শেষের পাতা

মুক্তিযোদ্ধাকে গাড়ি চাপা

হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন দিনরাত

স্টাফ রিপোর্টার

১০ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ৮:২৬ পূর্বাহ্ন

মো. রফিকুল ইসলাম সেরনিয়াবাত। একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। গত ৯ই জুলাই দুপুরে তাকে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে রাস্তা পারপারের সময় একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২০৫৯৪৯) চাপা দেয়। মুহূর্তে লুটিয়ে পড়েন সড়কে। আশপাশের মানুষ ও উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ট্রমা সেন্টারে। সেখান থেকে পাঠানো হয় জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেছে এবং শরীরের আরো কয়েকটি স্থানে জখম। ভেঙ্গে যায় মেরুদণ্ডের হাড়ও। উপায়ান্তর না দেখে চিকিৎসকরা দ্রুত সার্জারি করান। কিন্তু প্রথমবার সার্জারি করালেও তাতে ঠিক হয়নি। দেখা দেয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা জটিলতা।

দীর্ঘ ১৮ দিন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখন জায়গা হয় জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে। সেখানে দিনদিন নিস্তেজ হয়ে আসছেন রফিকুল ইসলাম। চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করার পাশাপাশি তার জীবন নিয়েই শঙ্কিত পরিবার। কারো সঙ্গে তেমন কথা বলছেন না। দুর্ঘটনার পরপরই নিউ মার্কেট থানায় একটি জিডি করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এদিকে ঘাতক প্রাইভেটকারটি নিপ্রো জেএমআই ফার্মা লিমিটেড কোম্পানির। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র প্রোডাকশন ম্যানেজার জিতেশ চন্দ্র পাল গাড়িটি ব্যবহার করতেন। ঘটনার দিন গাড়িটিতে তিনি থাকলেও ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলে তিনি জানান। দুর্ঘটনার পরপরই গাড়িটি নিয়ে ড্রাইভার সটকে পড়েন। এদিকে গাড়িটির বৈধ কাগজপত্র ছিল না বলে অভিযোগ রয়েছে। ইন্স্যুরেন্স লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল উত্তীর্ণ। দুর্ঘটনার পরপরই আহত ব্যক্তিকে নিয়ে জিতেশ চন্দ্র প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে গেলেও পরে নিজে আর যাননি।

এরপরে কিছুদিন রফিকুল ইসলামের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়ে একেবারে গা ঢাকা দেন। এদিকে প্রথমে রফিকুল ইসলামের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার কথা থাকলেও অভিযুক্ত জিতেশ চন্দ্র যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপরে নিউ মার্কেট থানার মাধ্যমে একটি সমঝোতার চেষ্টা করেন তিনি। আহত ব্যক্তির পরিবার ও জিতেশ চন্দ্রসহ নিপ্রো ফার্মার কয়েকজন কর্মকর্তাদের নিয়ে থানায় বৈঠক হয় গত ৪ই আগস্ট। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি সেখানেও। গাড়িটির দায়ভার বহন করতে অনীহা দেখায় জিতেশ চন্দ্রের কোম্পনি নিপ্রো জেএমআই ফার্মা। এদিকে যেহেতু গাড়িটি কোম্পানির নামে তাই এর দায়ভার তার কোম্পানিকেই বহন করতে হবে বলে জানান আহতের পরিবার। এ সমঝোতা মিটিংয়ের পরে আহত রফিকুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করেনি জিতেশ চন্দ্র।

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের মেয়ে তাহাসিনা ইসলাম মীম বলেন, আমার বাবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে বাবার শরীর একেবারে কঙ্কালসার হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে লিভার সমস্যাসহ নানা ইনফেকশন।

তিনি বলেন, বাবার দুর্ঘটনার পরে একবার ফোন করে এবং একবার টেক্সট করে জিতেশ চন্দ্র খোঁজ নিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি একবারও আর খোঁজ নেননি। বর্তমানে বাবাকে নিয়ে বিপদে আছি। তার চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে পরেছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য খুব দ্রুত দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনোভাবে সহযোগিতা করছেন না।

আহত ব্যক্তির ভায়রার ছেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ আবদুল কাদের বলেন, অভিযুক্ত জিতেশ চন্দ্র আমাদের সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। তারা খালুর চিকিৎসা খরচ বহন না করে গা ঢাকা দিয়েছে। খালুর চিকিৎসার সব খরচ নিপ্রো ফার্মাকে বহন করতে হবে। তাদের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গাড়িটি কোম্পানির নামে এবং গাড়ির বৈধ কাগজপত্রও ছিল না। এটা এড়িয়ে গেলে চলবে না।

এদিকে অভিযুক্ত জিতেশ চন্দ্র পাল বলেন, আহত রফিকুল ইসলাম রাস্তা পারাপারের সময় পেছনে লেগে গাড়ির সামনে পড়ে যান। এর পরপরই তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এরপরে ট্রমা সেন্টার ও পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষাও আমরাই করাই। কিন্তু এরপরেও আহতের পরিবার সন্তুষ্ট নয়। এজন্য আমরাও সমঝোতার চেষ্টা করি। কিন্তু তার আত্মীয়দের মধ্যে কেউ একজন আমাকে প্রথমে হুমকি এবং ফেসবুকে নানা লেখালেখি করে। এজন্য এখন আর সামনাসামনি হই না। তিনি আরো বলেন, আমিও চাই একটা সমঝোতা। কিন্তু আহত ব্যক্তির পরিবার অনেক টাকা দাবি করে। আমার কোম্পানির নামে গাড়ি থাকলেও কোম্পানি দুর্ঘটনার দায়ভার নিতে অনিচ্ছুক। এখন আমি সমঝোতা চাইলে তাদের দাবির জন্য পারছি না। আমি চাই একটা সমঝোতা হোক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status