শেষের পাতা

উত্তপ্ত ঢাবি

আক্তারকে মারধর নূর লাঞ্ছিত

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

২৪ জুলাই ২০১৯, বুধবার, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

সাত কলেজ নিয়ে এবার মুখোমুখি অবস্থানে ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেও ছাত্রলীগ চায় আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান। এ লক্ষ্যে সংগঠনের নেতাকর্মীদের আজ থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কেউ ক্লাস-পরীক্ষায় বাধা দিতে আসলে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেও নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে এক সমাবেশ শেষে প্রশাসনিক ভবনে এ নিয়ে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দিতে গেলে ছাত্রলীগ আর আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগানো তালা ভেঙে ফেলে। হামলা চালায় ডাকসুর সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক আকতার হোসেনের ওপর। এসময় ছাত্রীদেরও  হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন ভিপি নুরুল হক নুর। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বানের পরও গতকাল গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর সকাল ৮টা থেকে ওসব ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে পাহারা দেয়া হয় যাতে কেউ তালা ভাঙতে না পারে। শিক্ষার্থীদের তালায় টানা তিনদিন খুলেনি একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের কোনো গেট। ফলে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।

গতকালও কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। সকাল ১০টা থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। সহস্র শিক্ষার্থীর স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাসে। চার দফা থেকে সরে এসে সাত কলেজ বাতিলের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে তারা। দুপুরে ভিসি চত্বর অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা। এসময় তারা দাবি আদায়ে প্রশাসনের লিখিত আশ্বাস চান বলে জানান। দুপুর ১২টার দিকে সমাবেশ শেষ করে কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। একই সময়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। সাত কলেজ নিয়ে স্থায়ী সমাধান ও ক্লাস-পরীক্ষা নির্বিঘ্নে করার দাবিতে ভিসিকে স্মারকলিপি দেয়ার আগে এ সমাবেশ করা হয়। ছাত্রলীগের সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও অধিভুক্ত ইডেন কলেজ ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের অনেককে দেখা যায়। এতে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে যে আন্দোলন চলছে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। সংগঠনটির নেতারা বলেন, আমরা চাই সাত কলেজ নিয়ে সৃষ্টি জটিলতার স্থায়ী সমাধান। কিন্তু সেটি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে নয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে একটি দল ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে চায়। অধিকার আদায়ের নামে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মৌলিক যে অধিকার, ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সেই অধিকারকে বানচাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকে আমরা ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার জিম্মি করে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না। কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনাদের দাদাগিরি আমরা বন্ধ করে দিতে পারি।

ছাত্রলীগের সেই ক্ষমতা রয়েছে। এসময় তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত কলেজ অধিভুক্ত একটি আনহ্যাপি ম্যারেজ, এর পিসফুল ডিভোর্স চাই। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদক গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আগামী আগস্টের ১ম সপ্তাহে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে। ছাত্রলীগ ডাকসুর সঙ্গে বসে এর একটা সমাধান করবে। আপনারা আস্থা রাখুন। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা চলমান রাখতে চাই। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, সাত কলেজ কোনো বিষয় নয়। আমাদের দাবি শিক্ষার মানোন্নয়ন। আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে না। যেহেতু এগুলো আলোচনার মাধ্যমে সামাধান করতে হবে। তাই কালকে থেকে আমরা ক্লাস করব। সমাবেশ শেষে শোভন, রাব্বানী, সাদ্দামের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে গেলে সেখানে আগ থেকে অবস্থান করা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডাকসুর সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক আকতারের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী মল চত্বরের দিকে চলে আসলে সেখানে ছাত্রলীগের একটি অংশ আকতারের ওপর হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্বে দেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক সহসম্পাদক রাব্বী হক। এসময় ছাত্রলীগ নেতারা কয়েকজন ছাত্রীকেও হেনস্তা করে বলে আকতার অভিযোগ করেন।

একই সময়ে ছাত্রলীগের অন্য নেতারা প্রশাসনিক ভবনের তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। ভিতরে প্রবেশ করে স্মারকলিপি দিতে গেলে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী তাদের পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন। এসময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক প্রক্টরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এক পর্যায়ে প্রক্টর ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা তীব্র পর্যায়ে পৌঁছায়। এরপর ছাত্রলীগ প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মু. সামাদের কাছে স্মারকলিপি দেয়। এরপর ছাত্রলীগ নেতারা প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। একই সময়ে আকতারের ওপর হামলার প্রতিবাদে মিছিল শেষে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ মিলিত হন ভিপি নুরের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতারা সেখানে গিয়ে হামলার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ফের তর্কে জড়ান। এসময় ছাত্রলীগের রাব্বানীর অনুসারীরা ভিপি নুরুল হক নুরকে লাঞ্ছিত করেন। ছাত্রলীগের নেতারা নুর ও আকতারের ডাকসু থেকে বহিষ্কার দাবি করেন। রাব্বানীর অনুসারীরা বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করায় রাব্বানীকে রেখে নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন। এরপর রাব্বানীও অপরাজেয় বাংলা ত্যাগ করেন। এরপর ভিপি নুরুল হক নুর সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমরা ডাকসু থেকে সমর্থন দিয়ে গতকাল ক্লাসে ফিরে যেতে আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু সমাধানের পথে না হেঁটে শিক্ষার্থীদের ওপর আজ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে কর্মসূচি দেবে আমরা তাতে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। এরপর আন্দোলনকারীদের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাকিল মিয়া। তিনি বলেন, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এসময় ডাকসুর সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। বোনদের লাঞ্ছিত করেছে। আমি এর বিচার চাই। আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আছি, থাকবো। এরজন্য ডাকসুর গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন হলে তারা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কিন্তু আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সব সময় থাকবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status