এক্সক্লুসিভ

বর্বর প্রেমিক পিয়াসের হাতেই ধর্ষণের শিকার হয় রিমা

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

২৩ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:৪৯ পূর্বাহ্ন

পাকুন্দিয়ায় নানার বাড়িতে নবম শ্রেণির ছাত্রী স্মৃতি আক্তার রিমা (১৪) গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত পিয়াস মিয়া (১৮) কে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২, কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানী অধিনায়ক লে. কমান্ডার, বিএন এম শোভন খানের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম শনিবার রাতে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ পশ্চিম মাদার বাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া পিয়াস মিয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী গ্রামের সৌদি প্রবাসী রুবেল মিয়ার ছেলে। সে পাকুন্দিয়া পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির কারিগরি শাখার ছাত্র। রিমাকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে হত্যা মামলার সে ২নং আসামি। পিয়াসকে গ্রেপ্তারের পর রোববার দুপুরে র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২, কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে কোম্পানী অধিনায়ক লে. কমান্ডার, বিএন এম শোভন খান জানান, পিয়াস মিয়া এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। প্রেমের অভিনয়ে সে কিশোরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে গত ১৭ই জুলাই রাতে সুকৌশলে স্কুল ছাত্রীকে নানার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রথমে সে নিজে ধর্ষণ করে এবং পরে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে গণধর্ষণ করে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াস মিয়া ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। লে. কমান্ডার, বিএন এম শোভন খান জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের গাংধোয়ারচর গ্রামে নানার বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের একটি বরই গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় রিমার লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই র‌্যাবের একটি চৌকস আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এছাড়া তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত আসামিদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চালায়। এরই ধারবাহিকতায় এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ও ধর্ষণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত মামলার এজাহারনামীয় ২নং আসামি পিয়াস মিয়াকে তারা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্যও র‌্যাবের অভিযান চলমান রয়েছে।
লে. কমান্ডার বিএন এম শোভন খান জানান, পিয়াসের বাবা রুবেল মিয়া সৌদি আরব থাকার সুযোগে পিয়াস উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এলাকায় বখাটেপনা ছাড়াও সে ইয়াবায় আসক্ত ছিল। সে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিল।
র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াস জানিয়েছে, দুই মাস আগে রিমার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর সুবাদে রিমা নানাবাড়িতে আসলে পিয়াস তার সঙ্গে দেখা করতো। ঘটনার রাতেও পিয়াসের ডাকে রিমা ঘর থেকে বের হয়। পরে বাড়ির পুকুরপাড়ে নিয়ে গিয়ে রিমাকে সে প্রথমে ধর্ষণ করে। এ সময় জাহিদ ও তার অন্য বন্ধুরা পাহারায় ছিলো। পিয়াসের পর পালাক্রমে অন্যরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।
পিয়াস সম্পর্কে তার স্কুল পাকুন্দিয়া পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফছর উদ্দিন আহম্মদ মানিক জানান, সে স্কুলে আসতো না। তার মাথার চুলের স্টাইল ছিল অন্যরকম। বছর দু’য়েক আগে বিদ্যালয়ে ছাত্রদের চুল রাখার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপের পরও সে তার চুলের স্টাইলের পরিবর্তন করেনি। ফলে সেলুনে নিয়ে গিয়ে তার চুল কাটানো হয়।
প্রধান শিক্ষক আফছর উদ্দিন আহম্মদ মানিক বলেন, বর্বর ও নৃশংস এই ঘটনায় পিয়াস জড়িত থাকায় ও গ্রেপ্তার হওয়ায় আমরা তাকে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করবো। এজন্যে সোমবার মিটিং করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি প্রবাসী রুবেল মিয়ার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পিয়াস ছোট। বাবার অবর্তমানে একমাত্র ছেলে পিয়াস এই বয়সেই উচ্ছৃঙ্খলতায় ডুব দেয়। পিয়াস এবং তার বন্ধুদের বখাটেপনায় এলাকাবাসী ছিলেন দিশেহারা। পিয়াস তার বন্ধুদের নিয়ে বাড়িতেই ইয়াবার আড্ডা বসাতো। এলাকার মেয়েদের উত্যক্ত করতো। রিমা হত্যাকাণ্ডের পর তার বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম এবং কনডম পাওয়া যায়।
নিহত স্মৃতি আক্তার রিমা পার্শ্ববর্তী হোসেনপুর উপজেলার জামাইল গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের কন্যা ও হোসেনপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের গাংধোয়ারচর গ্রামে নানার বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের একটি বরই গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই বিকালে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে স্মৃতি আক্তার রিমার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তে ধর্ষণের সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহত স্কুল ছাত্রীর মা আঙ্গুরা খাতুন বাদী হয়ে পাকুন্দিয়া থানায় মামলাটি (নং-৮) করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩)/৭ ধারায় দায়ের করা এই মামলায় জাহিদ মিয়া (২০), পিয়াস মিয়া, রুমান মিয়া (১৮) ও রাজু মিয়া (১৮) এই চার জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার চার আসামির মধ্যে জাহিদ মিয়া পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী গ্রামের খুরশিদ মিয়ার ছেলে, পিয়াস মিয়া একই গ্রামের সৌদি প্রবাসী রুবেল মিয়ার ছেলে, রুমান মিয়া গ্রামেরই ফারুক মিয়ার ছেলে ও রাজু মিয়া একই গ্রামের কফুল উদ্দিনের ছেলে। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বিয়েতে ব্যর্থ হয়ে রিমাকে অপহরণের পর জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, র‌্যাব গ্রেপ্তারের পর পিয়াসকে রোববার বিকালে পাকুন্দিয়া থানায় হস্তান্তর করেছে। এছাড়া মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status