বাংলারজমিন
এতিম মিসকিনের হক কেড়ে নিলো সিন্ডিকেট
এবিএম আতিকুর রহমান, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) থেকে
১৫ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়-পাকুটিয়াতে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ চামড়া বাজার। প্রতি সপ্তাহে রোববার ও বুধবার চামড়ার হাট বসে এখানে। বগুড়া, সিরাজগঞ্জ কেরানীগঞ্জ, বৃহত্তম ঢাকা বিভাগ ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকেই ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করতে আসেন এই হাটে। হাটের আগের দিন রাতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চলে আসেন- ট্যানারি মালিক, মহাজন, ঋষি, ফড়িয়া থেকে শুরু করে ছোটখাটো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে চামড়া বেচাকেনা। স্থানীয় তিন শতাধিক লোক সপ্তাহে ২ দিন শ্রম বিক্রি করে চালান তাদের সংসার। ঈদ এলেই তাদের ব্যস্ততা যেমন বাড়ে তেমনি বাড়তি ইনকাম করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সারা বছর ভালোভাবে চলতে পারবে- এমন আশাতে বুক বেঁধে সারা বছর ঈদের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু এতিম, গরিব-দুঃখী মানুষের মতোই শ্রমজীবী মানুষগুলোর সেই আশা-দুরাশায় পরিণত হয়েছে। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে এবারের ঈদ তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। মানবসৃষ্ট এই অভিশাপ একদিকে যেমন এতিম, অসহায় গরিব-দুঃখী মানুষের পেটে লাথি দিয়েছে অপর দিকে শ্রমজীবী মানুষগুলোও পরিবার-পরিজন নিয়ে সারা বছর কীভাবে চলবে- এমন ভাবনা ও দুশ্চিন্তায় তাদের মাঝে চরম হতাশা নেমে এসেছে। সারা দেশের ন্যায়- টাঙ্গাইলেও এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে ঘাটাইল উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ চামড়া হাট থাকায়- সরজমিনে ঘুরে কঠিন বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। ঘাটাইলের ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা ঘুরে দেখা যায় যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য আছে- তারা অনেকেই একা, কেউ সামাজিক ভাবে ভাগী হয়ে কোরবানি করেছেন। আলাদা-আলাদা ভাবে ৬ থেকে ১০-১২ জন করে এক জায়গায় বসে গোল হয়ে কোরবানির গোস্ত কাটাকাটি ও ভাগবাটোয়ারা উৎসাহের সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে করেছেন। এ সব কাজে কোনো ক্লান্তি বা বিরক্তি না থাকলেও- চামড়া বিক্রির সময় তারা বিরক্ত, হতভম্ব ও রাগান্বিত হয়েছেন। ১ লাখ টাকা দিয়ে গরু ক্রয় করে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে ৬০ থেকে একশত টাকায়। ১ লাখ টাকার উপড়ের গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে ১৫০-৩০০ টাকায়, ছাগলের চামড়া ১০ টাকায়। অনেকেই রাগে ও দুঃখে চামড়া বিক্রি না করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলেছেন। খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পাড়া, মহল্লা ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব চামড়া নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে ভ্যান, অটো, ছোট ছোট পিকআপ ও ট্রাক যোগে অধিক মুনাফা লাভের আশায় কাঁচা চামড়া নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন পাকুটিয়া চামড়া বাজারে। সেখানে এসে ঘটে বিপত্তি। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যখন বড় বড় চামড়া এক জায়গায় ট্যাক করে রেখে ক্রেতার অপেক্ষা করতে থাকেন তখন বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্ট, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চামড়া সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কোমর বেঁধে ঝাপিয়ে পড়েন পানির দামে চামড়া ক্রয় করার জন্য। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখাচ্ছেন আর এসব সিন্ডিকেটের লোকেরা বিড়ালের মতো কাটা বেছে বেছে ১০-১২টি করে চামড়া ক্রয় করা শুরু করছেন। বড় বড় চামড়া ২৫০-৪৫০ টাকায় সর্বোচ্চ ক্রয় করছেন তারা। অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট চামড়া, কাফা, বাদ কাফা চামড়া কেনা বন্ধ করে দেন। এসব চামড়া নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ে যান। মাথায় হাত দিয়ে আর চোখের জলে গামছা ভিজিয়ে এসব চামড়া ফেলে দিয়ে রাতের অন্ধকারে বাধ্য হয়ে পালিয়ে যান। অনেকেই আবার ৫০-৬০ টাকা এসব চামড়া বিক্রি করে দেন। ছাগলের চামড়া পুরোটাই ফেলে দেন।