শেষের পাতা

মশায় অতিষ্ঠ মানুষ ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আতঙ্ক

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

২২ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথা নিয়ে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিসিএস পরীক্ষার্থী অন্তর খান। এই জ্বর নিয়ে তার পুরো পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে এমনটাই বলেছেন চিকিৎসকরা। অন্তর খান রাজধানীর ফার্মগেট আমতলা খ্রিস্টান পাড়ায় থাকেন। তবে শুরুতেই হাসপাতালে ভর্তি করায় তিনি এখন বিপদমুক্ত। তার পরিবারের মতো নগরবাসী ডেঙ্গু জ্বর আতঙ্কে ভুগছেন। অন্তর খান এবং তার পরিবার ক্ষোভের সঙ্গে হাসপাতালে এই প্রতিবেদককে বলেন, গণমাধ্যমে এতো লেখালেখির পরও ঢাকা সিটির মেয়ররা মশা নিধনে ভালো পদক্ষেপ নেননি। মশা নিধনে সেরকম ওষুধ দিতেও দেখা যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ডেঙ্গু মৌসুমের আগেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নাগরিকদের কথা ভাবেনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে হয়ত ডেঙ্গু রোগীর আক্রান্তের হার আরও কম হত। একই হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ড-২ এ চিকিৎসা নিচ্ছে শিশু সুমাইয়া আক্রার। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মারাত্মক অবস্থায় ভর্তি হয় সুমাইয়া। তার পেটে ও ফুসফুসে পানি জমেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র জহিরুল ইসলাম বলেন, এবার মশা নিধনে মেয়ররা পুরোপুরি ব্যর্থ। ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতে যদি ভালো প্রস্তুতি নিতো তাহলে এতো আক্রান্ত ও মারা যেতো না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখন ফোগিং মিশনে ওষুধ দিতে তেমন দেখা যায় না। ইডেন কলেজে পড়ুয়া মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লিজা আক্তার বলেন, এ বছর তার এলাকা গনকটুলিতে কোনো মশার ওষুধ দিতে দেখা যায় নি। লালবাগ সুবল দাস রোডের বাসিন্দা আলম অভিযোগ করে বলেন, মশার নিধনের ভালো ওষুধ দিচ্ছে না। দিলেও পানি মিশিয়ে দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এবছর তার এলাকায় মশা নিধনের কর্মীদের চোখে পড়েনি। মিরপুরের বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী মাহমুদ বলেন, মশা নিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। কামরাঙ্গীর চরের রিকশা শ্রমিক কাদের মিয়া বলেন, ডেঙ্গু জ্বর ভালো জ্বর না। তার মেয়েরও হয়েছিল। ভালো হয়ে গেছে। মশার কামড় থেকে হয়। সব সময় ওষুধ দিলে মশা আসে না। কিন্তু ওষুধ দেয় না।

এদিকে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চোখ রাখলেই ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেটের জন্য রক্ত চেয়ে সহযোগিতার স্ট্যাটাসের সংখ্যা দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ফলে রাজধানীর স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে এ বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে ডেঙ্গুতে অন্তত চারগুণের বেশি মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে। এবছর ইতিমধ্যেই সাড়ে ৬ হাজারের উপরে আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান মতে, চলতি মাসে গড়ে প্রতিদিন ২১১ করে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ঢাকার আশপাশেও ছড়িয়ে পড়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। ঢাকার বাইর থেকেও খবর আসছে। ২০০০ সালে দেশে প্রথম বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন আক্রান্ত হয়েছিল আর মারা গিয়েছিল ৯৩ জন। এরপর ডেঙ্গ জ্বরে মৃতের সংখ্যা কমতে থাকে। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। মারা গিয়েছিল ২৬ জন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status