ষোলো আনা
‘সবারই মা মারা যায়’
মিলন হাসান
২ আগস্ট ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
তেলবাজি, মোসাহেবি, চাটুকারিতা শব্দগুলোর সঙ্গে আম জনতা পরিচিত। সে কালে ছিল। এখন তো আছেই। যুগে যুগে শুধু ধরন পাল্টেছে। তেলবাজি ছাড়া সমাজ চলে না। রাষ্ট্র চলে না। যোগ্যতার কোনো বিচার হয় না। কে কত বেশি তেল দিতে পারেন তাই এখন যোগ্যতার মাপকাঠি। দেশে দেশে শাসকেরা তেলবাজির বড় বেশি মূল্য দেন। সামনে যেতে হলে একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে তেলবাজি। ব্যবসা, বাণিজ্য, নেতৃত্ব, পোস্টিং, প্রমোশন এসবই তেলবাজির কাছে আটকে গেছে।
সেনাশাসক জেনারেল এরশাদের জমানা। বলাবলি আছে, এরশাদের মা মারা গেছেন। দলের লোক কাঁদছে, আত্মীয়স্বজনরা কাঁদছে? কাঁদছেন তার প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ। কাঁদতে, কাঁদতে তিনি জ্ঞান হারাচ্ছেন দেখে এরশাদ নিজেই বললেন, জাফর তুই কাঁদিস না। সবারই মা মারা যায়। এটা এখনো ইতিহাস হয়ে আছে। প্রয়াত কাজী জাফর প্রধানমন্ত্রীর পর আর কি চেয়েছিলেন? এভাবে না কাঁদলেও পারতেন। উপস্থিত লোকজন লজ্জা পেলেও জাফর লজ্জা পাননি।
কাজী জাফর বাম রাজনীতি করতেন। তুখোড় বক্তা। তার বক্তৃতা অনেক শুনেছি, কভারও করেছি। অনেক পড়ালেখা করতেন বক্তৃতা শুনে মনে হতো। যোগ্যতার বিচারে এরশাদ থেকে তিনি কম ছিলেন না। এরশাদের ক্ষমতার উৎস ছিল বন্দুক। এটাই শুধু পার্থক্য। প্রাপ্তির নেশায় পেয়েছিল জাফরকে। শেষ পর্যন্ত এরশাদের সঙ্গে থাকতেও পারেননি। এরশাদের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে নিজেই কাণ্ডারি হয়েছিলেন। সফল হননি।
টেলিভিশন খুললেই শুনতে পাবেন তেলবাজি কাকে বলে। খালি কী রাজনীতি? গণমাধ্যম কর্মীরাই বা কম কিসে? প্রয়াত এক গণমাধ্যম কর্মীর কথা তো মুখে মুখে। সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কই একমাত্র ভরসা। এই তো স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোথায় আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই সে খবর প্রথম দিয়েছে। ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সারা দেশ ডেঙ্গুর কালোছায়ায় রীতিমতো কাঁপছে। এর মধ্যে সুযোগ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী বউ-বাচ্চা নিয়ে কুয়ালালামপুর চলে গেলেন। বার্তা পেয়ে সফরসূচি সংক্ষিপ্ত করে বুধবার দেশে ফিরেছেন। যাই হোক মোসাহেবি আছে, থাকবে। কৌশল হয়তো বদলাবে।