বাংলারজমিন

চুনারুঘাটে কৃষক হত্যা

মোবাইলের ছবিতে উদ্‌ঘাটন হলো খুনের রহস্য

নুরুল আমিন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) থেকে

২২ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন

মোবাইলের একটি ছবিই শেষ পর্যন্ত দুলা মিয়া অপহরণ ও হত্যা মামলার জট খুলে দিলো। ছবিটি ঘটনার দিন ১৬-১৭ বছরের একটি শিশু মোবাইলে ধারণ করেছিল। এই ছবি এবং ভৈরব টোলপ্লাজার সিসি ক্যামেরার সূত্র টেনে পুলিশ দুলা মিয়ার মরদেহ শনাক্ত করে এবং হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী র‌্যাব সদস্য সাদেক মিয়াসহ ভাড়াটিয়া ঘাতকদের আটক করতে সক্ষম হয়। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ১৭ই জুন চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পাট্টাশরীফ গ্রামের দুলা মিয়া (৪০) নামের এক হতদরিদ্র ব্যক্তিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে শানখলা ইউনিয়নের তালতলা গ্রাম থেকে অপহরণ করা হয়। এ ব্যাপারে দুলা মিয়ার ভাই ইদু মিয়া বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে মামলা করেন।  অপহরণের পেছনে অপহৃত দুলা মিয়ার পরিবার তাদের আত্মীয় র‌্যাব সদস্য সাদেক মিয়ার হাত থাকতে পারে এমন সন্দেহ করা হচ্ছিল প্রথম থেকেই। এ সূত্র ধরে পুলিশ ১৭ই জুন সাদেক মিয়ার মোবাইল কললিস্ট সিডিআর পর্যালোচনা করে। র?্যাব সদস্য সাদেক তার ভাগ্নে আফরাজের সঙ্গে ঘটনার আগে ও পরে ১১ বার কথা বলেছে। এ বিষয়টা বেশ সন্দেহজনক ছিল পুলিশের কাছে কিন্তু ঘটনার দিন সাদেক তার ইউনিট র‌্যাব-২ কর্মরত থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে শ্রীমঙ্গল থেকে সাদেকের ভাগ্নে আফরাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করেন তদন্ত অফিসার নাজমুল ইসলাম। এরই মাঝে ছোট শিশু কর্তৃক উঠানো একটি ছবি আসে পুলিশের কাছে। ছবিতে দেখা যায়, একটা সাদা নোয়াহ গাড়ি যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ ১১-৮৭২২ এবং এ গাড়িতেই তুলে নেয়া হয় দুলা মিয়া কে। শিশুটির ছবি আমলে নিয়ে মাঠে নামে পুলিশ। তদন্ত অফিসার ঢাকার বিআরটিএ থেকে সেই গাড়ির মালিকের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেন কিন্তু ঠিকানামতো গিয়ে মালিককে পাওয়া যায়নি। প্রায় ৮ বছর আগে বাসা বদল করে অনত্র চলে গেছেন গাড়ির মালিক আসলাম রেজা। তিনি প্যারালাইসিস রোগী। বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। পুলিশ আসলাম রেজার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে বেশ দিন আগে গাড়িটা এক্সিডেন্ট করার পর একটা গ্যারেজে দেন মেরামতের জন্য। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মেরামতের বিল আসার কারণে গ্যারেজ মালিকের কাছেই গাড়িটা রেখে দেন আসলাম রেজা। গত ২৪শে জুন হঠাৎ গ্যারেজ মালিক গাড়িটি ফেরত দিয়ে যায় আসলাম সাহেবকে। পুলিশের কাছে থাকা কিছু ছবি আর ভিডিও দেখার পর গাড়িতে থাকা দু’জন ব্যক্তির মাঝে একজনকে চিনেন আসলাম। এ সূত্র ধরে মোহাম্মদপুর থানায় এসে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে লাইটেজ চালক আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা থেকে। আক্তারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থেকে আটক করা হয় ইউসুফ সরদার নামের আর এক ঘাতককে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ইউসুফ জানায়, তারা ৭ জন মিলে অপহরণ করে দুলা মিয়াকে। র?্যাব সদস্য সাদেক তাদের ভাড়া করেছিলেন ৩ লাখ টাকায়। এ ফাঁকে পুলিশ ঘাতক র‌্যাব সদস্য সাদেকের সোর্স মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায় জামাল, বাদল, জসিম, হাবিব, শামীম ও সাদেকের ভাগ্নে আফরোজের সহায়তায় দুলা মিয়াকে অপহরণ করে মোহাম্মদপুরে নিয়ে আসা হয়। ড্রাইভার ইউসুফের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকার রায়ের বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার টামনিকোনাপাড়া গ্রামের মামুন মিয়াকে। র‌্যাব ২ এর কার্যালয় থেকে আটক করা হয় র‌্যাব সদস্য সাদেককে। পুলিশ জানায়, মামুন ও জামালের সহযোগিতা নিয়ে দুলা মিয়াকে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীতে জীবন্ত নিক্ষেপ করে র‌্যাব সদস্য সাদেক মিয়া। খবর পেয়ে ২৪শে জুন বস্তাবন্দি মরদেহটি হাজারীবাগ থানা পুলিশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করে। ১৭ই জুলাই আদালতের নির্দেশে দুলা মিয়ার মৃতদেহ জুরাইন কবরস্থান থেকে উত্তোলন করে পুলিশ।
তদন্ত অফিসার নাজমুল বলেন, মাত্র ৫ শতক জমি নিয়ে ভাতিজা দুলা মিয়ার সঙ্গে র‌্যাব সদস্য সাদেকের বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে দুলা মিয়াকে অপহরণ ও পরে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের সকল আসামি হবিগঞ্জ কারাগারে রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status