এক্সক্লুসিভ

ট্রেনের ছাদে ঈদযাত্রা

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১১ আগস্ট ২০১৯, রবিবার, ৭:৫৫ পূর্বাহ্ন

শনিবার ভোরে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। চলে ১২টা পর্যন্ত। এরপর থেমে থেমে টিপ টিপ বৃষ্টি ঝরেছে দিনভর। এরমধ্যেও থেমে ছিল না ঈদযাত্রা। বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদা মাড়িয়ে মানুষ ছুটে চলে বাস ও ট্রেন স্টেশনগুলোর দিকে। যেখানে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হন টিকিট ও সিট নিয়ে। এমন দৃশ্য চট্টগ্রাম মহানগরীর স্টেশন রোড, গরিবুল্লাহ শাহ, সিনেমা প্যালেস, অলঙ্কার মোড়সহ দূরপাল্লার সবক’টি বাস স্টেশনে। এর চেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয় চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে। সেখানে টিকিট কেটেও ভেতরে সিট না পেয়ে যাত্রীদের উঠে বসতে হয় ট্রেনের ছাদে।

দুপুর ৩টায় মহানগর গোধূলী, বিকেল ৫টায় সোনার বাংলা, চাঁদপুরগামী সেপশাল ট্রেন ও মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে দেখা গেছে এ অবস্থা।  
চাঁদপুরগামী সেপশাল ট্রেনের ছাদে উঠে পড়া আনোয়ার হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এত কষ্ট মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটলেও সিট বেদখল হয়ে গেছে। ভেতরে দাঁড়ানোর জো নেই। মানুষ গিজগিজ করছে। তাই ট্রেনের ছাদে উঠে পড়েছি। বৃষ্টিতে ভিজে হলেও বাড়ি পৌঁছতে হবে।

আনোয়ারের মতো অসংখ্য মানুষ উঠেছেন ট্রেনের ছাদে। আছেন নারীও। সকলেই বাড়ি ফিরবে। তবে কর্তব্যরত প্রহরী এসে তাগাদা দিচ্ছেন ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার। প্রহরীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে শামসুন্নাহার নামে এক যাত্রী।
তিনি বলেন, ভেতরেও জায়গা নেই, ছাদেও যেতে দেবেন না তাহলে টিকিট দিলেন ক্যান?  এ সময় ছাদে থাকা যাত্রীরা হাত উঁচিয়ে টিকিট দেখান। সকলের হাতেই টিকিট অথচ ভেতরে তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই। সকলেই সমস্বরে বলে উঠেন, জীবনের মায়া কি আমাদের নেই! আমরা কি বাড়ি যাবো না? টিকিট কেটেই বাড়ি যাচ্ছি, বিনা পয়সায় নয়।
এদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে ট্রেনের ছাদ থেকে না নামলে ট্রেন ছাড়া হবে না। যাত্রীদের কেউই ঘোষণা যেন শুনছেনই না। ধীরে ধীরে ট্রেনের ছাদেও যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। কর্তব্যরত পুলিশ-প্রহরী সকলেই একে একে এসে বারবার সতর্ক করে পুনরায় ফিরে গেছেন। এছাড়া ট্রেনটি ছাড়ার কথা ৩.২০ মিনিটে কিন্তু ছেড়েছে ৪.৩৫ মিনিটে।

একইভাবে মহানগর গোধূলী, সোনার বাংলা, চাঁদপুরগামী সেপশাল ট্রেন ও মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনেও উপচেপড়া ভিড় ছিল। এসব ট্রেনের ভিতরে-বাইরে থাকা সকল যাত্রীর কাছেই টিকিট রয়েছে। কেউ কেউ স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে আগপাছ না ভেবেই উঠে পড়েছেন ছাদে।
এদিকে সোনার বাংলা ট্রেনের ছাদে উঠে পড়া যাত্রী রাশেদুল আলম বলেন, বাসে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য নগরীর স্টেশন রোড ও গরিবুল্লাহ শাহ মাজারের স্টেশনে গিয়ে টিকিট পায়নি। ফলে স্ট্যান্ডিং টিকিটে চরম ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠেছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জিআরপি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ বারবার বলেন ট্রেনের ছাদে যেন যাত্রী না থাকে। কিন্তু সকলের কাছেই টিকিট আছে। কতজনকে নামাতে পারি বলেন। যদি অসাবধানতাবশত কেউ উপর থেকে পড়ে যায় তখন তো আপনারাও ছাড়বেন না। বড় বড় হেডলাইনে নিউজ হবে।
তিনি বলেন, ট্রেন বাড়ছে না আবার টিকিটও বিক্রি হচ্ছে। যাত্রীদের দোষ কীভাবে দেবো। নামাতে গেলেই বলে আমাদের জায়গা করে দেন আমরা সেভাবেই যাবো।

রেলওয়ে পুলিশ সুপার নওরোজ হোসেন তালুকদার বলেন, চাহিদার চেয়ে চারগুণ টিকিট বিক্রি হলে মানুষের দোষ কী? আমরাও ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রেখেছি। বাধা দিয়ে তো লাভ হয় না। একদিকে নামালে অন্যদিকে উঠে পড়ে। সামাল দেয়া চাট্টিখানি কথা না। টিকিট ছাড়া কেউ উঠে না। সকলের হাতেই টিকিট। তখন আর কিছু করার থাকে না আমাদের।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের সীমিত সমপদের মধ্যে এত মানুষের চাহিদা পূরণ করা কঠিন। তবে আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। গত ৫ বছরে যা হয়েছে স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও তা হয়নি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, নতুন ট্রেন না এলেও এবারের ঈদযাত্রায় রেলের পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৬০ কোচ। যা ঈদ সেপশাল ট্রেন ছাড়াও আন্তঃনগর, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের বরাদ্দকৃত ঘাটতি কোচ হিসেবে সংযোজন হয়েছে।

রেলের পূর্বাঞ্চল তথা চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-ঢাকা ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সবসময় কোচ সংকটের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। প্রতি বছরের মতো ২২টি কোচ দিয়ে দুটি ঈদ সেপশাল ট্রেন চালু হলেও চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী এসব সেপশাল ট্রেনে বাড়ি ফেরার তাগিদে অনেকেই নিচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি।
এছাড়াও প্রতিটি ট্রেনে ১৬টি বগি থাকলেও এবার চারটি বগি বাড়ানো হয়েছে। প্রতি বগিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারেন। সেই হিসাবে ট্রেনে ১২ শতাধিক যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের চাপ থাকাটা স্বাভাবিক। নির্ধারিত আসনের চেয়ে কয়েকগুণ যাত্রী ঈদের সময় বাড়ি যান। তাদের পরিবহনে আমরা হিমশিম খাই। তারপরও যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি পৌঁছাতে প্রাণপণ চেষ্টা করি। নিয়মিত ১০টির পাশাপাশি এবার ঈদ উপলক্ষে দুই জোড়া সেপশাল ট্রেন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও চারটি করে বগি যুক্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ম্যানেজার প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, কেবল ঈদ এলেই যাত্রীদের চাপ বাড়ে। অন্যসময় তো ফাঁকাই থাকে। ঈদ যাত্রার প্রথম দিন বুধবারেও ফাঁকা ছিল ট্রেনের বগি। বৃহস্পতিবার ছুটি শেষে বাড়তে থাকে যাত্রী। এ কারণে বাড়তি বগি, কোচ লাগানো হয়। যা একটা ট্রেনের চেয়েও কম না। তবে এটা আমাদের যাত্রীদের তুলনায় অপ্রতুল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status