প্রথম পাতা

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতেন তিনি

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরো এক চিকিৎসকের

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

২৭ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া বেশিরভাগ রোগীই ডেঙ্গু নিয়ে এসেছেন। এই ওয়ার্ডের ডাক্তার তানিয়া। নিজের ঘরেও রয়েছে সাড়ে তিন বছরের এক পুত্রসন্তান। নিজ সন্তানের মতোই শিশুদের চিকিৎসা করান। আদর সোহাগে ভরিয়ে দেন। সুস্থ হলে নিজেও তৃপ্তি পান। গত সপ্তাহ জুড়ে এভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সামলিয়েছেন তানিয়া। কিন্তু নিজেই কখন যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তা তিনি ঘুর্ণাক্ষরেও টের পাননি। পুরো নাম ডাক্তার তানিয়া সুলতানা। রোগীকে আপন করে নেয়ার এক যাদু ছিল তার মাঝে। তাইতো রোগীরা তাকে পছন্দ করতেন। ভালবাসতেন। তার এই ভালবাসার টানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর কাছে আপনজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু কে জানতো যে ডাক্তার রোগীর আপনজন হয়ে দাঁড়াতেন সেই তাকেই রোগী হয় চলে যেতে হবে পরপারে। ডেঙ্গু রোগ দেখা দিতে না দিতেই বড্ড অকালে চলে গেলেন ডাক্তার তানিয়া। আর তার এ চলে যাওয়া দুই পরিবারে যেমন নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তেমনি বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনও ভাসছেন শোকের সাগরে। একই সঙ্গে তানিয়াকে নিয়ে যারা স্বপ্ন দেখতেন তাদের স্বপ্নও চুরমার হয়ে গেছে। যাত্রবাড়ির বাসিন্দা ডাক্তার তানিয়া সুলতানা। বয়স মাত্র ২৮ বছর।  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  যে ডাক্তার রোগীর জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালান সেই ডাক্তারকেই ডেঙ্গুর কাছে হার মানতে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ধানমন্ডি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।  ডা. তানিয়া সুলতানা সিলেট এম এ জি ওসমানী  মেডিকেল কলেজের ৪৭তম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। এমবিবিএস শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। বছরখানেক বিরতি দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এফসিপিএস কোর্স কমপ্লিট করতে। স্বপ্ন ছিলো এফসিপিএস শেষ করবেন। বাংলাদেশি ডাক্তারের জন্য সবচেয়ে সম্মানের এই কোর্সটির প্রথম পার্ট শেষ করেছিলেন  তিনি। ছিলেন পার্ট দুইয়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরন হলো না তার । ডেঙ্গু কেড়ে নিলো তার সেই স্বপ্ন। ডাক্তার তানিয়া সুলতানার সাড়ে তিন বছরের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। পুত্রও গতকাল মায়ের জন্য কান্না করছে। মৃত্যু কি না বুঝলেও মাকে দেখছেনা, এটা তাকে কাঁদাচ্ছে। ডাক্তার তানিয়ার স্বামী ব্যবসায়ী আমিনুল বাহার হিমন বলেন , জ্বরের কারণে তানিয়ার এভাবে মৃত্যু হবে আমরা  কখনও কল্পনা করিনি। এত অল্প বয়সে আমার বাচ্চা মা হারাতে হলো। তিনি বলেন, ছেলেটি তার মাকে পাগলের মতো খুঁজছে। তাকে বলেছি, তোমার মা বেড়াতে গেছে, আসবে। একটু পরেই আসবে। কিন্তু এভাবে কতদিন  বাবুকে শান্তনা দিবো। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এই  কেমন পরিক্ষা নিলো? তানিয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো সে এফসিপিএস করবে। সংসার, বাচ্চা সামলে প্রতিদিন হাসপাতালে যেতো সেই যাত্রাবাড়ি থেকে। তার খুব কষ্ট হতো। তারপরও তার স্বপ্নে অটল ছিলো সে।

ডাক্তার তানিয়া সুলতানা গত ২২শে জুলাই থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার  ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। ২৪শে জুলাই তাকে রাজধানীর মগবাজার কমিউনিটি  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার তাকে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পর দিন রাত দশটায় তার মৃত্যু হয়।

ডাক্তার তানিয়ার স্বামী আমিনুল বাহার হিমন বলেন, বৃহস্পতিবার তাকে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে  মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাক্তার আব্দুল কাহার আকন্দের অধীনে ভর্তি করানো হয়।  সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় তার মৃত্যু হয়।

তানিয়ার কলেজের সিনিয়র শ্যামলী টিবি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সামিউর রশিদ বলেন, তানিয়া যেখানে চিকিৎসা দিতেন সেই শিশু ওয়ার্ডটিতে প্রচুর পরিমান ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ছিলো। যেহেতু  সেখানে  ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি ছিলো সেহেতু ওখান থেকেই তিনি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া দশ বারোদিন আগে তার শাশুড়ি মারা গেছে। এই নিয়ে তাকে বেশ কয়েক দিন নানান ঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

এ নিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনজন চিকিৎসকের মৃত্যু হলো। এর আগে রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিগার নাহিদ দিপু নামে একজন চিকিৎসক, দুইদিন আগে হবিগঞ্জ  জেলা সিভিল সার্জন শাহাদাত  হোসেন হাজরা মারা যান।

এই প্রসঙ্গে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ইমন ভুইয়া বলেন , ডেঙ্গু চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তাররা অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। যেহেতু হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী অনেক সেহেতু চিকিৎসকের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যায়।  

এদিকে, এই প্রতিবেদক মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখেন, এই হাসপাতালে তিনজন চিকিসৎক ও দুইজন নার্স ডেঙ্গু রোর্গে আক্রান্ত। এর মধ্যে তিন ডাক্তার হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি রয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status