মামলা দিব। এই কথা বলে আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। ওসি সাহেব আমাকে দেড় ঘণ্টা তার রুমে রাখে। এরমধ্যে সে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনবার ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পূর্বে সে কনডম ব্যবহার করেছিল। এরপর ওসি সাহেব রুম থেকে চলে যান। তারপর বসন্তের দাগওয়ালা চিকনচাকন ডিউটি অফিসার রুমে আসেন। মুখ বাঁধা অবস্থায় তিনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেন। তিনি আসার আগে সাথে করে ভিজা গামছা নিয়ে আসে এবং আমার শরীর মুছে নেয়। তিনিও ওসি সাহেবের মতো কনডম ব্যবহার করেন। এরপর আমার শরীর কাজ করছিল না। এই অবস্থায় আরও একজন আসে। তাকে দেখলে চিনব। সে ভেজা গামছা দিয়ে আমার শরীর পরিষ্কার করে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে। ওই ব্যক্তি যাওয়ার পর আরো দু’জন আসে সবাইকে দেখলে চিনব। বাকিরা সবাই কনডম ব্যবহার করে। এভাবে ভোরের আজানের কিছু আগে আমাকে গারদে নিয়ে রেখে দেয়। পরের দিন পাঁচ বোতল ফেনসিডিল মামলা দিয়ে আমাকে কোর্টে চালান দেয়। পুলিশ আমাকে ওইদিন মোবাইল চুরি করেছি- এই সন্দেহে আটক করেছিল। এই আমার জবানবন্দি। আমি ন্যায়বিচার চাই।”

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া সার্কেলের এএসপি ফিরোজ আহমেদ বলেন, জিআরপি থানায় গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ওসি উছমান গণি পাঠানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যা নিবারণ আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী নিজেই। এর আগে ৮ই আগস্ট দুপুরে নির্যাতনের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই আদালতের নির্দেশে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২রা আগস্ট যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসার পথে তিন সন্তানের জননীকে আটক করে খুলনা জিআরপি থানা পুলিশ। ওই নারীর অভিযোগ, মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ দিয়ে তাকে আটক করা হয়। ওইদিন রাতে থানা হাজতে ওসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য তাকে মারধর ও ধর্ষণ করে। পরদিন ৩রা আগস্ট তাকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ৪ঠা আগস্ট ওই নারী খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালতে তাকে মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে তার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ৫ই আগস্ট তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এছাড়া উক্ত ধর্ষণের ঘটনায় ৫ই আগস্ট কুষ্টিয়া সার্কেলের এএসপি ফিরোজ আহমেদসহ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করে। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, পুলিশ পরিদর্শক শ ম কামাল হোসেইন ও মো. বাহারুল ইসলাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status